

বাংলাদেশ : উন্নয়নশীল দেশের চ্যালেঞ্জ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:০৩ এএম, ৬ জুন,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:২৭ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২৩

বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ফলে যে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, সেগুলো মোকাবিলায় সতর্ক রয়েছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার সংসদে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এটি প্রতিফলিত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এই উদ্দেশ্যে আমরা ইতিমধ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করেছি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বিস্তারিত অ্যাকশন প্ল্যান প্রস্তুত করেছে।’
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার বিষয়টি সরকার কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন, তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্যোগের বিষয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বোঝা গেছে। অর্থনীতিবিদরা অবশ্য কাজের পরিকল্পনা সময়মতো বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন। কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন, উন্নীত হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে সরকার ইতিমধ্যে জিএসপি প্লাসের সুবিধা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ভুটানের সঙ্গে একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি সই করেছে এবং ১১টি দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি সম্পাদনে কাজ করছে, তিনি যোগ করেন। অর্থমন্ত্রী উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে একাধিক উদ্যোগের কথা বললেও তিনি দুর্নীতি দূর করার বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত দেননি।
তিনি বলেন, দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নয়নে কাজ করছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতি কমিটি (সিডিপি) ২০২৬ সালে বাংলাদেশকে স্বল্প-উন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) তালিকা থেকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছে। কোভিড-১৯ আসার আগে, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে এই দল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত ছিল। সিডিপি’র ২০২১ পর্যালোচনায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য তিনটি মানদন্ডে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছে। তা হলো মাথাপিছু আয় এক হাজার ৮২৭ ডলার (প্রয়োজন এক হাজার ২২২ ডলার), অর্থনৈতিক দুরবস্থা সূচক ২৭ (প্রয়োজনীয় ৩২ বা নিচে) এবং মানবসম্পদ সূচক ৭৫ দশমিক চার (প্রয়োজন ৬৬ বা তার বেশি)। গত বছর পরিচালিত একটি সরকারি সমীক্ষা অনুসারে, বাংলাদেশের রফতানি আয় এবং স্বল্পসুদে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের প্রবাহ এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উন্নীত হওয়ার পর কমে যাবে। ‘এলডিসির তালিকা থেকে উন্নীত হওয়ার পর বাংলাদেশের জন্য মূল্যায়নের প্রভাব এবং কৌশল গ্রহণ’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, রফতানি ও অনুদানের অনুমানিত ক্ষতি এবং উচ্চ ঋণের সেবা ব্যয়ের ফলে চলতি হিসেবে উচ্চ ঘাটতি দেখা দিবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগ এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। শুল্ক-মুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার হারানো সবচেয়ে বড় ধাক্কা হয়ে উঠবে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং নন-ইইউয়ের বাজারগুলোতে পোশাক পণ্য থেকে প্রাপ্ত রফতানির ক্ষতি অনুমান করা হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মোট রফতানির প্রায় পাঁচ শতাংশ। এই ক্ষতি ২০২৭ অর্থবছরে দাঁড়াবে সাত বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং ২০৩১ অর্থবছরে তা ১৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। রেয়াতি ঋণের ক্ষতি ঋণ পরিসেবার ব্যয়কে বাড়িয়ে তুলবে উল্লেখ করে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই পূর্বাভাসিত ক্ষতি মোকাবিলায় নীতিগত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে, এলডিসি থেকে বের হয়ে আসার পর সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের জন্য বাজারভিত্তিক ঋণ গ্রহণের দ্বার উন্মুক্ত হবে। তুলনামূলকভাবে উচ্চ পর্যায়ের উৎস থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরও নির্ভরশীল হয়ে উঠবে। বেসরকারি খাতে বাইরের ঋণ বাড়বে। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি খাত বিদেশ থেকে যে অনুদান পায়, তা হারাবে। এই তিন ধরনের ক্ষতির সম্মিলিত প্রভাব সরাসরি অর্থ প্রদানের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করবে এবং চলতি হিসাবের ঘাটতি ২০২৭ অর্থবছরে জিডিপির শূন্য দশমিক নয় থেকে এক দশমিক চার শতাংশে বেড়ে যাবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন জানান, রফতানি, সহজ ঋণ ও বাণিজ্য সুবিধা যেহেতু কমে যাবে, তাই ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি গাইডলাইন থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি ২০২৭ সালে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। সুতরাং চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নেয়া উচিত’, তিনি বলেন।
ফাহমিদা জানান, উন্নীত হওয়ার পর দেশীয় সম্পদের আহরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং এ বিষয়ে যথাযথ গাইডলাইন প্রস্তুত করা উচিত। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জানান, ২০২৬ সালের পর দেশ যেহেতু এলডিসি’র তালিকা থেকে বের হওয়ার গৌরব অর্জন করবে, তাই পলিসি গ্রহণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অভ্যন্তরীণ সম্পদের গতিশীলতা আনার জন্য পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়েছেন।