দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় বৃষ্টির অভাবে আমন চার্ষীরা বিপাকে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১৩ পিএম, ২৫ জুলাই,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:০৮ পিএম, ১২ অক্টোবর,শনিবার,২০২৪
দিনাজপুরে ১৩টি উপজেলায় বৃষ্টির অভাবে কৃষকেরা আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠে পানি নেই। অনেক জমি পানির অভাবে ফেটে যাচ্ছে। কৃষকেরা আমণ মৌসুমে আমনের চারা রোপণ করতে পারছেনা। শ্রাবণ মাস প্রায় শেষ হতে চললেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
গ্রাম বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ‘শ্রাবণের ১৬ ও ভাদ্র মাসের ১৩, এর মধ্যে যত পারো আমন চারা রোপণ করো’। শ্রাবণ মাসে অধিক বৃষ্টির কারণে আমন ধানের চারা রোপণের মোক্ষম সময় হলেও এবার বৃষ্টির পানির অভাবে কৃষকরা পড়েছে বিপাকে। ফলে বৃষ্টির অভাবে শ্রাবণ মাসে আবাদি জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। অথচ শ্রাবণের ২০ তারিখ পার হলেও বৃষ্টির দেখা মিলছে না। আকাশে মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ালেও বৃষ্টি হচ্ছে না।
আর মাঝে মাঝে যে বৃষ্টি হচ্ছে চাহিদার তুলনায় এতই নগণ্য যে, জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়ায় সাথে সাথেই ওই পানি শুষে নিচ্ছে মাটি। ফলে কৃষকদের মাঝে শুরু হয়েছে হাহাকার। অর্থশালী কৃষকরা শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তুলে আমন ধান রোপণ শুরু করলেও গরিব চাষিরা পড়েছে বেকায়দায়। দিনাজপুর সদর উপজেলার খোদমাধবপুর গ্রামের কৃষক আমিনুল হক বলেন, শ্রাবন মাস আসলে পানিতে জমি থইথই করে কিন্তু এবার পানির অভাবে জমি ফেটে গেলেও এখন পর্যন্ত পানির দেখা পাই নাই।
এভাবে যদি চলে তাহলে তো জমি পড়ে থাকবে, আবাদ করা যাবে না। বিছন যে গাড়বো সেই পানিও দিতে হচ্ছে শ্যালো মেশিন দিয়ে। বৃষ্টির অভাবে আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কা শুধু আমিনুলের নয়, দিনাজপুর সদর উপজেলাসহ বিরল, কাহারোল ও বীরগঞ্জসহ ১৩ উপজেলার কৃষকদের। আমিনুল হক জানান, তার ৪ বিঘা জমিতে আমন আবাদ হয়। এ জন্য প্রায় ২৫ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। চারাও বড় হয়েছে। পানির অভাবে রোপণ করতে পারছেন না।
এ বছরই শুধু নয়, গত কয়েক বছর ধরেই আবহাওয়া এমন বিড়ম্বনায় ফেলছে। শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে চারা রোপণ করলে খরচ অনেক বেড়ে যায়। বোরোর মতো আমনের ফলনও হয় না। আবার সে তুলনায় ধানের দামও পাওয়া যায় না।দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শ্রাবণ মাস প্রায় শেষের দিকে কিন্তু জমিতে পানি নেই। প্রচণ্ড রোদে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আর যারা আগাম চাষ দিয়ে রেখেছেন, ওই সব জমিতে কাদার পরিবর্তে ধুলো উড়ছে। ভরা বর্ষা মৌসুম চললেও বৃষ্টির অভাবে প্রচণ্ড রোদে পুড়ছে আবাদি জমি।
বিরল উপজেলার রবিপুর গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, আমন আবাদের জন্য জমিতে চাষ দিয়েছি। কিন্তু পানির অভাবে আমন রোপন করতে পারছি না। কোথাও এক ফোটা পানি নেই। এ অবস্থায় কীভাবে আমন রোপণ করব দুশ্চিন্তায় আছি।মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা খরার কথা স্বীকার করে জানান, আমন রোপণের সময় চলছে। এ সময় বৃষ্টি দরকার। বৃষ্টির অভাবে জমিতে পানি নেই। এবার আমনের আবাদ ১৫ দিন পিছিয়ে যেতে পারে।
বিরল উপজেলার ১ নং আজিমপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আফজাল হোসেন জানান, জমিতে পানি না থাকায় একদিকে যেমন আমন আবাদে বিলম্ব হচ্ছে অন্যদিকে উপকারও হচ্ছে। জমিতে পানি না থাকায় কৃষকদের আগাম চাষের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে জমির আগাছা দমন হবে এবং বৃষ্টি হলে চাষকৃত জমি উর্বর হবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, দিনাজপুরে চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য ইতোমধ্যেই ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। তীব্র খরার কারণে জমিতে পানি না থাকার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত আমন রোপণের সময়। এখনই আমন রোপণের উপযুক্ত সময় চলছে। তবে এ অঞ্চলের কৃষকরা আগস্ট মাসেই আমন চারা রোপণ করে থাকেন।
তিনি জানান, আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হলে কৃষকদের বিকল্প উপায়ে সেচ দিয়ে জমিতে আমন রোপণের পরামর্শ দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম জানান, কৃষকদের সেচযন্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আমরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। যদি অল্প সময়ের মধ্যে বৃষ্টির দেখা না মেলে তাহলে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় বরেন্দ্র অঞ্চলে সম্পূরক সেচ শুরু করা হবে। ডিপ টিউবয়েলগুলো চালু করা হবে। এজন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।