তিন মাসে ২১% খেলাপি বেড়েছে মাইডাস ফাইন্যান্সের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৪৯ এএম, ২ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৪১ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২৪
প্রতি বছর বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এর প্রভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মুনাফায়ও নামছে ধস। তবে ব্যাংকের চেয়ে আস্থাহীনতায় ভুগছে আর্থিক খাত। আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম নয়। অনিয়ম, নতুন কোম্পানির অপকৌশল আর অব্যবস্থাপনায় নাজুক থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এসব কারণে আর্থিক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির তালিকায় থাকা এমন একটি প্রতিষ্ঠান মাইডাস ফাইন্যান্স। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে আর্থিক খাতের এ প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২০৭ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলাপি ঋণের বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর অবস্থান নিতে হবে। তৎপরতা বাড়াতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, মার্চ শেষে মাইডাস ফাইন্যান্সের মোট খেলাপি ঋণ ৩০২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তিন মাস আগেও (ডিসেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির খেলাপি বেড়েছে ২০৭ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে খেলাপি বেড়েছে ২১ শতাংশ। ডিসেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির খেলাপির হার ছিল বিতরণকৃত মোট ঋণের ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, মার্চে এসে ৩১ দশমিক ২২ শতাংশে পৌঁছেছে। দুর্নীতি, দ্বন্দ্ব আর অভ্যন্তরীণ অনিয়মের কারণে দেশের বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডুবতে বসেছে। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বাকিদের অবস্থা নাজুক। দেশের কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উচ্চ খেলাপির কবলে ১৬টি প্রতিষ্ঠান। যাদের বিতরণ করা মোট ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ১০ শতাংশের বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চলতি বছর মার্চ শেষে ৬৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে মন্দমান (খেলাপির সর্বাচ্চ সীমা) ঋণে পরিণত হয়েছে ১০ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। সার্বিক বিবেচনায় যা মোট ঋণের ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে মার্চ শেষে শুধু ব্যাংক খাতের খেলাপির হার ছিল ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বেশকিছু প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়মের মাধ্যমে সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ বের করে নেয়া হয়েছে। নাজুক এসব প্রতিষ্ঠানকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ তদারকিতে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মন্দ ঋণ এ খাতের পরিস্থিতিকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। বৈশ্বিক মহামারির কারণে সরকারি এবং বেসরকারি মিলে ৩৪ এনবিএফআই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটি ছাড়া সবগুলোই সংকটে। এর মধ্যে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে (প্রশান্ত কুমার) হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) থেকে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য অবসায়ক নিয়োগ করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও বিআইএফসিতে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছেন আদালত। এসব প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ ফেরত না দিতে পেরে সংকটে রয়েছে। অন্যদিকে ফার্স্ট ফাইন্যান্স ও ফারইস্ট ফাইন্যান্সে মন্দ ঋণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যা এ খাতের সামগ্রিক আর্থিক স্বাস্থ্যের বড় অবনতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আহমদ আলী তার ‘উন্নয়নের মহাসড়কে এখন বাংলাদেশ’ শীর্ষক বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখে বোঝা মুশকিল। ব্যাংকে যেসব প্রোডাক্ট পাওয়া যায়, তার সবই রয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয়। দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্টের কোনো পার্থক্য নেই। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্পমেয়াদি অর্থায়ন থেকে যত বেশি দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের দিকে ধাবিত হবে, বিপদ ততই ঘনীভূত হবে। এ সমস্যা সমাধানে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে মাইডাস ফাইনান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাঝখানে ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা ছিল, কিন্তু ডিসেম্বরে এ সুবিধা উঠিয়ে নেয়ার কারণে খেলাপি বেড়েছে। গ্রাহকরা মনে করেছিলেন আবারও সুবিধা দেয়া হবে এ কারণে অনেকেই ঋণ পরিশোধ করেননি। সে কারণে খেলাপির পারিমাণটা বেশি দেখাচ্ছে; তবে আগামী প্রান্তিকে সেটা কমে আসবে আশা রাখি।