ইভ্যালির ওয়েবসাইট-অ্যাপ বন্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৩ এএম, ১৭ অক্টোবর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:০১ এএম, ২৮ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
আজ শনিবার বিকেলে প্রতিষ্ঠানটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানায় কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, সম্মানিত গ্রাহক, বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা সবাই অবগত। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার অংশীদার হয়ে দেশের অনলাইন কেনাকাটাকে সবার হাতের মুঠোয় নিয়ে যেতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি অবিরাম। আমরা এ কাজকে এগিয়ে নিতে চাই। চাই আপনাদের সকলের সহযোগিতায় আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে চালিয়ে যেতে। আর এ সুযোগ পেলে সকলের সব ধরনের অর্ডার ডেলিভারি দিতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলাম, আছি, থাকবো। বর্তমান পরিস্থিতিতে অজ্ঞাতনামা হিসেবে আমাদের সকল এমপ্লয়িরা শঙ্কার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন। আমাদের সম্মানিত সিইও এবং চেয়ারম্যান কারাগারে থাকায় আমাদের ব্যাংকিং-ও সাময়িকভাবে বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সার্ভারসহ, অফিসের খরচ চালানো এবং আমাদের এমপ্লয়িদের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়গুলোতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আমাদের উকিলের মাধ্যমে আমাদের সম্মানিত সিইও’র বক্তব্য হলো- সুযোগ এবং সময় পেলে আমাদের পক্ষে চার মাসের মধ্যেই সকল জটিলতা গুছিয়ে ওঠা সম্ভব। এ পরিস্থিতিতে আমাদের সার্ভার বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। পুনরায় দ্রুত সার্ভার চালু করে দেয়ার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গ্রাহক ও সেলারদের স্বার্থ সুরক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ সচেষ্ট। দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত হতে আমাদের এই যাত্রায় আমরা আপনাদের পাশে পেয়েছি সবসময়। আপনাদের এ ভালোবাসায় আমরা চিরকৃতজ্ঞ। সামনের দিনগুলোতেও আমরা এভাবে আপনাদের পাশে চাই। আপনাদের ভালোবাসার শক্তি আমাদের অদম্য পথচলার প্রেরণা। ইভ্যালির পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ইভ্যালির ওয়েবসাইট ও অ্যাপ বন্ধের খবরে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। গ্রাহকরা ফেসবুকে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। রাসেল কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আর তার স্ত্রী গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছেন। রাসেলকে দুই দফায় চার দিন আর তার স্ত্রীকে তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন ও চার্জশিট প্রস্তুত করছে পুলিশ।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল গ্রাহকের ক্ষোভ, ইভ্যালির দায়-দেনা ও বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলে দাবি করেছেন। পুলিশকে তিনি বার বার বলেছেন- ‘একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য এই দায়-দেনা অস্বাভাবিক কিছু নয়!’ সূত্রটি জানায়, রাসেল পুলিশের কাছে ইভ্যালির দায়-দেনার সর্বশেষ হিসাব দিয়েছেন। সেই হিসাব ও নিজস্ব অনুসন্ধানের আলোকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে পুলিশ। পুলিশের প্রতিবেদনে ইভ্যালির দায়-দেনার বিষয়ে রাসেলের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যগুলো তুলে ধরা হচ্ছে।
সেখানে রাসেল জানান, গত ১৯ ও ২৬ আগস্ট এবং ২ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানের সম্পদের দায় বিবরণী, গ্রাহকের দেনা, গ্রাহকের সংখ্যা ও মার্চেন্টদের দায়-দেনার বিষয়ে অডিট করেন তিনি। সেই অডিটের রিপোর্ট অনুযায়ী তার দায়ের পরিমাণ ৫৪২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে মার্চেন্টরা পাবেন ২০৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মার্চেন্টদের দেনার বিষয়ে রাসেল পুলিশকে জানান, যে কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রেডিট একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, সব ধরনের ব্যবসাতেই এটি আছে। এছাড়া মার্চেন্টরা ইভ্যালির মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে মুনাফা পাচ্ছেন। তাই মার্চেন্টদের (২০৫ কোটি ৮৬ লাখ) যে দেনা রয়েছে এটি স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য একটি পরিমাণ।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাসেল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, সর্বশেষ ১৬ আগস্ট পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছে ইভ্যালির ৩১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা দেনা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো পণ্যের অর্ডারে সর্বোচ্চ ১০ ভাগ অগ্রিম টাকা পরিশোধের অনুমতি দিচ্ছে। যখন অর্ডার নেয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং ইভ্যালিতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আসবে তখন তিনি এই টাকা ফিরিয়ে দেবেন। যদিও বিনিয়োগ প্রাপ্তির অগ্রগতি ‘শূন্য’ বলে স্বীকার করেন তিনি।
এদিকে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির জন্য কমিটি করে দেওয়ার কথা বলেছেন হাইকোর্ট। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, একজন সচিব, চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট ও একজন আইনজীবীকে কমিটিতে রাখার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন আদালত। হাইকোর্ট যে কমিটি গঠনের কথা বলেছেন তার জন্য দুই সচিবসহ তিনজনের নাম পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তারা হলেন, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব রেজাউল আহসান, ভূমি সংস্কার বোর্ডের সাবেক সচিব ইয়াকুব আলী পাটোয়ারী এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী। এর মধ্যে একজনকে রাখা হবে কমিটিতে। কমিটি গঠনের জন্য প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের ব্যাকগ্রাউন্ড পর্যালোচনা করে আদালত আগামী সপ্তাহে আদেশ দেবেন বলে বুধবার (১৩ অক্টোবর) জানিয়েছেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন।