ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক : জ্বালানি সচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৮ এএম, ১২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪৯ এএম, ১২ অক্টোবর,শনিবার,২০২৪
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক, আমলাদের নয় বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আনিছুর রহমান। জ্বালানি খাত নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন এফইআরবি (ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ) আয়োজিত এক অনলাইন সেমিনারে জ্বালানিসচিব এসব কথা বলেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ‘জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি: ভবিষ্যৎ প্রভাব’ শিরোনামে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে আনিছুর রহমান বলেন, আমলারা এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ছয় মাস অপেক্ষা করেই দাম সমন্বয় করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসির) উদ্বৃত্ত আয় সরকার না নিলে আরও ছয় মাস অপেক্ষা করা যেত। উদ্বৃত্ত আয়ের ১০ হাজার কোটি টাকা গত দুই বছরে নিয়ে গেছে সরকার।
আনিছুর রহমান আরও বলেন, অর্থনীতিতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু বিপিসির হাতে অর্থ ছিল না। আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সরবরাহ ঠিক রাখতে হলে চাইলেই দাম কমানো যায় না। বিশ্ববাজারে দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশে সমন্বয় করা হবে। তবে তেলের দাম কমানোর পর পরিবহনভাড়া কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তা জ্বালানি বিভাগ দিতে পারবে না। পেট্রল ও অকটেনের আপাতত দাম বাড়ানোর কোনো চিন্তা নেই বলেও জানান তিনি।
সেমিনারে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকারের। বিপিসি এটি বাস্তবায়ন করেছে। গত কয়েক বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে বলেই ৩৩ হাজার কোটি টাকার জ্বালানিসাশ্রয়ী বিভিন্ন প্রকল্প নিতে পারছে বিপিসি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বলেন, গত অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জ্বালানি খরচ ২৫ হাজার কোটি টাকা। ১১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। অর্ধেক দামে জ্বালানি পেলে ভর্তুকি দিতে হতো না। সারা বিশ্ব দুর্যোগপূর্ণ সময় পার করছে। বাড়তি বোঝা সবাই মিলে নিলে মোকাবিলা করা সহজ হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন বলেন, অকটেন ও পেট্রলে বাড়তি দাম নিলেও ডিজেলে সব সময়ই ভর্তুকি দেওয়ার মানসিকতা ছিল। এখন কি তা থেকে বেরিয়ে আসছে সরকার?
ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি আইনসিদ্ধ হয়নি। আইনে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর এখতিয়ার এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসিকে দেওয়া হয়েছে। বিইআরসির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিতে হবে। এ ছাড়া বিপিসির কার্যক্রম নিরীক্ষা করা উচিত, তাদের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নেই।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে। পুরো অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকার মতো লোকসান হতে পারত। একই সময়ে বিপিসির কাছ থেকে কর ও শুল্ক বাবদ ৭ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা আয়ের প্রক্ষেপণ আছে সরকারের। তাই শুল্ক কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি এড়ানো যেত।
বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি এ কে এম হাতেম বলেন, বিশ্ববাজারে অসম প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের। মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
আর তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, পাঁচ বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে আরও ১ শতাংশ খরচ বেড়ে যাবে। এটি প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ওপর আঘাত হানবে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পরিবহনভাড়া বাড়ানোর কারণে দিনে ২০০ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে যাত্রীদের। বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি এড়াতে জনগণের কাছ থেকে ৭৩ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এফইআরবির চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকারের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক শামীম জাহাঙ্গীর। স্বাগত বক্তব্য জানিয়ে অরুণ কর্মকার বলেন, বিশ্বে দাম কমলেও দেশে দাম কমানো হয় না। এ মুহূর্তে দাম না বাড়িয়ে আরও অন্তত তিন মাস পর বাড়ালে অরাজকতা এড়ানো যেত। সরকার সুযোগ নষ্ট করেছে, কষ্ট পেয়েছে মানুষ।