কর দিলে পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনতে প্রশ্ন নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৯ এএম, ১০ জুন,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:০৪ এএম, ৮ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২৪
বিদেশে অবস্থিত কোনো সম্পদের ওপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের কেউ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলবে না। এ ছাড়া বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি দেশে না আনলে এর ওপর ১৫ শতাংশ, অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ এবং নগদ অর্থের ওপর ৭ শতাংশ কর বসানোর সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। দেশকে করোনা মহামারিপূর্ব উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে আনতে নতুন বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর মধ্যে থাকছে বিনিয়োগ বাড়াতে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ দেশে আনার অভিনব সুযোগ এবং করপোরেট করে ছাড়। জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সে অনুযায়ী, বিদেশে অবস্থিত কোনো সম্পদের ওপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের কেউ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলবে না। এ ছাড়া বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি দেশে না আনলে এর ওপর ১৫ শতাংশ, অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ এবং নগদ অর্থের ওপর ৭ শতাংশ কর বসানোর সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। দেশের ইতিহাসে প্রথমবার এমন সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুবিধা পাওয়া যাবে। সব রপ্তানিকারকের জন্য উৎসে করহার ০.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাবও করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রেখে ৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
অন্যান্য কর প্রস্তাব: অর্থমন্ত্রী আগামী বাজেটে ১২ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে হয় এমন নন-লিস্টেড কোম্পানির করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। এক ব্যক্তি কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পুঁজিবাজার উন্নয়নে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। পাবলিকলি ট্রেডেড নয়, এমন কোম্পানির করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। মার্চেন্ট ব্যাংক ছাড়া পাবলিকলি ট্রেডেড ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৩৭.৫ শতাংশই থাকছে। পাবলিকলি ট্রেডেড নয়, এমন ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার বর্তমানের মতো ৪০ শতাংশ থাকছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের করহারও থাকছে ৩৭.৫ শতাংশ। সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ এবং আরও ২.৫ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল ফোন কোম্পানিকে ৪০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। পাবলিকলি ট্রেডেড নয়, এমন মোবাইল ফোন কোম্পানিকে ৪৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে ব্যক্তিসংঘের করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫ শতাংশের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদান করে এমন সব প্রতিষ্ঠানকে ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবসার সার্ভিস চার্জকে উৎসে আয়করের আওতাবহির্ভূত রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। হাঁস-মুরগির খামার এবং হ্যাচারি ও মাছ চাষ থেকে পাওয়া আয়ের ওপর অভিন্ন করহার আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। করজাল বৃদ্ধিতে হোটেল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার এবং ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিকে উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে ধরা হয়েছে। স্টিলজাত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত এইচ আর কয়েল এবং জিংক এলয় জাতীয় কাঁচামাল আমদানিতে করহার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। স্বর্ণ আমদানিতে অগ্রিম কর উঠিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন বাজেটে। টেক্সটাইল শিল্পের বিদ্যমান ১৫ শতাংশ করহার-সংক্রান্ত এসআরও-এর মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে রাজস্ব দাবি পরিশোধে ব্যর্থ উদ্যোক্তাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্য সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্নের সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যাংকের সুদের উৎসে করহার কোম্পানি করদাতার জন্য ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। রপ্তানিকারকদের জন্য উৎসে করহার ০.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। গার্মেন্টস উদ্যোক্তাদের মতো সব ধরনের রপ্তানিকারকদের করহার ১২ শতাংশ এবং পরিবেশবান্ধব গ্রিন শিল্পের জন্য এই হার ১০ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে।