বিশ্বব্যাংক-এডিবির কাছেও ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ৪ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:২১ এএম, ৩ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, সংস্থা দুটির কাছে বাংলাদেশের চাওয়া অর্থের পরিমাণ ২০০ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ব্লুমবার্গ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দুটি দাতা সংস্থাকে ঋণ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। প্রত্যেকের কাছে ১০০ কোটি ডলার করে চাওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া জ্বালানি মূল্য এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব যেভাবে অর্থনীতিতে পড়ছে, তা মোকাবেলার জন্য এ অর্থ দরকার বলে বাংলাদেশের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টির কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। এর আগে গত ২৪ জুলাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর আগাম ব্যবস্থা হিসেবে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ চায়। এর কয়েকদিন পরই বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছেও সহায়তা চাইল বাংলাদেশ।
আমদানি বেড়ে যাওয়া ও প্রবাসী আয় কমার কারণে দেশে ডলারের চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে পতন হচ্ছে টাকার মান। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা সংকুচিত হচ্ছে এবং আমদানি ব্যয়ও কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জুলাইয়ে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা রিজার্ভ গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। চলতি বছরের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে। সদ্যসমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ দিন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৩৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের কাছে ঋণ প্রস্তাবের বিষয়ে গত ২৭ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, সহায়তার জন্য বাংলাদেশ শুধু আইএমএফ নয়, প্রয়োজনে এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের কাছেও যাবে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ তিন বছরের জন্য ৪৫০ কোটি ডলার চেয়েছে। আইএমএফকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সাল শুরুর আগে থেকেই বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব মোকাবেলায় ঠিক সময়ে প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন করে সেগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত করেছে বাংলাদেশ। কোভিডে বাংলাদেশের মানুষের কম আক্রান্ত হওয়া, মৃত্যুর হার কম থাকা ও ভ্যাকসিন দেয়ার উচ্চহারের কারণে ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকেই অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর কারণে রফতানি খাত প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে এবং কৃষি, উৎপাদনশীল খাত ও সেবা খাত কার্যকরভাবেই ফিরে এসেছে। তবে এখন সময় একটু খারাপ (ক্রিটিক্যাল টাইম) বলে জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট সহায়তা বাবদ বাংলাদেশের অর্থের দরকার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকার ও এডিবির মধ্যে মহামারী থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য আড়াইশ মিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তাসহ চারটি প্রকল্পের ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে। এছাড়া আরেকটি প্রকল্পে সিলেট অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর পুনর্র্নিমাণের জন্য আড়াইশ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সরকার। এদিকে নিয়মিত সফরের অংশ হিসেবে গত ১৪ জুলাই আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আসে। সফরকালে সরকারপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাহুল আনন্দ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। সফরকালে দলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ইআরডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সফর শেষে ২২ জুলাই ঢাকা ত্যাগ করে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
জানা গিয়েছে, আইএমএফ থেকে ঋণের বিষয়ে এর আগেও আলোচনা হয়েছিল। তবে বেশকিছু শর্তের কারণে সে আলোচনা আর এগোয়নি। সংস্থাটি বরাবরই বাজেট ভর্তুকি কমিয়ে আনার পরামর্শের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো ও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার শর্ত দিয়ে এসেছে। গত বছরের অক্টোবরে আইএমএফ সারা বিশ্বে করোনার সংকট মোকাবেলায় ১৯০টি সদস্য দেশের জন্য ৬৫০ বিলিয়ন ডলার সমমানের এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) ঘোষণা করে। যার মধ্যে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সরকার ওই সময় এসডিআর নেয়নি। এদিকে বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব নিয়ে শিগগিরই আলোচনা শুরু হবে বলে আইএমএফের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনে যুদ্ধের জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা সামাল দিতে এরই মধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারলেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলো সঠিকভাবে সামাল দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে, যেসব সমস্যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে অর্থায়নে সহযোগিতা দিতেই তারা রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ফান্ড গঠন করেছে এবং বাংলাদেশও এ তহবিল থেকে অর্থ পেতে পারে। আর এ তহবিল থেকে ঋণ পেতে হলে আইএমএফ-সমর্থিত প্রকল্প নিতে হবে। বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া দিতে আইএমএফ প্রস্তুত। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের জন্যও আরএসটি ফান্ড সচল হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এই সময়ে আইএমএফ কর্মীরা প্রকল্প চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নেবে। ঋণের পরিমাণ কত হবে—সে বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে এবং এর ধাক্কায় বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে।