এক বছরে এলসি খোলা কমেছে ৫২ শতাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৯ পিএম, ৫ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:৫১ এএম, ৭ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪
ডলার সংকট কাটাতে দেশের আমদানিতে লাগাম টানায় উদ্যোগী হয় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিয়ে আনা হয় ঋণপত্র (এলসি) খোলা। ফলে এতদিন উৎপাদনমুখী খাতে এর প্রভাব না পড়লেও আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে এ খাতে প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৮৬২ কোটি ডলারের নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়। তা ডিসেম্বর এসে কমে দাঁড়ায় ৪১১ কোটি ডলারে। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে নতুন এলসি খোলা ৫২ শতাংশ কমেছে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, শিল্পের উপকরণ আমদানি কমার প্রধান কারণ ডলার সংকট। দ্বিতীয় কারণ ডলার সংকটের কারণে এলসিতে কড়াকড়ি। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং অনেকে মনে করেন বাড়তি দামে পণ্য কিনে বিক্রি করা যাবে না। শিল্পের উপকরণের এলসি খোলা কমার কারণে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। আগামীতে আরও সংকট তৈরি হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৮৬২ কোটি ডলারের নতুন এলসি খোলা হয়। ফেব্রুয়ারিতে কমে ৭১৬ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। তবে মার্চ ও এপ্রিলে আবারও বাড়তে থাকে। দুই মাসে যথাক্রমে ৯৮০ ও ৮৪২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়। মে মাসে ৭২৭ ও জুনে ৮৪৮ কোটি ডলারের এলসি খুলে ব্যাংকগুলো। জুনের পর টানা এলসি খোলা কমতে থাকে। জুলাই মাসে এলসি খোলা হয়েছিল ৬৩৯, আগস্টে ৬৬১, সেপ্টেম্বরে ৬৫১, অক্টোবরে ৪৭৪ এবং নভেম্বরে ৪০২ কোটি ডলার।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম খান বলেন, দেশের অর্থনীতিতে সংকট তৈরি হলে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়ন্ত্রণ করার কারণে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে। কারণ আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। তারা অনেক অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারেনি। এমন এলসি খোলা কমাতে থাকলে আগামীতে উৎপাদনমুখী খাতে প্রভাব তৈরি হবে। এতে দেশের কর্মসংস্থান কমে যাবে।
ঋণপত্র খোলা কমার পাশাপাশি নিষ্পত্তিও কমেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৬৫৮ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে ৪২৫ কোটি ডলারের। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের জানুয়ারিতে ৬৮৫ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়। ফেব্রুয়ারিতে ৬৫৬, মার্চ ৭৬৭, জুন ৬৯৩ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়। জুলাই মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭৪০, আগস্টে ৭৪০, সেপ্টেম্বরে ৬৭২, অক্টোবরে ৬৪১ এবং নভেম্বরে ৫৬০ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, নানা শর্তের কারণে ঋণপত্র খোলা কমেছে। এটা আমাদের জন্য বড় একটা সাফল্য। কারণ আগে ব্যাংকগুলো অপ্রয়োজনীয় এলসি খুলত। এখন কড়াকড়ির কারণে যাচাই-বাছাই করেই খোলা হচ্ছে। আশা করছি, এ সিদ্ধান্তের ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা কমে আসবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানির নতুন এলসি খোলার পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারলেও দেশের বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ঘাটতি কমাতে পারেনি। বরং চলতি অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ আরও বেশি হয়েছে। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছ এক হাজার ১৭৯ কোটি ডলার। একই সময় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ঘাটতিও ৫৬৭ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।