ভারত থেকে আরও বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করছে সরকার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:১১ এএম, ১২ মার্চ,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫৫ এএম, ৮ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২৪
এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ওপর চাপ কমাতে ভারত থেকে আরও বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করছে সরকার। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা গ্রিডলাইন হয়ে দেশটি থেকে প্রথম বিদ্যুৎ আমদানি করে সরকার। বর্তমানে ভারত থেকে ১৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, আমদানি করা প্রতি ঘনফুট এলএনজির বর্তমান বাজার মূল্য ২৭ টাকা। এই পরিমাণ এলএনজি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে বিক্রি করা হয় ৪ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতি ঘনফুটে মূল্যঘাটতি দেখা দেয় ২৩ টাকা। আর এলএনজি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পিডিবিকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৭শ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ওপরে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ৭৯টি। এগুলোর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ৩৭টি, আইপিপি ২৯টি এবং রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৩টি। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ১২ হাজার ৬৯২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। কেন্দ্রগুলোর অনুমোদিত লোড ২৫২৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর পেট্রোবাংলা সরবরাহ করছে ১২৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট। আর দেশে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কয়েকটি বড় প্রকল্প থেকে আগামী দুই বছরের মধ্যে আরও সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও দেশে এখন বিদ্যুতের গড় চাহিদা দৈনিক সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট।
এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জানান, বিভিন্ন জ্বালানি উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি আমদানি করা হচ্ছে। তবে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টি সরকারের বিশেষ গুরুত্বে রয়েছে। ভবিষ্যতে আমদানি আরও বাড়বে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী শুধু ভারত থেকেই না, পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশ থেকেও আমদানি করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, দেশের বাড়তি গ্যাসের চাহিদা পূরণ করতে চড়ামূল্যে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করছে সরকার। দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে এলএনজি মিশিয়ে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে তার বড় অংশ সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করছে।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, আমরা সবসময়ই বলেছি এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা যাবে না। কারণ এই জ্বালানি অনেক বেশি ব্যয়বহুল। যে টাকা এলএনজির পেছনে খরচ করা হচ্ছে সে টাকা নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে ব্যয় করলে বেশি লাভবান হওয়া যেত।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে সরকার ভুল নীতি গ্রহণ করেছে। তার মাশুল দিতে হচ্ছে জনগণকে। ভবিষ্যতে আরও বিপর্যয় নিয়ে আসবে। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণনীতি এবং প্রক্রিয়া কোনোভাবেই আদর্শ অবস্থায় নেই। বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবি জানায়, বর্তমানে দেশে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২১ হাজার ২৩৯ মেগাওয়াট। কয়েকটি বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে আগামী দুই বছরের মধ্যে আরও সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার কথা রয়েছে। অথচ দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের গড় চাহিদা দৈনিক সাড়ে ৯ হাজার থেকে সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে। অর্থাৎ বিদ্যুতের মোট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ৬০ শতাংশই ব্যবহৃত হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের অক্টোবরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা গ্রিডলাইন হয়ে বাংলাদেশে প্রথম বিদ্যুৎ রফতানি করে ভারত। বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত থেকে দৈনিক ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। গত ছয় বছরে এ আমদানি বাবদ ১৬ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা খরচ করেছে পিডিবি।