বাড়ছে বাজার খরচ, বাড়ছে না আয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৩ এএম, ১৩ মার্চ,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:২৭ পিএম, ৯ অক্টোবর,
বুধবার,২০২৪
পবিত্র রমজান মাস শুরুর এখনও মাসখানেক বাকি। এরই মধ্যে বাজারে মুনাফাখোরদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। কেউ কেউ বলছেন, পবিত্র শবেবরাতকে সামনে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মুনাফাখোররা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজ, চাল ও মুরগির দাম বেড়েছে। রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ক্রেতাদের মতে, বাজার খরচ বাড়লে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয় তো বাড়ছে না।
নতুন করে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা চালের দাম আবারও বেড়েছে। ভোজ্য তেল ও মুরগির দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। অধিকাংশ পণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই চড়া। এ কারণে ক্রেতা বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে।
গোপীবাগ এলাকার বাসিন্দা আয়ুব আলী বলছিলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে অচিরেই রাজধানী ছেড়ে যেতে হবে। এত দাম দিয়ে পণ্য কিনে ব্যয় নির্বাহ করে পরিবারসহ ঢাকায় থাকা তার জন্য কঠিন।
তিনি বলেন, ‘বাঁচার জন্য দরকারি পণ্য বিশেষ করে চাল, তেল, চিনি, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম নাগালের বাইরে। এখন পেঁয়াজের দাম ৫৫-৬০ টাকা কেজি। বাজার খরচ শুধু বাড়ছেই। অথচ আয় বাড়ছে না।’
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারের তথ্য বলছে, পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা দোকান থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। বাছাই করা পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের শুরুর দিকে বাজারে আসা মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ শেষের দিকে। এ কারণেই দাম বেড়েছে। আরও কিছুদিন এই পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে।
কাওরানবাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা দোকানে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যই বলছে, গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৬ শতাংশ। নতুন করে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ টাকা। খুচরা দোকানে নাজিরশাইল চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা, মিনিকেট ৬০-৬৫ টাকা এবং মাঝারি বিআর-২৮ চাল ৪৫-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি’র তথ্যই বলছে, গত এক সপ্তাহে স্বর্ণা, চায়না অর্থাৎ মোটা চালের দাম বেড়েছে ১.৫ শতাংশ। এই এক সপ্তাহে পাইজাম ও লতা অর্থাৎ মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ১.৮৫ শতাংশ এবং নাজিরশাইল ও মিনিকেট তথা চিকন চালের দাম বেড়েছে ০. ৮০ শতাংশ। এছাড়া কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা মুরগির দাম কমছে না।
আজ শুক্রবার খুচরা বাজারে সোনালিকা জাতের মুরগি প্রতি কেজি ৩১০-৩২০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৫৫ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪২০-৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মুরগির চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। শীত চলে যাওয়ার সময়ে বিভিন্ন রোগের কারণে খামারে অনেক মুরগি মারা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষ মুরগি খাওয়া ছেড়ে দিতে শুরু করেছে। গরুর মাংসের কেজি ৫৫০-৫৭০ টাকা।
বাজারে মৌসুমের নতুন সবজি হিসেবে উঠতে শুরু করেছে সজনে ডাঁটা। তবে এ সবজিটির দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। এক কেজি সজনে ডাঁটা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। অবশ্য পটল ও ঢেঁড়সের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। এছাড়া আলু, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, গাজর, বেগুনসহ বেশিরভাগ সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহে ৮০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটল ও ঢেঁড়সের দাম কিছুটা কমে এখন ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আগের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা। শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকার মধ্যে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। মূলা ১৫-২৫ টাকা, বেগুন ২০-৩০ টাকা, পেঁপে ৩০-৩৫ টাকা এবং গাজর ২০-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়। লাউ বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৪০-৬০ টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, চাল, ব্রয়লার মুরগি, ভোজ্য তেল, চিনি ইত্যাদির বাড়তি দাম থাকায় জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫.৩২ ভাগ, যা জানুয়ারিতে ছিল শতকরা ৫.০২ ভাগ। জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ০.৩০ ভাগ।
বিবিএসের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চাল, ব্রয়লার মুরগি, ভোজ্যতেল, চিনি ইত্যাদির মূল্য চলতি বছরের জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে বেড়েছে। আলু, পেঁয়াজ, শাক-সবজি (বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, টমেটো, গাজর ইত্যাদি), ফল (আঙুর, বরই ইত্যাদি) এবং মশলা (জিরা, দারুচিনি) ইত্যাদির মূল্য জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রæয়ারিতে কমেছে।
গত এক বছরের (২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) চলন্ত গড় মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে শতকরা ৫.৬৩ ভাগ। পূর্ববর্তী একই সময়ে (২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) চলন্ত গড় মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে শতকরা ৫.৬০ শতাংশ। তথ্যমতে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির শতকরা হার ছিল ৫.৪৬ ভাগ। এই হিসাবে গত বছরের তুলনায় কমেছে।