লকডাউনের শুরুতেই বেড়েছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩০ এএম, ৬ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:১০ পিএম, ১২ অক্টোবর,শনিবার,২০২৪
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশব্যাপী এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। আর লকডাউনের প্রথম দিন আজ সোমবার রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দাম বেড়েছে অনেকটাই। কেজিপ্রতি সবজির দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। তবে স্থিতিশীল রয়েছে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম। সরেজমিনে রাজধানীর কাওরান বাজার, হাজীপাড়া বৌ বাজার, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে এ পরিস্থিতি দেখা গেছে। তবে লকডাউনের বাজারেও কোনো সবজির কমতি নেই। আলু, পটল, করলা, টমেটো, শিম, লাউ, কাঁচা-পাকা মিষ্টি কুমড়া, ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, মুলা, লাল শাক, পালং শাক, লাউ শাক সবকিছুই বাজারে ভরপুর। কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লকডাউনের আগে রবিবার রাস্তায় অতিরিক্ত যানজটের কারণে সবজি পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হয়। যার ফলে সবজির দাম বেড়েছে। তবে সরবরাহের সমস্যা না থাকলে পরিস্থিতি দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
দাম বেড়ে আজকে প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, পটল, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। যা গতকালও ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে ছিল। দামবৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে আলু, পেঁপে, টমেটোও। মালিবাগ বাজারে সবজি বিক্রেতা হাসানুজ্জামান বলেন, গতকাল যে আলু ২০ টাকায় বিক্রি করেছি তা আজ ২৫ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে বেড়ে ৩০ টাকা আর টমেটো ২০ থেকে বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। পাইকারিতে কাওরান বাজারে প্রতি পাল্লায় (৫ কেজি) সবজির দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে আমাদেরকে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। সবজির এমন দামে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি বিরাজ করছে। ঠান্ডা সবজি হিসেবে পরিচিত লাউয়ের দামও বেশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা পিস বিক্রি হওয়া লাউয়ের দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।
শান্তিনগর বাজারে আরিফুর রহমান বলেন, সবজির কোনো কমতি নেই। বাজারে লকডাউনের কোনো প্রভাবও নেই। সেই হিসাবে সব সবজিরই দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে এসে দেখি সবকিছুরই দাম বেড়ে গেছে। কোনোরকম অজুহাত পেলেই দাম বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। এটা তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। তবে সবজির দাম বাড়লেও বাজারে আদা, রসুনের দাম লকডাউনে নতুন করে বাড়েনি। প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, আদা ও রসুন মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরা বাজারের মুদি দোকানি রফিক মিয়া জানান, লকডাউনের পরে তেল, চিনি, আটার মতো পণ্যগুলোর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এখনও বাজারে লকডাউনের কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। পাইকারি বাজার খোলা থাকায় সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
গতকালও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম : এক সপ্তাহের লকডাউনের প্রথম দিন গতকাল সোমবার আরেক দফা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। এর মাধ্যমে দুদিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ল ১০ টাকা।
এর আগে গত শনিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ায় সোমবার (৫ মার্চ) থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন দিতে যাচ্ছে সরকার। লকডাউনের এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শনিবার দুপুর থেকে রাজধানীর বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে যায়। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলুসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাড়তি পরিমাণে কেনেন ক্রেতারা। ক্রেতারা বাড়তি পণ্য কেনার কারণে সন্ধ্যার পরপরই কোনো কোনো খুচরা দোকানে পেঁয়াজ শেষ হয়ে যায়। রবিবার সকাল হতেই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন পাইকাররা। ফলে খুচরা বিক্রেতারাও কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। অবশ্য এতেই পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি থেমে থাকেনি। রবিবারের মতো সোমবার সকালেও পাইকারি বাজারে গিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা দেখেন পেঁয়াজের দাম কেজিতে আরও পাঁচ টাকা বেড়েছে। ফলে পেঁয়াজের দাম আরও এক দফা বাড়িয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। রবিবার যে ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন, গতকাল তারা ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। পেঁয়াজের এই দাম বাড়ার বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, লকডাউনের খবরে রবিবার পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। আজ আবার দাম বাড়বে ধারণাই করতে পারিনি। সকালে বাজারে গিয়ে দেখি গতকালের মতো আজও পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে।
তিনি বলেন, বাজারে পেঁয়াজের অভাব নেই। মূলত পাইকারি বাজারের ওপর পেঁয়াজের দাম বাড়া অথবা কমা নির্ভর করে। দুদিনে পেঁয়াজের দাম যেভাবে বাড়ল, তাতে পাইকারি বাজারে দ্রুত নজরদারি না বাড়ালে দাম আরও বাড়তে পারে। খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আতাউর বলেন, দুদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। আজ পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়লেও ক্রেতা কম। আগের দুদিন বাড়তি কেনার কারণেই হয় তো এখন ক্রেতা কম। পাইকারিতে যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে রোজার শুরুতে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে। সেগুনবাগিচার ব্যবসায়ী মীর সোহেল বলেন, ধারণা ছিল এবার রোজার শুরুতে পেঁয়াজের দাম কমবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেই ধারণা ভুল প্রমাণ হবে। কারণ চাহিদা কমার পরও আজ নতুন করে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের ভালো উৎপাদন হাওয়ায় এবার দাম তুলনামূলক কম ছিল। দুদিন আগেও ৩০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। এখন আমাদেরই কিনতে হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি। মূলত লকডাউনের কারণে সব ওলটপালট হয়ে গেছে। লকডাউনে মানুষ অতিরিক্ত পেঁয়াজ কেনার কারণে দাম বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী গৌতম বলেন, দুদিনে মানুষ যে হারে পেঁয়াজ কিনেছেন, তাতে বাজারে পেঁয়াজের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কারণে দাম বেড়েছে। আমাদের ধারণা এ দাম থাকবে না। কিছুদিনের মধ্যেই দাম কমে যাবে। তিনি বলেন, বাজারে হালি পেঁয়াজ (ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ) আসছে। পেঁয়াজের উৎপাদনও ভালো হয়েছে। আবার ক্রেতারা বাড়তি পরিমাণে কেনায় চাহিদাও কমবে। ইতিমধ্যে আজ বিক্রি কমে গেছে।
শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ মাজেদ বলেন, বাজারে মাল (পেঁয়াজ) কম। সুতরাং দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এ সময় কিছুটা বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়লে আপনাদের সমস্যা কী। দাম বাড়ছে, একটু বাড়তে দিন। এতে চাষিরা কিছু টাকা পাবেন। পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা হলে তো সমস্যা নেই।