ঈদ উদযাপনে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের বাড়তি চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার নতুন-পুরনো মিলে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি রেখেছে ব্যাংক। এর মধ্যে ছোট-বড় মূল্যমান মিলে একেবারে নতুন নোট রয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। লকডাউন দেয়ার আগে থেকেই নতুন টাকা বাজারে ছাড়া হচ্ছে। ব্যাংকের যারা গ্রাহক, তারা লেনদেনের সময় নতুন টাকা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া এটিএম বুথেও মিলছে নতুন টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নোটের মধ্যে রয়েছে ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০ এবং ৫০০ টাকার নোট। আগের মতো সমপরিমাণ পুরনো নোট বাজার থেকে অপসারণ করা হবে। 

ঈদ সালামিতে নতুন টাকার জুড়ি নেই। ছোট-বড় সবারই নতুন টাকা পেতে ভালো লাগে। পাশাপাশি বকশিশ, ফিতরা কিংবা দান-খয়রাতেও অনেকে নতুন টাকা দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে ঈদের আগের মাসের বেতন ও বোনাসের টাকা নতুন নোটে পাওয়ার আশা করেন চাকরিজীবীরা। ঈদের কেনাকাটাতেও বাজারে নগদ টাকার চাহিদা বাড়ে। এ চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়েই নতুন টাকা সংগ্রহ করে থাকেন গ্রাহক। আর গ্রাহকের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রতি বছর দুই ঈদে নতুন টাকা বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় সর্বসাধারণের মাঝে নতুন টাকা বিনিময় বন্ধ রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সারা বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বিভিন্ন মূল্যমানের নোট প্রয়োজন হয়। এর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ প্রয়োজন হয় দুই ঈদে। তবে এবার করোনার সংকটের কারণে এবার নগদ টাকার চাহিদা বেশি হচ্ছে। ঈদের আগে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন টাকা বাজারে এলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়বে কি না, জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা বলেন, সে রকম কোনো চাপ পড়বে না। কারণ ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল বন্ড অকশন করে বা বন্ড বিক্রি করে এই টাকা নেবে। তাছাড়া এই টাকা খুবই শর্টটাইমের। ১৫ দিন পরেই বাংলাদেশ ব্যাংক তুলে নেবে। যার কারণে এটার খুব বড় ধরনের প্রভাব নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, চাহিদা-সরবরাহ নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক সারা বছর বাজারে নোট সরবরাহ করে। তবে ঈদের আগে নোটের চাহিদা বেশি থাকে। এ বিবেচনায় ঈদ উপলক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার কোটি টাকা বাজারে চলে গেছে। ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাজারে নোট ছাড়া হবে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো আছে। এবার নতুন-পুরনো মিলে ৩৫ হাজার কোটি টাকা প্রস্তুতি রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকাই নতুন নোট। বাকি টাকা ঈদের আগেই চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ছাড়া হবে।

এদিকে নতুন নোট বাজারে ছাড়লেও করোনার বিধিনিষেধের কারণে আগের মতো জনসাধারণের কাছে নোট বিনিময় করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর গ্রাহকরা লেনদেনের সময় নতুন টাকা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া অনেক এটিএম বুথেও নতুন নোট দেয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, এবার ঈদের আগেই চাহিদা অনুযায়ী বাজারে নতুন টাকা ছাড়া হলেও বিশেষ ব্যবস্থায় নতুন টাকা জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করা হবে না। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবিলায় এমন সিদ্ধান্তে যাওয়া হচ্ছে না। নতুন টাকার সবটাই ব্যাংকের মাধ্যমেই বিতরণ করা হবে।

অন্যদিকে বছরের প্রায় সব সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে নতুন টাকার অস্থায়ী বাজার বসে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু মানুষ নতুন টাকা নিয়ে বসে থাকেন। তবে অন্যবারের তুলনায় তাদের বাজার এবার মন্দা যাচ্ছে। ক্রেতা নেই বললেই চলে, এমনটাই বলছেন নতুন টাকার ব্যবসায়ী হালিমা খাতুন। তাদের কাছে ২০০ টাকার এক হাজার নোট কিনতে হলে ৬০ টাকা বেশি দেয়া লাগে, ৫, ১০, ২০ এবং ৫০ টাকার নোটপ্রতি এক হাজার কিনলে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয় এখান থেকে।