রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশ সরকারের
পেগাসাসকাণ্ড তালিকায় বাংলাদেশের নাম
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮:০৩ পিএম, ২০ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৩৪ এএম, ২ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের তৈরি করা স্পাইওয়্যার পেগাসাস। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদ, আইনজীবীর স্মার্টফোনে আড়ি পাতার খবরে আতঙ্ক দুনিয়াজুড়ে। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার গণমাধ্যম এ নিয়েই সরব। পেগাসাসকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের তৈরি করা স্পাইওয়্যার।
২০১৬ সাল থেকে ৫০ হাজার ফোন নম্বরকে এ স্পাইওয়্যার টার্গেট করেছে। মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট, ফ্রান্সের লা মোঁদসহ বিশ্বের বড় বড় পত্রিকা রোববার (১৮ জুলাই) এমন খবর প্রকাশ করেছে। তবে কোথা থেকে এ ফোন নম্বরগুলো পাওয়া গেছে, সত্যিকার অর্থে কতগুলো ফোন হ্যাকড হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জানা সম্ভব হয়নি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব পরিচালনাকারী ক্লডিও গার্নিয়েরি বলেছেন, একবার কোনো ফোনে (স্মার্টফোন) পেগাসাস স্পাইওয়্যার ঢুকে গেলে এনএসওর গ্রাহক পুরো ফোনের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায়। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, সিগন্যালের মতো এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপের বার্তাগুলোও পড়তে পারে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে যেসব দেশের ফোন থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার সন্দেহ করা হচ্ছে, সেই তালিকায় বাংলাদেশেরও নাম রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সোমবার (১৯ জুলাই) গণমাধ্যমকে বলেন, যারা এ তালিকা প্রকাশ করেছে, তারা কি যাচাই-বাছাই করেছে? তারা কি বলতে পারবে, বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান কিনেছে? সরকারি প্রতিষ্ঠান এমন কিছু কেনেনি। তবে বেসরকারি খাতের বিষয়টি আমার জানা নেই।
পেগাসাসের গ্রাহকের নাম প্রকাশ করে না নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ। তবে ওয়াশিংটন পোস্ট–এর খবরে বলা হয়েছে, যেসব দেশে ফোনে আড়ি পাতার কাজে পেগাসাস ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে সেই তালিকায় আছে আলজেরিয়া, বাহরাইন, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কানাডা, মিসর, ফ্রান্স, গ্রিস, ভারত, ইরাক, ইসরায়েল, আইভরিকোস্ট, জর্ডান, কাজাখস্তান, কেনিয়া, কুয়েত, কিরগিজস্তান, লাটভিয়া, লেবানন, লিবিয়া, মেক্সিকো, মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, পোল্যান্ড, কাতার, রুয়ান্ডা, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, টোগো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উগান্ডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, উজবেকিস্তান, ইয়েমেন ও জাম্বিয়া।
তবে কোনো দেশে ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের উপস্থিতি পাওয়ার অর্থ এই নয় যে, সে দেশের সরকার এই সফটওয়্যারটির গ্রাহক।
তালিকায় শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাহী, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, একাডেমিক, এনজিওকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা রয়েছেন। একটি দেশের শাসকের পরিবারের সদস্যদের নম্বরও রয়েছে। তবে সবার নাম এখনো গণমাধ্যমগুলো প্রকাশ করেনি।
অন্যদিকে ভারতের নিউজ পোর্টাল দ্য ওয়্যার বলছে, এ ফোন নজরদারির আওতায় সে দেশের অন্তত ৩০০ রাজনীতিক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, বিজ্ঞানীর নাম রয়েছে। এ তালিকায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও রয়েছে। রয়েছে বিজেপির দুই মন্ত্রী প্রহ্লাদ প্যাটেল ও অশ্বিনী বৈষ্ণর নামও।
এনএসও গ্রুপ হলো ইসরায়েলের তেল আবিবভিত্তিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বর্তমান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্পাইওয়্যার নির্মাতাদের অন্যতম তারা। তাদের পেগাসাস স্পাইওয়্যার এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে সেটা সহজেই আইফোন ও অ্যানড্রয়েড ফোনে ঢুকে তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির ৪০ দেশে ৬০টি গ্রাহক রয়েছে। গ্রাহকদের সব কটিই সরকারি সংস্থা। বুলগেরিয়া ও সাইপ্রাসে অফিস রয়েছে এনএসওর। গত বছর তাদের আয় ছিল ২৪ কোটি ডলারের বেশি। এই কোম্পানির বেশির ভাগ মালিকানায় রয়েছে লন্ডনভিত্তিক বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নোভালপিনা ক্যাপিটাল।
স্পাইওয়্যার হলো একটি ম্যালওয়ার, যেটা কোনো ব্যক্তির অগোচরে তাঁর কম্পিউটার, ফোন বা অন্যান্য ডিভাইস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। আধুনিক প্রযুক্তির স্পাইওয়্যার সাধারণত আইন প্রয়োগকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যবহার করে। বর্তমান বিশ্বে ব্যয়বহুল এই প্রযুক্তির বড় বাজার রয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি সংস্থার পাশাপাশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও অপরাধী চক্রও এসব স্পাইওয়্যার ব্যবহার করছে বলে ধারণা করা হয়।
এনএসও গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, সাধারণ মানুষের স্মার্টফোনের তথ্য হাতিয়ে নিতে এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয় না। শুধু সন্দেহভাজন অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর এটা দিয়ে নজরদারি করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) বিশ্বজুড়ে শক্তিশালী প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সংবাদমাধ্যমের ওপর নজরদারি বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে বিভিন্ন দেশের সরকার ও কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এই প্রতিবেদন দেখিয়েছে, শুধু অপরাধ ও সন্ত্রাস দমন নয়, ব্যক্তিস্বাধীনতা লঙ্ঘনে এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এর অপব্যবহার বন্ধে সরকার ও কোম্পানিগুলোকে কাজ করতে হবে।