বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর আলোকপাতসহ বাংলাদেশের তিন ইভেন্ট নিয়ে আপত্তি জাতিসংঘের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৫ এএম, ২৪ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৫৬ পিএম, ১ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
আগামী মাসে হতে যাওয়া সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের তিনটি সাইড ইভেন্ট নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে জাতিসংঘ। এগুলো হচ্ছে-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ওপর আলোকপাত, রোহিঙ্গা ইস্যু ও জলবায়ু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা। প্রথমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই তিনটি বিষয়ের ওপর জাতিসংঘে সাইড ইভেন্ট করার পরামর্শ দেয়া হয়। পরামর্শ গ্রহণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘে যোগাযোগ করে। সেখানে তিনটি বিষয়ের ওপর সাইড ইভেন্ট করার আগ্রহ প্রকাশ করে জাতিসংঘে চিঠি দেয়। কিন্তু জাতিসংঘ থেকে ওই প্রস্তাবে সরাসরি আপত্তি জানায়। করোনার কারণ দেখিয়ে জাতিসংঘ জানায়, চলতি বছর এ ধরনের কোনো ইভেন্ট করার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, তিনটি সাইড ইভেন্ট নিয়ে আমাদের আগ্রহের কথা জাতিসংঘকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা করোনার কারণ দেখিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সংসদীয় কমিটির আপত্তির তথ্যটি সংসদীয় কমিটির পরবর্তী মিটিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। এদিকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মূল অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ সাইড ইভেন্ট করে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ছড়িয়ে দিতে দেশের নানা বিষয় সেখানে উপস্থাপন করা হয়। এসব ইভেন্টের মাধ্যমে একটি দেশ তাদের অবস্থানকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরে। এরই অংশ হিসেবে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবনী, রোহিঙ্গা ইস্যু ও জলবায়ু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য অবদান নিয়ে ইভেন্ট করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে ভারত জাতিসংঘের অধিবেশনে সাইড ইভেন্টে গান্ধীকে নিয়ে আলোকপাত করে। একইভাবে বাংলাদেশও এ ধরনের সাইড ইভেন্ট করতে পারে বলে সংসদীয় কমিটি মনে করছে। সংসদীয় কমিটি জানিয়েছে, তিনটি সাইড ইভেন্ট হিসেবে যেসব বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে তা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি। বঙ্গবন্ধু না জন্মালে বাংলাদেশ হতো না। উইকিপিডিয়ায় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলা হয়েছে, শেখ মুজিব বা বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” হিসেবে অভিহিত করা হয়। উইকিপিডিয়া জানিয়েছে, এ ছাড়াও তাকে প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি “শেখ মুজিব” বা “শেখ সাহেব” নামে এবং তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু” হিসেবেই অধিক পরিচিত। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে তিনি একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে বাধ্য হন। এর সাত মাস পরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সামরিক কর্মকর্তার হাতে তিনি সপরিবারে নিহত হন। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি কর্তৃক পরিচালিত জনমত জরিপে শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত হন।
এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তারা জানায়, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী বা উদ্বাস্তু বলতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী বা উদ্বাস্তুদের বোঝানো হয়ে থাকে। এ মুহূর্তে কক্সবাজারে সব মিলিয়ে অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আরও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি এত মানুষকে আশ্রয় দিতে গিয়ে নানাভাবে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিষয়টি তুলে ধরতে পারলে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করা যাবে। ওদিকে জলবায়ু নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তারা জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশসহ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। উন্নত বিশ্বের শিল্প-কারখানার কারণে বিশ্বজুড়ে বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা। গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ায় বাতাসে সিসার মাত্রা বেড়ে যাওয়া, সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূগর্ভস্থ পানির লেভেল ক্রমশ নিচে নেমে যাওয়াসহ ওজন স্তর ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে বিশ্বজুড়েই দুর্যোগের মাত্রা ও পরিমাণ বাড়ছে। ভূমিকম্প, ভূমিধস, খরা-বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হচ্ছে মানুষ। উন্নত বিশ্বের শিল্পমুখিনতার প্রভাবে এসব দুর্যোগের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বিষয়টি ব্যাপক গুরুত্ব পায়। পরপর কয়েকটি জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষুরধার যুক্তি উত্থাপন ও যোগ্য নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনগুলোতে উন্নত দেশগুলো, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশ পরিবেশের সুরক্ষায় তহবিল গঠনে সম্মত হয়। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়, এই তহবিলের বড় অংশই ব্যয় হবে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সাইড ইভেন্ট হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। প্রসঙ্গত আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে। এটি হবে ৭৭তম অধিবেশন। এ অধিবেশনে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো সহ-সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেবে। ৭ জুন নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বাংলাদেশ সর্বসম্মতিক্রমে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়। এর আগে ২০১৬-১৭ মেয়াদে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সহ-সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেয়। সেটি ছিল ৭১তম অধিবেশন। জাতিসংঘের প্রধান নির্বাহী হলেন এর মহাসচিব। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মহাসচিব পদে রয়েছেন পর্তুগালের নাগরিক, রাজনীতিবিদ ও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও ম্যানুয়েল দে অলিভেইরা গুতেরাঁ।