স্বাস্থ্য বিভাগ দুর্নীতির ডিপো, সংস্কারে কমিটি চান হারুন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০০ এএম, ৮ জুন,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১২:০৪ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
দেশের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে দুর্নীতির ডিপো আখ্যা দিয়ে সংস্কারের জন্য কমিটি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেছেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হারুন-উর রশীদ।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ছাঁটাই প্রস্তাব আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান।
হারুন-উর রশীদ বলেন, আসলে স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ে কথা বলতে বলতে আমরা বেহাল হয়ে গেছি। স্বাস্থ্য বিভাগে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আমার আপত্তি আছে। এমপি হওয়ার আড়াই বছর পার হয়ে গেল আমার। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার নির্বাচনি এলাকার জেলা সদর হাসপাতালে শূন্যপদে টেকনোলজিস্ট, চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়নি। এখানে ৩ হাজার কোটি টাকা দিয়ে কী করবেন? এই কোভিডকালীন সময়ে যে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছেন তার ব্যয়ের হিসাব আমাদের জানাতে হবে। আগে যেটা বরাদ্দ ছিল তাই ব্যয় করতে পারেননি।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগকে সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। আপনি কীভাবে সংস্কার করতে চাচ্ছেন? একটা কমিটি করেন। আপনি ইচ্ছা করলে পারবেন না। কারণ চিকিৎসকদের শতকরা ৮০ ভাগ সরকারি দলের সদস্য। আমার ওখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা ১০ ক্যাটাগরির, সেখানে একটিও নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, অন্যান্য হাসপাতালে ১টা পদের বিপরীতে ৫০ জনের পোস্টিং। বিভিন্ন তদবিরের কারণে বেহাল অবস্থা স্বাস্থ্য বিভাগের।
এ সংসদ সদস্য বলেন, প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারত যাচ্ছে। এতে আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশটিতে চলে যাচ্ছে। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজাতে পারি, সংস্কার করতে পারি তাহলে বিদেশে যে টাকা চলে যাচ্ছে তা আটকানো সম্ভব হবে।
টিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানাবেন আমরা কবে থেকে টিকার কার্যক্রম চালাবো। পাশাপাশি সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। মানসম্মতভাবে যদি এ টিকাকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় তাহলে আমরা আগামী এক বছরের মধ্যে ৮০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পারব। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যবস্থাকেও উন্মুক্ত করতে হবে। এখানে দুর্নীতি থাকা চলবে না।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে টিকার জন্য চুক্তি করেছিলেন। কেন আজকে ভারত চুক্তি বাতিল করল? কী কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী টাকা চাচ্ছেন এবং কী কারণে টাকা ব্যয় করতে পারলেন নাÑ এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। হাসপাতালে সরঞ্জাম দেবেন, ডাক্তার নেই, টেকনোলজিস্ট নেই। এগুলো বেকার নষ্ট হবে। আজকে আমি বললাম একটা আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স দেন। আপনি অ্যাম্বুলেন্স দিলেন, ড্রাইভার নেই। ওটা তো গ্যারেজে পড়ে থেকে পরের বছরই নষ্ট হয়ে যাবে। এই অবস্থা হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের। আজকে লাখ লাখ কোটি টাকার সরঞ্জাম নিয়ে আসছেন, জিনিসপত্র নিয়ে আসছেন। সেখানে জনবল নেই, কিছু নেই। পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
হারুন-উর রশীদ বলেন, আমি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে বলছি, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সুচিকিৎসার জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করব, তাঁকে যেন বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করানোর সুযোগটা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, অপ্রদর্শিত টাকা আইনের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত হওয়া দরকার। বাইরে ভুল ম্যাসেজ যাবে যে আমি পার্লামেন্টে কালো টাকা সাদা করার জন্য বলেছি। আমি কিন্তু কালো টাকা সাদা করার পক্ষে নই। অপ্রদর্শিত যেটা বৈধ আয় সেটি সংজ্ঞায়িত হওয়া দরকার।
বিরোধী দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, বিদেশ থেকে বিটুমিন আমদানি করা হচ্ছে। আরব আমিরাতে কোনো বিটুমিন কারখানা নেই, উৎপাদন করে না। সেখানকার সিল লাগিয়ে বাংলাদেশে নিম্নমানের বিটুমিন আসছে। কারা বিটুমিন আমদানি করেছে? কারা বিটুমিন আমদানির সঙ্গে জড়িত? এসব ব্যাপারে সরকারকে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
তিনি বলেন, স্কুলে অংকে ভালো ছাত্র ছিলাম। শিক্ষকরা আদর করতেন। কিন্তু বাজেটের অংকের হিসাব মেলাতে পারছি না। ঘাটতি কোথায়? কোথা থেকে টাকা আনবে? গত অর্থবছরে মাননীয় অর্থমন্ত্রী একটা প্রস্তাব পাস করেছিলেন যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থ মজুদ আছে সে অর্থ কাজে লাগাবেন। সেই অর্থ ব্যবহার করলেন কি না সেটা এখন পর্যন্ত আমাদের সংসদকে অবহিত করা হয়নি।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে করোনা নিয়ন্ত্রণে। না হলে প্রবাসী আয়, পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। করোনাকালীন সময় যদি দীর্ঘ হয় তাহলে দেশে বায়াররা আসতে পারবে না। প্রবাসীরা বিদেশে যেতে পারবে না। যা আমাদের ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলবে।
এ সংসদ সদস্য বলেন, আপনি প্রতি বছর লাখ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিচ্ছেন। এই ঋণের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু বিকলাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শেয়ারবাজার শুয়ে গেছে একেবারে। সত্য কথা বললে সরকারি দলের সদস্যরা বেজার হয়ে চিল্লাচিল্লি করবেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, দুর্নীতিগ্রস্ত।