সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণের দূরত্ব থাকবে না : নতুন সেনাপ্রধান শফিউদ্দিন আহমেদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৫ এএম, ২৫ জুন,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:১৭ পিএম, ১১ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৫
নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে জেনারেল র্যাংক ব্যাজ পরানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই ব্যাজ পরানো হয়।
এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে ব্যাজ পরিয়ে দেন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শফিউদ্দিন আহমেদ বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছ থেকে তিনি দায়িত্ব বুঝে নেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে গত ১০ জুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ওয়াহিদা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ শিখা অনির্বাণে পষ্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর সেনাকুঞ্জে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। সেখানে তিনি একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণের দূরত্ব থাকবে না। সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিডিয়ার দূরত্ব থাকবে না। আজ তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
সেনাপ্রধান বলেন, ২০২১ সালের একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী যোগ হয়েছে। এরকম একটা মাহেন্দ্রক্ষণে দায়িত্বগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করছি।
তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতা ছাড়া এতো বড় গুরু দায়িত্ব পালন করা যাবে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে ক্লাসিক্যাল রোলগুলো আছে, সে দায়িত্ব আমরা যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল শফিউদ্দিন উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তিনি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সালে মোজাম্বিকে ১৬ মাস শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এ ছাড়া ২০১৪-১৬ পর্যন্ত সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অসামান্য কর্মদক্ষতা প্রদর্শনের জন্য এসআরএসজি কর্তৃক সাইটেশন প্রাপ্ত হোন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল শফিউদ্দিন বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডিফেন্স স্টাডিজে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমআইএসটি হতে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজে এমফিল সম্পন্ন করেন। জেনারেল শফিউদ্দিন বর্তমানে বিইউপিতে পিএইচডিতে অধ্যয়নরত রয়েছেন। তার কর্মজীবনে তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়াদি, শান্তিরক্ষী বাহিনী এবং ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেমিনার, সম্মেলন, কর্মশালা ইত্যাদিতে অংশ নিয়েছেন। দেশ ও বিদেশের জার্নালে তার স্বনামধন্য আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল শফিউদ্দিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। উল্লেখযোগ্য দেশসমূহ মোজাম্বিক, সোয়াজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, চায়না, ইউএসএ, শ্রীলংকা, নিউজিল্যান্ড, ভারত, নেপাল, কুয়েত, মালদ্বীপ, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, রুয়ান্ডা, মরক্কো, কঙ্গো, জার্মানি, ফ্রান্স, কেনিয়া, ইউনাইটেড আরব আমিরাত ও থাইল্যান্ড।
সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ, ওএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, ১৯৬৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর খুলনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর নবম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। সামরিক কর্মজীবনে স্টাফ, প্রশিক্ষক এবং কমান্ড নিযুক্তিতে কর্মরত ছিলেন। জেনারেল শফিউদ্দিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি পদাতিক ব্রিগেড এবং একটি পদাতিক ডিভিশনসহ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী অপারেশনে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে মাল্টিন্যাশনাল ফোর্স কমান্ডার হিসেবে প্রথম বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন কমান্ডের অনন্য অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন অফিসার। কমিশন পরবর্তী Counterinsurgency অপারেশন এলাকায় যোগদানপূর্বক তিনি তার সামরিক কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে Counterinsurgency অপারেশন এলাকার পদাতিক ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিভিন্ন ফরমেশন সদর দফতরে সিনিয়র অপারেশনাল এবং প্রশাসনিক স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ প্রশিক্ষক হিসেবে ক্যাডেট কলেজ ও বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সদর দফতর আর্টডকের চিফ অব ডকট্রিন ডিভিশন এবং সেনাবাহিনী সদর দফতরে সামরিক প্রশিক্ষণ পরিদফতরের পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের ৭ মে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করে ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সফলতার সঙ্গে ডিভিশন কমান্ড শেষে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন জাতিসংঘ সদর দফতর কর্তৃক মিনুস্কাতে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত লাভ করেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল শফিউদ্দিন বর্তমান পদবিতে পদোন্নতি লাভের পূর্বে এনডিসির এসডিএস (আর্মি-১) এবং লজিস্টিকস এরিয়ার জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জেনারেল শফিউদ্দিন গত ২৫ আগস্ট ২০১৯ তারিখে জিওসি হিসেবে আর্টডকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। জেনারেল শফিউদ্দিন দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। তিনি চীনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি (এনডিইউ)’তে আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। ২০১০ সালে তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ কোর্স, এনডিইউ, চায়না সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ হতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে জেনারেল শফিউদ্দিন বিবাহিত এবং দুই কন্যা সন্তানের জনক।