৮০ হাজার হেক্টর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি - প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৫ এএম, ২৮ জুন,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৩৩ এএম, ২৮ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পতিত জমিতে কিভাবে ফসল ফলানো যায় তার জন্য মাটি নিয়ে গবেষণা চলছে। সেখানে গবেষণায় আমরা সাফল্য অর্জন করেছি। সরকার নতুন করে ৮০ হাজার হেক্টর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে বলেও জানান সরকার প্রধান। এখনও বহু জমি পতিত পড়ে আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আজ রবিবার ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন চরাঞ্চল, বিশেষ করে শীতের সময় চরাঞ্চলের মাটি গবেষণা করে আমাদের গবেষকরা সেটা আবিষ্কার করেছেন। সেখানে নানা ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। যে সমস্ত এলাকায় এক সময় কোনও ফসলে হতো না এখন সেই সমস্ত এলাকায় নানা ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর পতিত জমি আমরা চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের যে উন্নয়ন তাতে আমরা যথেষ্ট এগিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো এই করোনা আসার পর বাংলাদেশ শুধু নয় বিশ্বব্যাপী একটা স্থবিরতা এসে গেছে। যেটা সব থেকে দুঃখজনক। আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশের জন্য সব থেকে কষ্টকর। আমরা ইতিমধ্যেই করোনাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষ যেন কষ্ট না পায় তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সরকার প্রধান বলেন, যেহেতু করোনায় আবার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ব্যাপক হারে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে গেছে। কাজেই সবাই একটু সাবধানে থাকবেন। নিজেকে নিরাপদে রাখবেন, নিজের পরিবারকে নিরাপদে রাখবেন। স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলবেন। নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। সেটা আমার বিশেষভাবে অনুরোধ। এই অবস্থা আমরা মোকাবিলা করতে পারবো। সে বিশ্বাস আমাদের আছে কিন্তু এক্ষেত্রে আপনাদের সকলের সহযোগিতা আমরা চাই। এ সময় করোনা মোকাবিলায় ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল রাখতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জাতির পিতা সাধারণ মানুষের জন্য যতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় আসে তারা একে একে সবই বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এই বাংলাদেশে আমরা দেখেছি ’৯১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, কৃষকরা সারের জন্য আন্দোলন করেছিল, ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল, কৃষক সার পায়নি পেয়েছিল গুলি।
শেখ হাসিনা বলেন, তখন আমরা বলেছিলাম, আমরা আওয়ামী লীগ যদি সরকারে আসি সারের জন্য কৃষকদের গুলি খাওয়া তো দূরের কথা দৌড়া-দৌড়িও করতে হবে না। কৃষকের ঘরে (সার) পৌঁছে দিব। সেই সময় আমরা সেøাগান তুলেছিলাম, কৃষক বাঁচাও দেশ বাঁচাও। কৃষকদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছিল খালেদা জিয়া সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া এবং তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়া। সেই জন্য ভোট ও ভাতের অধিকার আন্দোলন আমরা শুরু করি।
তিনি বলেন, আমরা সরকার গঠন করার পরপরই কৃষিকে সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছি। জাতির পিতার নির্দেশিত পথেই আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করি। সেই ’৯৮ সালে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। পার্লামেন্টে আমরা যখন ঘোষণা দেই যে, বাংলাদেশ গতকাল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিএনপি থেকে তখন প্রতিবাদ করে। এ সময় ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে কৃষির উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কথাই ছিল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। কেন? বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ সারাজীবন বাংলাদেশ অন্যের কাছে হাত পেতে চলবে, ভিক্ষা করে চলবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা কথা বলতেন, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। আমরা ভিক্ষুক হবো না। আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে। আমরা ফসল ফলাবো। নিজের পায়ে দাঁড়াবো, নিজের খাবার নিজে জোগাড় করবো। আমাদেরও সেই নীতি। ওদের নীতি ছিল কিছুটা ভিন্ন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ব্যাপক বরাদ্দ দিচ্ছি। এখন তো করোনা ভাইরাসের যুগ। মাত্র ১০ টাকায় একজন কৃষক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। সেই সাথে কৃষি উপকরণের যে টাকা সেটা তাদের কাছে সরাসরি যাতে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যায় সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করেছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কৃষকদের সব থেকে বেশি মর্যাদা দেয়। শুধু তাই না আমরা বর্গাচাষীদের বঞ্চিত করিনি। বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের আমরা ঋণ দেয়া শুরু করি। তার উদ্দেশ্য ছিল তারা যেন সর্বশক্তি নিয়োগ করতে পারে উৎপাদনে। আমাদের মাটি এত উর্বর যে, একটু গবেষণা করলে যে কোনও ফসল উৎপাদন করা যায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। আরো বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।