গাফিলতি জেনেও শর্তে মেয়াদ বাড়লো কেএনএসডিএস প্রকল্পের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৭ এএম, ৩ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:০৭ পিএম, ১৪ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র একদিন আগে ফের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন শর্তসাপেক্ষে মঞ্জুর করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। লালমনিরহাটের করিমপুর নুরজাহান সামসুন্নাহার মা ও শিশু বিশেষায়িত হাসপাতাল (কেএনএসডিএস) প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে ছয় শর্তে আরও এক বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে ৪ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিলো চলতি বছরের জুন মাসে। তবে ছয় শর্তে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
একইসঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ধীরগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এর আগে গত ২৯ আগস্ট আইএমইডির এক প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, ছয় শর্তাবলির আলোকে প্রকল্পের সময় বৃদ্ধিতে সম্মতি জ্ঞাপন করা হয়েছে।
শর্তগুলোর মধ্যে বলা হয়েছে- প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হলেও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) সংস্থানকৃত পাঁচ তলা হাসপাতাল ভবনের পূর্ত কাজের তৃতীয় তলার ফ্লোর পর্যন্ত প্রস্তুত হয়েছে। বাস্তবায়নাধীন সংস্থা প্রকল্পের এ রূপ ধীরগতির কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। পূর্ত কাজের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী পূর্ত ও নির্মাণকাজ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা। পূর্ত ও নির্মাণকাজ চুক্তিপত্র মোতাবেক অনেক পিছিয়ে থাকার কারণে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (পিপিআর) ২০০৮ এর আলোকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ডিপিপি’র সংস্থান অনুযায়ী হাসপাতালের জন্য মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি এবং মেডিক্যাল ও অফিস আসবাবপত্র বর্ধিত সময়সীমার মধ্যে সংগ্রহ ও স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।
ওই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, পরিকল্পনা শৃঙ্খলা মোতাবেক মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রেরণ করতে হয় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত: তিন মাস আগে। এ ক্ষেত্রে মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র এক দিন আগে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষের এ জাতীয় গাফিলতির কারণে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য যেমন: নবজাতক শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন ইত্যাদি সেবা গ্রহণ থেকে এলাকার জনসাধারণ বিশেষ করে দুঃস্থ, অবহেলিত এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করে উদ্যোগী মন্ত্রণালয়কে আবশ্যিকভাবে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের সকল কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করে প্রকল্পভুক্ত হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে যেন, নির্মাণ ও পূর্ত কাজের গুণগত মান অক্ষুণ্ন থাকে এবং মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি, মেডিক্যাল আসবাবপত্র সঠিক স্পেসিফিকেশন মোতাবেক ক্রয় ও স্থাপন হয়। প্রকল্পের অর্থ ব্যয় সংক্রান্ত অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করে তার ফলাফল সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে অবহিত করতে হবে। আর এসবের ভিত্তিতে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা আগামী ২১ দিনের মধ্যে আইএমইডিকে জানাতে হবে।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, চলমান ১ হাজার ৪২৬টি প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ৬৭৮টির মেয়াদ গত জুন মাসে শেষ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩০০টির বেশি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে। তবে হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ প্রকল্প কর্তৃপক্ষই এ আবেদন নির্ধারিত সময়ে করেনি।