এলজিইডি’র প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫২ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৪৬ পিএম, ৮ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
এলজিইডি’র প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। রাঙ্গামাটি স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্মকর্তারা এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা ও মায়াধর চাকমার কাজ পাইয়ে দিতে ২ ঠিকাদারের যোগসাজশে কর্তৃপক্ষ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
অনিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে- টেন্ডার মেন্যুপুলেটের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠ মুষ্টিমেয় কয়েকজন ঠিকাদারের ভিন্ন ভিন্ন নাম ভাঙিয়ে একচেটিয়া টেন্ডারের বড় বড় কাজগুলো প্রদান করা, জয়েন্ট ভ্যানচার দেখিয়ে একই ব্যক্তিকে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ প্রদান, আয়কর ফাঁকি দেয়ার জন্য ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যবহার, প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ সময়মতো শেষ করতে না পারা, প্রকল্পের প্রাক্কলন তৈরির সময় কাল্পনিকভাবে সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনৈতিক লেনদেনের কারণে ইচ্ছামাফিক কাজের ধীরগতিকরণ, রাস্তার কাজে বালুর পরিবর্তে মাটি ব্যবহারসহ নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, রাস্তা নির্মাণকাজে প্রাকৃতিকভাবে কিংবা বর্ষার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে এক কাজ বারবার করার মাধ্যমে প্রকল্পের প্রাক্কলন রিভাইজ করানো এবং প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো ইত্যাদি।
রাঙ্গামাটি এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের মোট ৩৩ কোটি টাকার প্রকল্পটির টেন্ডার আহ্বান করা হয় গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম দিকে এবং এরপর কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল ঐ বছরের আগস্ট মাসে। মূলত এই রাস্তাটি প্রশস্তকরণ করা, ৩টি সø্যাব ব্রিজ নির্মাণ, পাহাড় ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্ট স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক আরসিসি রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ, সসার ড্রে এল ও ইউ ড্রেন নির্মাণ ও কংক্রিট সেøাপ প্রটেকশন করা রয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো রাস্তাটি বিভিন্ন পয়েন্ট কংক্রিট স্লোপ প্রটেকশন উঠে গিয়ে রাস্তাটি সংকীর্ণ হয়ে বড় বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে রাস্তাটি চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে প্রতিদিন ঘুরতে আসা শত শত পর্যটক এই রাস্তায় প্রবেশের পর ফিরে যেতে হচ্ছে উল্টো পথে।
দেখা গেছে, মাত্র কয়েকটি রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে গত এক বছরে। বর্তমানে শুধুমাত্র ৩টি স্ল্যাব ব্রিজের পাইলিংয়ের কাজ কারা হচ্ছে। রাস্তার উভয় পাশে প্রশস্তকরণের যে কাজ করা হয়েছে তাও চলমান বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে-মুছে গিয়ে খান-খান হয়ে গেছে। জানা গেছে, কর্তপক্ষের উদাসীনতা ও ঠিকাদার কর্তৃক ঠিক সময়ে কাজ না করার কারণে রাস্তাটির আজ এই অবস্থা।
এছাড়া যদিও ওয়ার্ক ওর্ডারে জয়েন্ট ভ্যানচার দেখানো হয়েছে কিন্তু কাজটি মূলত দেয়া হয়েছে একজনকে। ঠিকাদারি এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা, মায়াধর চাকমা ও রাঙ্গামাটি ট্রেডার্স এই তিন ঠিকাদারি ফার্মের নাম দেখানো হলেও স্থানীয় ঠিকাদার ‘রাঙ্গামাটি ট্রেডার্স’-এর মালিক আবুল হাসেমকে এই কাজটি দেয়া হয়। এখানে দুটি উপজাতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে আবুল হাসেমের বিরুদ্ধে, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত করলে এ অনিয়মের প্রকৃত সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, এই ঠিকাদার আবুল হাসেম এলজিইডি ছাড়াও রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগে অনেক বড় বড় কাজ হাতে নেয়ায় কোন দিকের কোন কাজ বেশি হওয়ার কারণে এসব বড় বড় কাজের পিছনে পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারছে না বলে কাজের ‘ধীরগতি’ বা বিলম্বকরণ সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কার্যাদেশ প্রদানের পর গত এক বছর পার হয়ে গেলেও এ সড়কের মোট কাজের এক-তৃতীয়াংশ কাজেও এখনও শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার। পুরো রাস্তারটির নির্মাণকাজ হ-য-ব-র-ল অবস্থায় ফেলে রাখার কারণে এই রাস্তা দিয়ে এখন স্থানীয় জনসাধারণ চলাচল করতে পারছে না। এছাড়া পুরো রাস্তাজুড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যুরিস্ট স্পট গড়ে ওঠার কারণে পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও হটস্পট হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে এ সড়কটি। এই রাস্তায় কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় এবং যান চলাচলের বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে আশা শত শত পর্যটক কাপ্তাই হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে স্থানীয় ট্যুরিজম শিল্পের ছোট ছোট উদ্যোক্তা যারা রয়েছেন তাদের প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকার লোকসান।
জানা যায়, কার্যাদেশের সময় থেকে প্রকল্পের মেয়াদ ছিল এক বছর। কিন্তু ইতিমধ্যে গেল আগস্টে সেই এক বছর পার হয়ে গেছে। এরপরও কাজের তেমন দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। বরং কিছুদিন পূর্বে প্রকল্পের মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এতেও প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পারবে না রাঙ্গামাটি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. তাসিউর রহমান বলেন, আঠার কিলোমিটার রাস্তার কাজ এক বছরে শেষ করা সম্ভব নয়। তাই দ্বিতীয়বারের মতো আরো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে বলে জানান তিনি।
রান্যা টুগুন ইকো রিসোর্টের মালিক ললিত সি চাকমা বলেন, রাস্তার কাজ দীর্ঘসূত্রতার কারণে এবং রাস্তা বন্ধ থাকায় পর্যটদের চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে এবং পর্যটন ব্যবসায় আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা প্রকৌশলী রনি রাহার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, করোনাকালে কিছুটা কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। তবে বর্তমানে কাজ পুরোদমে চলছে এবং আগামী জুনের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে বলে জানান।