৮ মাসে ৮১৩ নারী ধর্ষণের শিকার, ১১২ শিশু যৌন হয়রানির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২০ এএম, ১ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৫৫ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৪
গত আট মাসে ৮১৩ নারী ধর্ষণ ও ১১২ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। আর অপহরণ ও পাচার হয়েছে ১৪০ জন।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উপস্থাপনকালে ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি এসব তথ্য জানান। তিনি জাতীয় ও স্থানীয় ২৪টি সংবাদমাধ্যমে আসা নির্যাতনের প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
নাছিমা আক্তার উল্লেখ করেন, ২০১৬-২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ২৬ হাজার ৬৯৫টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। প্রতি বছর এ মামলার পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে এক হাজার ২৫৩ জন কন্যাশিশু। প্রতিবেদনে যৌতুক, গৃহকর্মী নির্যাতন, আত্মহত্যা ও হত্যাসহ নানা নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়।
শিশুকন্যাদের প্রতি নির্যাতন রোধে ১০ সুপারিশ : একটি সুস্থ, সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কন্যাশিশুদের অধিকার, তাদের শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণসহ নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে এবং শিশুকন্যাদের প্রতি নির্যাতন রোধে ১০টি সুপারিশ করে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।
সাংবাদ সম্বেলনে সংগঠনটির সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি প্রতিবেদন উপস্থাপনা করে উল্লেখ করেন, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশের থানাগুলোতে ২৬ হাজার ৬৯৫টি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ৪ হাজার ৩৩১টি, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৬৮৩টি, ২০১৮ সালে ৪ হাজার ৬৯৫টি, ২০১৯ সালে ৬ হাজার ৭৬৬টি ও ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৬ হাজার ২২০টি মামলা দায়ের করা হয়। প্রতি বছর এই মামলার পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলছে।
তিনি আরো জানিয়েছেন, চলতি বছর জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত ২৪টি দৈনিক পত্রিকা থেকে কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতনের চিত্র সংগ্রহ করে ১৩টি ক্যাটাগরির আওতায় ৫৬টি সাব ক্যাটাগরিতে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একইসাথে আমরা দেখার চেষ্টা করেছি কন্যাশিশুদের প্রতি এ সকল নির্যাতন ও সহিংসতার বিপরীতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কন্যাশিশুদের প্রতি বিভিন্ন মাত্রায় যে ধরনের নির্যাতন দেখা যায় তা হলো যৌন হয়রানি ও নির্যাতন, এসিডের আক্রমণের শিকার; অপহরণ ও পাচারের শিকার; বাল্যবিবাহ; যৌতুক; ধর্ষণ; গৃহশ্রমিক নির্যাতন; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক কন্যাশিশু নির্যাতন; আত্মহত্যা; হত্যা ও পরিত্যক্ত কন্যাশিশু।
অনুষ্ঠানে জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার সঞ্চালকের বক্তব্যে বলেন, রাজনৈতিক নানা কারণে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা আমাদের দেশে এক নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সব ক্ষেত্রেই দলীয়করণ হয়ে গেছে। এটার একটা মাশুল আমরা দিচ্ছি। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। শিশুকন্যাদের প্রতি নির্যাতন রোধে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম থেকে ১০টি সুপারিশ দেয়া হয়, তা হলো -
১. শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সকল ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
২. উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে সর্বস্তরের জন্য ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ নামে একটি আইন জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ন করতে হবে।
৩. কারো হেফাজতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে, ঘটনার শিকার নারী ও কন্যার পরিবর্তে তাকে প্রমাণ করতে হবে যে, সে এ ঘটনা ঘটায়নি, এ সম্পর্কিত প্রচলিত আইনের বিধান সংশোধন করতে হবে।
৪. শিশুদের ডিভাইস নির্ভরতায়, তাদের বিপথগামিতা থেকে বাঁচাতে এবং সঠিক পথে পরিচালনার জন্য উচ্চ পর্যায়ের আইসিটি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় সব ধরনের পর্নোগ্রাফিক সাইট বন্ধ ও একইসাথে পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া বন্ধ করতে হবে।
৬. শিশু সুরক্ষায় শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদফতর গঠন করতে হবে।
৭. বাল্যবিবাহ রোধে সোশ্যাল সেফটিনেটের বাজেট বৃদ্ধি করে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কন্যাশিশু ও তাদের অভিভাবকদের তার আওতায় আনতে হবে।
৮. বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।
৯. ক্রমবর্ধমান কন্যাশিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারী-পুরুষ, সরকার, প্রশাসন, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, পরিবার সকলের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
১০. কন্যাশিশু ও নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতারোধে তরুণ-যুবসমাজকে সচেতনকরণ সাপেক্ষে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন একশন এইড বাংলাদেশের চাইল্ড স্পন্সরশীপ ম্যানেজার মনিকা বিশ্বাস, এডুকো বাংলাদেশের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রাম ফারজানা খান।