বিলম্ব হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জটিল হয়ে পড়বে - পররাষ্ট্র সচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৪ এএম, ১২ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:০২ পিএম, ৩ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের পরও মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপত্তা, মর্যাদা ও জীবিকার নিশ্চয়তা নিয়ে রাখাইনে ফিরে যেতে চান। ফলে তাদের ফিরে যাওয়ার পথটা দ্রুত সুগম করতে হবে। যত দেরি হবে, প্রত্যাবাসন ততটাই জটিল হয়ে পড়বে। গত রোববার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার পর কক্সবাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে এ অভিমত দিয়েছেন। তিনি শুক্র ও শনিবার কক্সবাজার গিয়ে মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি অন্য রোহিঙ্গার সঙ্গেও কথা বলেন। এছাড়া তিনি সরকারি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে জানা-বোঝার চেষ্টা করেন। মূলত কক্সবাজারের পরিস্থিতি মূল্যায়নের ভিত্তিতে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রত্যাবাসনের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ এবং ভাসানচরে অবশিষ্ট ৮১ হাজার রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেয়ার আগে তিনি সেখানে যান।
পররাষ্ট্র সচিব তার দপ্তরে বলেন, ‘মুহিবুল্লাহ হত্যার মতো বিয়োগান্ত ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। মুহিবুল্লাহর পরিবার, তার স্বজন এবং সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। শিবিরের ভেতরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শিবিরের লোকজন ভয়ও পেয়েছেন।’ মুহিবুল্লাহর হত্যাকান্ড প্রত্যাবাসনে বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কি না, জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ফিরে যাওয়ার পথটা যদি দ্রুত সুগম করে দিতে পারি, তবে তাদের এখনো ফেরত পাঠানো যেতে পারে বলে মনে করি। তার (মুহিবুল্লাহ) মৃত্যু যে প্রত্যাবাসনে বড় বাধা হয়ে গেল, সেটা বোধ হয় না। লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তারা আদিনিবাসে ফিরে যেতে আগ্রহী। কক্সবাজারের অপরাধীসহ যেসব স্বার্থান্বেষী মহল, তারা নিজেদের আরসা বলতে চায়। আসলে তারা দুষ্কৃতকারী। রাজনৈতিক ও আদর্শিক কোনো ভিত্তি নেই বললেই চলে। যতই দিন যাবে, প্রত্যাবাসনটা জটিল হয়ে যাবে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আজ যারা এখানে জন্মাচ্ছে, তারা তো মিয়ানমার সম্পর্কে জানে না। সুতরাং এই জনগোষ্ঠীটা রাখাইনের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যায় পড়বে। কিছু লোক দিয়ে হলেও যাতে শুরু করা যায়, সেটা করতে হবে। ১০ বা ১১ লাখকে অল্প সময়ের মধ্যে পাঠানো যাবে তা কিন্তু নয়। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন জানান, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে সমন্বয় আরও বাড়ানো দরকার। নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর আরও সজাগ দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। এ জন্য রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের পরের বৈঠকটি কক্সবাজারে করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে করে বৈঠকে পরপরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায়। মাসুদ বিন মোমেন জানান, আরও ৮১ হাজার রোহিঙ্গাকে নভেম্বর থেকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হবে। যারা সেখান থেকে পালিয়ে আসছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে হবে কেন তারা সেখান থেকে চলে আসছেন। আর জাতিসংঘ ভাসানচরে যাওয়ার পর সেখানকার মানবিক সহায়তা কর্মকান্ডে সেবার মান বাড়বে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ায় মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন গতকাল দুপুরে নোয়াখালীর দ্বীপটিতে আনন্দ মিছিল করেছেন। ভাসানচরে কাজ করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে গত শনিবার একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
ভাসানচরে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল দুপুরে হাজারখানেক রোহিঙ্গা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে আনন্দ মিছিল করেন। এ সময় তারা জাতিসংঘের ভাসানচরে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের চাপ কমাতে সরকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেয়ার জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরকে তাদের বসবাসের উপযোগী করে তৈরি করে। তবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার বিরোধিতা করে। এমনকি গত বছরের ৪ ডিসেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে সরিয়ে নেয়ার ঠিক আগের দিন একটি বিবৃতি দিয়ে এর বিরোধিতা করা হয়। সরকার এ পর্যন্ত ছয় দফায় ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে শিশু, নারী ও পুরুষের সংখ্যা যথাক্রমে ৮ হাজার ৭৯০, ৫ হাজার ৩১৯ ও ৪ হাজার ৪০৯।