ক্যামেরা থাকলে ব্যালটে কারচুপি ধরা বেশি সহজ : সাখাওয়াত হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০৩ পিএম, ১৯ অক্টোবর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৫০ এএম, ১৩ অক্টোবর,রবিবার,২০২৪
ইভিএম নিয়ে দেশে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তাই ইভিএমের চেয়ে সিসিটিভিতে জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ১৫০ ইভিএম যে বাজেটে কিনবেন, তার চেয়ে ভালো হবে যতটুকু পারেন সিসিটিভি লাগান। এছাড়া পেপার ব্যালটে ভোট চুরি করলেও সহজে ধরা যায়।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাবেক এই ইসি এসব কথা বলেন। গাইবান্ধার নির্বাচন নিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন গাইবান্ধায় যে অ্যাকশন নিয়েছে, এটাকে স্বাগত জানাই। পরের ধাপগুলোতেও যেন একই অবস্থান থাকে। নইলে জাতি লোক দেখানো মনে করবে। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে না তাহলে ভোট বন্ধ করতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবেশ ঠিক না হয়।
সংবিধানের ১১৯ এ বলে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে। গাইবান্ধায় যেটা হয়েছে, আগে কোনো কমিশনার এই কাজটি করতে পারেনি। ১৯৯৪ এ যদি এই কাজটা করতে পারতো। তাহলে রাজনৈতিক মাঠ অন্য রকম হতো। নির্বাচনী কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে জানিয়ে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আপনাদের নির্বাচনী কর্মকর্তা- কর্মচারী যাদের নিয়ে নির্বাচন করবেন, আগে তাদের আত্মবিশ্বাসী করতে হবে। যাতে তারা মনে করে আপনারা জাতীয় নির্বাচনে তাদের সুরক্ষা দিবেন। বরিশালে যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, ইসির উচিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সমর্থন দেয়া। এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এনআইডি কেন নিতে চাইছে জানি না। এতে ভবিষ্যতে ভোটার তালিকা নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে। সরকারকে বোঝালে তো বোঝে। কারণ এই সরকারের আমলে আমরা ভোটার তালিকা করেছি।
ইভিএম কেনার পরিবর্তে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ দিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পেপার ব্যালটে ভোট যদি চুরিও করে, ভেরি ইজি টু ফাইন্ড আউট। আমি বলেছি একটি বড় জেলায় ১৪-১৬টি নির্বাচনী এলাকা। এখন যে অবস্থা, ১০ কোটি ভোটার। এখানে একজন রিটার্নিং অফিসার দিয়ে কাজ হবে না। আইনে কোথাও বলা নেই একজনই রিটার্নিং অফিসার হতে হবে। সেই জায়গায় নিজস্ব অফিসার...যেন নিয়ন্ত্রণ আপনাদের হাতে থাকে। যদিও আমার কথায় অনেকে রাজি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এনআইডি সরকার কেন নিতে চাচ্ছে সেটা পরিষ্কার হয়নি। এটা যদি আলাদা হয়ে যায় তাহলে কোনো এক সময় ভবিষ্যতে ভোটার তালিকা নিয়ে কথা উঠবে। কারটা ঠিক, এনআইডি নাকি ভোটার তালিকা! কাল একজন গিয়ে বলবে আমার বয়স ৩০ না, ভুল করে লিখেছে। আমার বয়স ১৯ বছর। করে ফেলল, ভোটার তালিকায় কী হবে? নাম পরিবর্তন হয়ে গেল। আল্টিমেটলি এটা নিয়ে একটা গন্ডগোল হবে। আমি বলেছি, এই জায়গায় সরকারকে বোঝাতে হবে। সরকার বুঝবে, কারণ এই সরকারের আমলেই তো আমরা ভোটার তালিকা তৈরি করেছিলাম। এনআইডি সরকার কেন নিতে চাচ্ছে সেটার যৌক্তিক কারণ পাওয়া যায়নি।
ইভিএমের পরিবর্তে সিসিটিভি ক্যামেরা কেনা উচিত মত দিয়ে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে বির্তক আছে। কমিশন ১৫০ ইভিএম যে বাজেটে কিনবে, তার চেয়ে ভালো যতখানি পারে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করুক। এটা রেকর্ডেড থাকবে। আর পেপার ব্যালটে ভোট যদি চুরিও করে, ভেরি ইজি টু ফাইন্ড আউট। কমিশনকে বলেছি, এখন আপনাদের কাছে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা আছে, সই আছে, সব কিছু ম্যাচ করা যায়। সূক্ষ কারচুপি আপনারা যেটা দেখলেন, ইভিএমে—বাইরে অ্যাবসুলুটলি ফার্স্ট ক্লাস, কোনো ঝামেলা নেই, হৈচৈ নেই, কিচ্ছু নেই, ভেতরে কী হচ্ছে! অন্য সিস্টেমে যেটা হবে বাইরেও হৈচৈ হবে। একা তো পারবে না, বুথ ক্যাপচার করতে ৫-৬ জন লোক লাগবে। তাহলে প্রতিপক্ষ হৈচৈ তো করবে। সেটা আপনারা আরও ভালো করে দেখতে পারবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ না; কে থাকল কে থাকল না, কী সিস্টেমে সরকার চলছে। নির্বাচন কমিশন শপথ নিয়েছে সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হবে। আমি বলেছি, আপনাদের চিন্তা করতে হবে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে। কী কী ব্যবস্থা নিলে করতে পারবেন। এখানে বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ নেই। আমাদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন কোনো কথা বলেনি। কী বলবে আমি জানি না। আমি বলেছি, আপনাদের কোনো সংকট নেই। সংবিধান যা বলছে, আপনারা ঠিক তাই করছেনবলেন সাখাওয়াত।