আইএমএফের ঋণ পেতে আরও শর্ত বাস্তবায়ন করছে সরকার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:৪৫ পিএম, ৫ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০৮ এএম, ৬ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ডলারের সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) আরও কিছু শর্ত মানতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি থাকছে। বেসরকারি খাতে জ্বালানি আমদানির অনুমোদন, খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টিও এতে আছে। এছাড়া জ্বালানি পণ্যসহ আমদানি পণ্যের দাম ব্যবহারভিত্তিক করা এবং কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। এসব শর্ত বাস্তবায়নের ব্যাপারে ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ব্যাংক খাতে আইএমএফ বড় আকারের সংস্কারের শর্ত দিয়েছে। তবে সরকার থেকে এখনই এ ব্যাপারে বড় কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। তবে সীমিত পর্যায়ের সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈশ্বিক মন্দা ও দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে দুটি খাতে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে। এ ঋণের ব্যাপারে আলোচনা করতে ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর আইএমএফের মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে। ওই সময়ে তারা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে বেশকিছু শর্ত আরোপ করেছে। এর মধ্যে বেশকিছু শর্ত সরকার ঋণের আলোচনা শুরুর আগেই বাস্তবায়ন করেছে। কেননা আইএমএফের ঋণের প্রধান শর্তই হচ্ছে ভর্তুকি কমানো। ভর্তুকি কমাতে সরকার গত আগস্টেই জ্বালানি তেল, গ্যাস ও সারের দাম বাড়িয়েছে। আইএমএফের সঙ্গে ঋণ আলোচনা শুরু হলে আবার তারা এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে। কিন্তু সরকারপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এগুলোর দাম একদফা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এখন আর বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে আইএমএফ বিদ্যুতের দাম বাড়াতেও বলেছিল। এর অংশ হিসাবে ইতিমধ্যে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন খুচরা বা ভোক্তা পর্যায়ে বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। ১২ শতাংশ দাম বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। এটি বাড়ানো হলে আইএমএফের বড় একটি শর্ত বাস্তবায়ন হবে। সংস্থাটির আরও একটি শর্ত ছিল জ্বালানি পণ্য আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে দেয়া। বর্তমানে জ্বালানির বড় অংশই সরকার আমদানি করে। সীমিত পর্যায়ে কিছু এলএনজি বেসরকারি খাতে আমদানি হয়। আইএমএফ চাচ্ছে, জ্বালানি পণ্যের মধ্যে জ্বালানি তেল, গ্যাস বেসরকারি খাতেও আমদানির সুযোগ দেয়া হোক। এসব বিষয়েও সরকার থেকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে একটি নীতি করে বেসরকারি খাতে জ্বালানি পণ্য উন্মুক্ত করা হবে। আইএমএফ শর্ত অনুযায়ী আমদানি পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়েও একটি নীতিমালা করা হবে। কোন জ্বালানির দাম কত বাড়লে দেশের বাজারে কোন খাতে এর কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। এ বিষয়ে ভারতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আইএমএফ দীর্ঘদিন ধরে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার চাপ দিয়ে আসছে। ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলেও তা ছিল নিয়ন্ত্রিত। পুরোপুরি কখনোই ছেড়ে দেয়া হয়নি। এবারের আলোচনায় আইএমএফ এ হার বাজারের ওপর পুরোপুরি ছেড়ে দেয়ার শর্ত দেয়। এর অংশ হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আন্তঃব্যাংকের বাজার দর প্রকাশ করা হচ্ছে। এতে দেখা যায় ডলারের দাম বেশ ওঠানামা করছে। ১০১ থেকে ১০৭ টাকার মধ্যে তা ওঠানামা করছে। এত ব্যাংকের ডলার কেনার খরচ সমন্বয় করতে বিভিন্ন খাতে ডলারের দাম বিভিন্ন। এটি সমন্বয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। কর জিডিপির অনুপাত বাংলাদেশে এখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন ৯ শতাংশ। এটি বাড়িয়ে ১৪ শতাংশে নিয়ে যেতে আইএমএফ চাপ দিচ্ছে। এটি করতে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে আইএমএফকে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে কাজ চলছে। ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের ব্যাপারে আইএমএফসহ দেশের ভেতর থেকেও চাপ আছে। সংস্কারের অভাবেই ব্যাংক খাতের দুর্বলতা প্রকট হচ্ছে। ব্যাংক খাতে সীমিত পরিসরে সংস্কারের কিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। তবে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার এখনই শুরু করছে না সরকার। কৃষি উপকরণের মধ্যে সার আমদানির প্রায় পুরোটাই সরকারের হাতে। এটিও বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। এ খাতে কিছু সার বেসরকারি খাতে আমদানির সুযোগ দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। তবে এ খাতে ভর্তুকি কীভাবে দেয়া হবে, এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা করা হবে।