দুই লাখ টাকায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেলেন আরসা নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২২ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:১০ পিএম, ১১ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৪
দুই লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেয়েছেন মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) নেতা মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ। এর জন্য তাকে যেতে হয়নি পাসপোর্ট অফিসে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা আসাদুল্লাহ। গত ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সৌদি আরবের জেদ্দায় পালিয়ে যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিবি-উত্তর) নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ যাওয়ার সময় আসাদুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গাকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে তাকে উখিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। তিনি উখিয়া ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকতেন। তার বিরুদ্ধে গত ৯ জানুয়ারি উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। তিনি ওই মামলার সন্দেহভাজন আসামি। তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ওমরা ভিসায় সৌদি আরবের জেদ্দায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। জেদ্দায় তার বড় ভাই রয়েছে। তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। কিভাবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার হাতে এসেছে সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতার আসাদুল্লাহ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট পেয়েছিলেন। গত বছরের ২৭ নভেম্বর তার নামে বাংলাদেশি এ পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, দুই লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেয়েছেন আসাদুল্লাহ। এমনকি পাসপোর্ট করতে অফিসেও যেতে হয়নি তাকে। অফিসে না গিয়ে কীভাবে কার মাধ্যমে আসাদুল্লাহ পাসপোর্ট পেয়েছে আমরা তা তদন্ত করে দেখছি।
সিএমপির গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, নগরের পাঁচলাইশ আঞ্চলিক অফিসে আবেদন করে পাসপোর্ট পেয়েছিলেন তিনি। এর আগে, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর তার নামে ইস্যু করা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। জাতীয় পরিচয়পত্রে চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার ঠিকানা ব্যবহার। তিনি ই-পাসপোর্ট পেয়েছিলেন ১০ বছর মেয়াদী। এ পাসপোর্টের মেয়াদ ২০৩২ সালের নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক আবু সাইদ বলেন, ‘তার নামে আগে থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ (এনআইডি) অন্যান্য সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছিল বলে শুনেছি। পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে তিনি আবেদন করতেই পারেন। যেসব সার্টিফিকেট পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়, সেগুলো রোহিঙ্গাদের কাছে থাকার কথা নয়। অফিসে না এসে পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়টি আমার মনে হয় সত্য নয়। কেননা অফিসে না এলে ছবি তুলেছেন কীভাবে। পাসপোর্টে যে ছবি আছে সেটি তার নাকি অন্য কারও- এসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হবে। চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক তারিক সালমান বলেন, ‘আমি গত চার মাস আগে পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যোগদান করেছি। কীভাবে রোহিঙ্গা হয়েও আসাদুল্লাহ নামের ব্যক্তি পাসপোর্ট পেয়েছে তা আমার জানা নেই। তার আগে পাসপোর্ট ছিল না। এনআইডিসহ যাবতীয় কাগজপত্র দিয়ে তিনি আবেদন করেন।
তিনি আরও বলেন, অফিসে না এসে পাসপোর্ট পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। পাসপোর্টের জন্য অফিসেই আবেদনকারীর ছবি তোলা হয়। তার চোখের আইরিশ নেয়া হয়। দুই হাতের আঙুলের ফিঙ্গার নেয়া হয়। এরপর পুলিশের বিশেষ শাখায় তার ফাইল পাঠানো হয়। পুলিশ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন পাঠানোর পর তার পাসপোর্ট প্রিন্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।