কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, ১৪ আসামির মৃত্যুদণ্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২৬ পিএম, ২৩ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১২:২৭ পিএম, ৫ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ২০০০ সালে ৭৬ কেজি বোমা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলার ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) রায় ঘোষণা করেন ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জমান।
মামলার আসামিরা হলো মো. আজিজুল হক ওরফে শাহনেওয়াজ, মো. লোকমান, মো. ইউসুফ ওরফে মোছহাব মোড়ল, মোছহাব হাসান ওরফে রাশু, শেখ মো. এনামুল হক, মো. মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ, মো. মাহমুদ আজহার ওরফে মামুনুর রশিদ, মো. রাশেদুজ্জামান ওরফে শিমুল, মো. তারেক, মো. ওয়াদুদ শেখ ওরফে গাজী খান, মো. আনিসুল ইসলাম ও সারোয়ার হোসেন মিয়া, মাওলানা আমিরুল ইসলাম ওরফে জেন্নাত মুন্সী ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। আসামিদের মধ্যে শেষের দুজন জামিনে রয়েছে।
রায় ঘোষণার আগে আজ কারাগারে থাকা নয়জন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত ও তার আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এই ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়েছিল। তার মধ্যে দুটি মামলার রায় বিচারিক আদালতে আগেই হয়। আজ অপর মামলাটির রায় হলো।
গত ১১ মার্চ মামলাটির যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য তারিখ ধার্য করা হয়। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা হয়।
মামলায় ৫০ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করা হয় বলে গতকাল জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া।
একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ১০ আসামিকে গুলিতে মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন এবং অন্য তিন আসামির ১৪ বছর করে কারাদণ্ডের রায় দেন ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
মামলার প্রধান আসামি ছিলেন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান। তবে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যাচেষ্টা মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে সমাবেশ করার কথা ছিল শেখ হাসিনার। সমাবেশের প্যান্ডেল তৈরির সময় ২০ জুলাই ওই কলেজের পাশ থেকে ৭৬ কেজি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ওইদিনই কোটালীপাড়া থানার এসআই নূর হোসেন একটি মামলা করেন।
সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল এ মামলায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
পরবর্তী সময়ে রমনা বটমূলে বোমা হামলার মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান স্বীকারোক্তি করে, সে নিজে এবং অন্য আসামিরা এসব ঘটনায় জড়িত। তাই সিআইডি পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম মামলা দুটিতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটে মুফতি হান্নানসহ মোট ২৫ জনকে আসামি করা হয়।
চার্জশিটে বলা হয়, মুফতি আবদুল হান্নান আফগানিস্তানে মুজাহিদ ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং সেখানে তিনি তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করেন। দেশে ফিরে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশি নামক সংগঠনের সদস্য হন।
তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য গোপালগঞ্জে বিসিক এলাকায় অবৈধভাবে সোনার বাংলা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি সাবানের কারখানা স্থাপন করেন। ওই কারখানায় আসামিদের নিয়োগ এবং থাকার ব্যবস্থা করেন তিনি।
সাবান তৈরির কাঁচামাল আনার আড়ালে আসামি মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীরা কারখানায় এনে রাখতেন বোমা তৈরির উপকরণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আসার কথা শুনে মুফতি হান্নানসহ আসামিরা ওই সাবান কারখানায় তৈরি করেন ৭৬ কেজি ওজনের শক্তিশালী বোমা।
২০০০ সালের ১৯ জুলাই সেটি গাড়িতে করে কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে জনসভাস্থলের পাশের দোকানঘরের সামনে মাটির নিচে রাতের আঁধারে পুঁতে রাখে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সফরসঙ্গী মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের এবং জনগণের জীবন ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধনের জন্য আসামিরা এটি করেন।