প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা মামলায় ফায়ারিং স্কোয়াডে ১৪ আসামির মৃত্যুদন্ড কার্যকরের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২০ এএম, ২৪ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ১০:২০ পিএম, ৪ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় হেলিকপ্টার অবতরণের স্থানে বোমা পুঁতে রাখার অভিযোগে করা মামলায় ১৪ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একটি ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যে প্রত্যেক আসামিকে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন বিচারক।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বিচারক বলেন, দন্ডবিধিরর ১২১/৩৪/১০৯ ধারায় অপরাধের জন্য আসামিদের মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হলো। একটি ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যে আসামিদের প্রত্যেকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হলো। আসামিদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে কর্তৃপক্ষের কোনো অসুবিধার কারণ থাকলে প্রচলিত নিয়ামানুসারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের প্রত্যেকরে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হলো। আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ১২১/৩৪/১০৯ ধারায় চরম দন্ড প্রদান করায় দন্ডবিধির ১২১ ক/২২২/১২৪ “ক” ধারা মতে কোনো দন্ড প্রদান করা হলো না।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মফিজুর রহমান, মাহমুদ আজহার, রাশেদুজ্জামান, তারেক হোসেন, আবদুল ওয়াদুদ মোল্লা, সারোয়ার হোসেন মোল্লা, আনিসুল ইসলাম, মাওলানা আমিরুল ইসলাম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, আজিজুল হক, লোকমান, ইউসুফ শেখ মো. এনামুল হক ও মোছাহেব হাসান। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করে গণতান্ত্রিক, বৈধ সরকার উৎখাত করার উদ্দেশ্যে কোটালিপাড়ার সভা মঞ্চে বোমা পুঁতে রাখা হয়। স্বাধীনতা বিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের পর থেকে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এমনকি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশকে ধ্বংস করে দেয়। সেই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর থেকে তাকেও হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। বারবার তাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। এজন্য যাতে হুজি, জেএমবি ও ইসলামি জঙ্গিরা এই ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি করতে না পারে। তাই তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০০ সালের ২১ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজের মাঠে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশ থেকে ৭৬ কেজি ওজনের একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনার পরদিনই সেখানে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল। এ ঘটনায় কোটালিপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক নূর হোসেন বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন। ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর তৎকালীন সিআইডির এএসপি আব্দুল কাহার আকন্দ মুফতি হান্নানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বিচার চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে আদালত মোট ৫০ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। হরকাতুল জিহাদের শীর্ষনেতা মুফতি আবদুল হান্নান এই মামলায় মূল আসামি ছিলেন। কিন্তু অন্য মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলার রায়ে তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে। দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মো. আজিজুল হক ওরফে শাহনেওয়াজ, মো. লোকমান, মো. ইউসুফ ওরফে মোছহাব মোড়ল, মোছহাব হাসান ওরফে রাশু, শেখ মো. এনামুল হক, মো. মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ, মো. মাহমুদ আজহার ওরফে মামুনুর রশিদ, মো. রাশেদুজ্জামান ওরফে শিমুল, মো. তারেক, মো. ওয়াদুদ শেখ ওরফে গাজী খান, মো. আনিসুল ইসলাম, সারোয়ার হোসেন মিয়া, মাওলানা আমিরুল ইসলাম ওরফে জেন্নাত মুন্সী ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। মামলার ১৪ আসামির মধ্যে মফিজুর রহমান, মাহমুদ আজহার, রাশেদুজ্জামান, তারেক হোসেন, আবদুল ওয়াদুদ মোল্লা, সারোয়ার হোসেন মোল্লা, আনিসুল ইসলাম, মাওলানা আমিরুল ইসলাম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম কারাগারে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন আজিজুল হক, লোকমান, ইউসুফ, শেখ মো. এনামুল হক, মোছাহেব হাসান।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ড পাওয়া ১০ আসামির সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। রায়ে যাবজ্জীবন দন্ডিত এক আসামি ও ১৪ বছর করে কারাদন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে একজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ জঙ্গির মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় দেন। এছাড়া চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়।