ছয় মাসেই গরিব হয়েছে ৭৯ লাখ মানুষ
করোনাকালে নতুন করে দরিদ্র ৩ কোটি ২৪ লাখ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৮ এএম, ৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:০৮ পিএম, ১০ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২৫
দেশে করোনাকালে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ। অর্থাৎ গত ছয় মাসে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৭৯ লাখ বেড়েছে। মূলত এ বছর করোনা সংক্রমণের কারণে গত এপ্রিল মাস থেকে দেয়া বিধিনিষেধের পর দরিদ্র হওয়ার হার বেড়ে যায়। সম্প্রতি ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক যৌথ জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘জীবিকা, খাপ খাইয়ে নেয়া ও উত্তরণে কোভিড-১৯-এর প্রভাব’ শীর্ষক জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়।
বিআইজিডি ও পিপিআরসি জানায়, করোনাকালে মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর প্রভাব নিয়ে চার দফায় তারা এই জরিপ করে। প্রথম দফায় জরিপ হয় গত বছরের এপ্রিল মাসে। এরপর সে বছরের জুন মাসে দ্বিতীয়, চলতি বছরের জুনে তৃতীয় এবং সর্বশেষ জরিপ হয় গত ২১ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্ববর পর্যন্ত। জরিপে অংশ নেয় ৪ হাজার ৮৭২টি পরিবার। এর মধ্যে শহরের ৫৪ শতাংশ, গ্রামের ৪৫ শতাংশ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার এক শতাংশ পরিবার ছিল।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর করোনাকালে দারিদ্র্যের কারণে দেশের ২৮ শতাংশ মানুষ শহর থেকে গ্রামে চলে গিয়েছিল। সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ১৮ শতাংশ মানুষ আবার শহরে ফিরে এসেছে। অর্থাৎ ১০ শতাংশ মানুষ এখনো শহরে ফিরতে পারেনি। পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এ বছর করোনার কারণে দ্বিতীয় দফার করোনা বিধিনিষেধ দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। নতুন দরিদ্রদের মধ্যে শহর থেকে গ্রামে চলে যাওয়া মানুষই বেশি। এসব মানুষের জন্য প্রচলিত ধারার দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি নেয়া যাবে না। নতুন দরিদ্র মানুষ হয়তো কারও কাছে সহায়তা চাইতে পারবে না; কিন্তু নতুন কাজের সন্ধান করবে। তাই নীতি-নির্ধারণী স্তরে এসব মানুষ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।
জরিপ প্রতিবেদনে বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন বলেন, আয়, বেকারত্ব, খাদ্যগ্রহণ ইত্যাদি খাতে গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, শহর অঞ্চলের মানুষের আয় কোভিড-পূর্ব সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। গ্রামাঞ্চলে এ আয় কমেছে ১২ শতাংশ। কোভিডের আগে শহরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৭ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপে এই বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ শতাংশে। গ্রামে বেকারত্ব কোভিডকালে বেড়ে গেছে ৪ শতাংশ। মানুষের খাদ্যের ক্ষেত্রেও ব্যয় কোভিডকালের তুলনায় কমে গেছে। শহরে খাদ্যে দরিদ্র মানুষের মাথাপিছু ব্যয় ছিল ৬৫ টাকা, এখন তা ৫৪ টাকা হয়েছে। গ্রামে ব্যয় ছিল ৬০ টাকা, এখন ৫৩ টাকা। অন্যদিকে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, শিক্ষা ও যোগাযোগ খাতে দরিদ্র মানুষের ব্যয় বেড়েছে। এ বছরের মার্চ মাসেও শহরের বস্তিবাসীর এসব খাতে জনপ্রতি ব্যয় ছিল ৯৩৬ টাকা, এখন তা আরও বেড়েছে। গ্রামে এ সংক্রান্ত ব্যয় ৬৪৭ টাকা থেকে বেড়ে ৭৭৭ টাকা হয়েছে। বাড়তি এই ব্যয় মেটাতে শহরের দরিদ্র এবং গ্রামের মানুষদের ধার করতে হচ্ছে। গ্রামে এই ধার নেয়া মানুষের হার ৬২ শতাংশ, শহরে ৬০ শতাংশ। দৈনন্দিন চলার জন্যই সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে দারিদ্র্য পরিস্থিতিও খুব নাজুক। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, করোনাকালে এই অঞ্চলে ৩৬ শতাংশ মানুষ নতুন করে বেকার হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশের অন্যান্য গ্রাম ও শহরের তুলনায় এটি অনেক বেশি। জরিপে গ্রাম-শহর-পার্বত্য এলাকার দরিদ্র মানুষের নানা বিষয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে আছে ঋণ ফেরত দেয়া, চাকরির অনিশ্চয়তা, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষার খরচ ইত্যাদি।