দেশজুড়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১২ পিএম, ১ জানুয়ারী,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৫৯ এএম, ৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ঋতুচক্রে প্রকৃতিতে শীতকাল এসেছে পক্ষকালের বেশি আগে। দেশবাসী শীতের তীব্রতা টের পেতে শুরু করেছে পৌষের মাঝে এসে। উত্তরাঞ্চল কাঁপছে শীতের দাপটে। রাজধানী ঢাকাতেও ক্রমশ জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। গতকালও কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল রাজধানী। সকাল থেকে ঘন কুয়াশার কারণে রাজধানীতে যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে।
আবহাওয়ার অধিদপ্তর বলছে, রাজধানীসহ দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকার তাপমাত্রাও শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি। কিছু কিছু স্থানে কুয়াশা এত ঘন হয়ে জমে যে ২০ হাত দূরের জিনিসও দৃশ্যমান হয় না। শীত ও কুয়াশার এ অবস্থা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
জানুয়ারি বছরের শীতলতম মাস হিসেবে পরিচিত থাকলেও এবার ডিসেম্বরের মতো এ মাসেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। চলতি মাসে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। তবে এ মাসে শৈত্যপ্রবাহ তীব্র্র আকার ধারণ বা তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার আশঙ্কা নেই বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এই পূর্বাভাস দিয়েছে। গতকাল রবিবার আবহাওয়া অধিদফতরের ঢাকার ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কমিটির নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।
আজিজুর রহমান বলেন, জানুয়ারি মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দেশে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকতে পারে। জানুয়ারি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি বা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা বা মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে পঞ্চগড়, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, নীলফামারী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি কখনো কখনো দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান আজিজুর রহমান।
আবহাওয়া অধিদফতর ডিসেম্বর মাসের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ডিসেম্বর মাসে সার্বিকভাবে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া মাসে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল। এর একটি ঘূর্ণিঝড় ‘ম্যানদৌস’-এ পরিণত হয়। ডিসেম্বরে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ৫০ মিলিমিটার (সীতাকুন্ড, ২৭ ডিসেম্বর) রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (বদলগাছি, ২৩ ডিসেম্বর) রেকর্ড করা হয় বলে পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ডিসেম্বরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি এবং সারাদেশে গড় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এদিকে, ঘন কুয়াশায় ব্যাঘাত ঘটছে জীবনযাত্রায়। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। হিমশীতল বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত। সড়ক মহাসড়কে হেডলাইড চালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। গত দু'দিন ধরে শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশা উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। মেহেরপুরে কিছুটা তাপমাত্রা বাড়লেও ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে চারদিক। সূর্যের দেখা মিলছে না অনেক বেলা পর্যন্ত। ঘন কুয়াশার কারণে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের শিবালয়ের পাটুরিয়া নৌপথে স্বাভাবিক পারাপার ব্যাহত হয়। পদ্মা নদীর দুই পাড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা থাকছে ফেরিপারের জন্য আসা অসংখ্য গাড়ি।