ফিরে দেখা ২৮ অক্টোবরের লগী-বৈঠা তান্ডব
মানুষ মেরে লাশের ওপর নৃত্য করেছিলো আ.লীগ
সোহেল সামি, দিনকাল
প্রকাশ: ১২:৩৬ পিএম, ২৮ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৬:৫৪ এএম, ৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার তাণ্ডবের ১৮ বছর আজ।
২০০৬ সালের এই দিনে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে লগি-বৈঠা দিয়ে সাপের মতো পিটিয়ে ৬ জন মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দলটির নেতাকর্মীরা।
শুধু তাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর লাশের ওপর নৃত্য করে তারা- যা সভ্য দুনিয়ায় অকল্পনীয়। সেই থেকে এই বাক্যটির প্রচলন হয়- 'মানুষ না আওয়ামীলীগ'। স্বাভাবিক কারণেই তখন ওই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছিল দেশে-বিদেশে।
ওই দিনের ঘটনায় মামলা হলেও তা এগোয়নি ১৮ বছর। ক্ষমতায় এসেই মামলাগুলো নিস্ক্রিয় করে দেয় আওয়ামীলীগ। বিএনপি-জামায়াত নেতাদের দাবি, একদলীয় শাসন কায়েমের গভীর ষড়যন্ত্র ছিলো সেদিনের লগি-বৈঠা তান্ডব।
বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হয় ২৮ অক্টোবর। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধিন ১৪ দলীয় জোট সারা দেশে লগি-বৈঠা আন্দোলনের ডাক দেয়। খোদ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের সমাবেশে লগি-বৈঠা নিয়ে আসার প্রকাশ্য নির্দেশ দেন।
সরকারের শেষ দিনে বায়তুল মোকাররম এলাকায় সমাবেশ করছিলো তৎকালীন চারদলীয় জোট শরীক জামায়াতে ইসলামী। অস্ত্র, গোলাবারুদসহ লগী বৈঠা নিয়ে জামায়াতের সমাবেশে আক্রমণ করে আওয়ামী লীগ।
সংঘর্ষ, পাল্টা-সংঘর্ষের এক পর্যায়ে, ঢাকার বায়তুল মোকাররম এলাকায় লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা এবং লাশের উপর নৃত্যের ঘটনা ঘটে। নিন্দার ঝড় উঠে দেশে-বিদেশে। ওই ঘটনায় মামলা হলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ফলে এই নৃশংস ঘটনার বিচার থেকে বঞ্চিত হয় নিহতের পরিবার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এই দুটি মিলেই একটা বিরাট শক্তি। এরা একসঙ্গে থাকলে বাকি সব দলকেও পরাজিত করা যায়। সেই ধরনের পরিকল্পনা ছিলো না, সমন্বয়ও ছিলো না। আর সেই সুযোগেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো। এটি ছিলো একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ।
জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার হত্যাযজ্ঞের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হলেন শেখ হাসিনা। তিনিই সেদিন ডাক দিয়েছিলেন সারাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকায় আসতে।
তিনি দাবি করেন, সেদিন শুধু আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাই আসেননি, তাদের সঙ্গে লগি-বৈঠা নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এসে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২৮ অক্টোবরে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালুর ও ভয় দেখিয়ে শাসন করার প্রথম ধাপ। রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর রাজনীতির ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন তারা।
দিনকাল/এসএস