ক্ষমতায় টিকে থাকতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৪৩ এএম, ১২ মার্চ,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩৪ এএম, ৭ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বেআইনিভাবে আগের রাতে ভোট করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার অভিযোগ, এই ‘দখলদার সরকার’ শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইন তৈরি করেছে। যা দিয়ে অন্যায়-অত্যাচার-নিপীড়ন করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে। আমি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে শাবাশ দিতে চাই, কারণ তিনি সাহস করে মামলা করেছেন। এই সাহস নিয়ে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। আজকে এই সাহস নিয়ে অন্ধকারকে দূর করার জন্য, এই স্বৈরাচারকে দূর করার জন্য এবং যারা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে তাদেরকে পরাজিত করবার জন্য সাহস নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে রাজপথে সোচ্চার হতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচার ও তার খেতাব বাতিলের চক্রান্ত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, লেখক মুশতাক আহমেদ ও সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশকে ঘিরে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব, কদম ফোয়ারা ও সচিবালয়সহ এর আশ-পাশে কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তোলে পুলিশ। এসব স্থান দিয়ে প্রেসক্লাবে ও পল্টনে যেতে হলে পুলিশকে অবশ্যই আইডি কার্ড দেখাতে হয়। অন্যথায় পুলিশ সদস্যরা তাকে যেতে দেয়নি। এমনকি প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে বাস চলাচলও বন্ধ করে রাখা হয় সমাবেশের সময়। সমাবেশ থেকে নেতা কর্মীরা বাধা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, জিয়ার সৈনিক এক হও লড়াই করোসহ বিভিন্ন সেøাগানে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ মুখরিত করেন নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক সরকার নয়, জনগণের সরকার নয়। তারা জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বেআইনিভাবে আগের রাতে ভোট করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে একটি ভয়াবহ আইন তৈরি করা হয়েছে। এই আইন দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের বাক্স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে, লেখার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই সরকার শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইন তৈরি করেছে। তারা সবচেয়ে বড় যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তা হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা; তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় বেআইনি সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সাত শর ওপর মানুষ, যারা রাজনীতি করেন না, তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আটকে রাখা হয়েছে। কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। মুশতাক আহমেদ কারাগারে নিহত হয়েছেন। আমি শাবাশ ও ধন্যবাদ দিতে চাই কার্টুনিস্ট কিশোরকে যে, আজ তিনি নিজের ওপর হওয়া অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে, এই আইনে গ্রেফতার সব মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা মামলায় আটক থাকা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে করা গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন, যারা সব নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আজকে দুর্ভাগ্য আমাদের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি, ’৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্টার জন্য, তাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়ে একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য এই সরকার সমস্ত গণতান্ত্রিক আইন বাতিল করে দিয়ে সম্পূর্ণভাবে স্বৈরাচারি আইন প্রতিষ্ঠিত করছে।
সমাবেশ চলার সময় প্রেসক্লাবের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি ছিল। তারা প্রেসক্লাবের আশে পাশে ব্যারিকেড দিয়ে নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসতে বাধা দেয়।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা এত ভয় পান কেন, অনুমতি দেয়ার পরও কেন চতুর্দিকে বন্ধ করে দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের আসতে দেন না? কারণ, আপনারা জানেন, জনগণ জেগে উঠলে আপনাদের ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হবে না।
সমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এই সমাবেশ। এই সমাবেশ যখন বড় হচ্ছে, তখন তোপখানা রোড-পল্টন মোড়, মৎস্য ভবন, দোয়েল চত্বর ও সচিবালয়ের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, বাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর কারণ বাসে উঠে নেতা-কর্মীরা এখানে নামবেন।
সভাপতির বক্তব্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেছেন, আজকের সমাবেশকে ঘিরে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, ঢাকা মহানগরের অর্ধেক পুলিশকে এখানে আনা হয়েছে। আমাদের কর্মীদের সমাবেশে আসতে দেয়া হয়নি। মিছিল তো পরের কথা, একা একাও কেউ আসতে পারছেন না। প্রতিদিন আমাদের রিকোয়েস্ট করা হয় এখান দিয়ে যেন বাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখি। কিন্তু আজ তারা নিজেরাই বাস বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ বাসে করে যদি আমাদের নেতাকর্মীরা চলে আসে, এই ভয়ে। কিন্তু এভাবে জনগণের মুখ বন্ধ করে বেশিদিন চলতে পারবে না সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে ছাত্রদলের সাবেক নেতা বলেন, জনগণের ওপর স্বৈরতন্ত্র চাপিয়ে দিলে কী হয়, আপনার চেয়ে ভালো কেউ আর জানে না। তাই স্বৈরতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসুন।
তিনি বলেন, ‘৭২ থেকে ৭৫ সালের দুঃশাসন, সমাবেশে উপস্থিত অনেকে হয়তো দেখেননি। আমি তখন ছোট ছিলাম। তখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অনেক লাশ দেখেছি। এরপর এরশাদের দুঃশাসন দেখেছি। এখন দেখছি শেখ হাসিনার দুঃশাসন। বর্তমান দুঃশাসন দেখার পর আমার মনে হয় আর কারও দুঃশাসন দেখার বা জানার প্রয়োজন নেই। লেখক মুশতাকের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, লেখক মুশতাক ক্রিয়েটিভ লোক ছিলেন। তিনি কুমিরের চাষ করতেন। কিন্তু জলের সেই কুমির তার সাথে বেঈমানি করে নাই। তার সাথে বেঈমানি করেছেন ডাঙার কুমির শেখ হাসিনা, তার জীবন কেড়ে নিয়েছেন। আমরা তীব্র ভাষায় এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবীব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিমুদ্দিন আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিদ আঞ্জু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম নকী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা মহানগর যুবদল দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন প্রমুখ।