শহীদ জিয়া বাংলাদেশের চেহারা পাল্টিয়ে দিয়েছেন - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৪ এএম, ২১ জুন,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৫০ এএম, ৫ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তলাবিহীন ঝুড়ি বাংলাদেশের চেহারা পাল্টিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ১৮ জেলায় হেড কোয়ার্টারে কেবিনেট মিটিং করেছেন। অর্থাৎ গোটা গভর্নমেন্টকে নিয়ে যাবেন ঐ জেলায়। ওখানে গিয়ে ঐখানেই সিদ্ধান্ত দিবেন কিভাবে সমস্যার সমাধান দেয়া যায়। সেখানে কৃষি ব্যাংক, শিল্প ব্যাংকাররা থাকবেন। ওখানেই অন দ্যা স্পট হয়ে যাবে। গার্মেন্ট শিল্পের কথা বলা হলো, রেমিটেন্সের কথা বলা হলো সবকিছু মিলিয়ে জিয়াউর রহমান একজন বিপ্লবী নেতা । তিনি অথি দ্রুত বাংলাদেশের চেহারা পাল্টিয়ে দিয়েছেন।
আজ রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে ‘সমাজ উন্নয়নে মৃত্যুঞ্জয়ী জিয়া’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দর্শন। সেটা কি ছিল জানা জরুরি। অনেকে অনেকভাবে বলেন, আসলে উনি কি চিন্তা করেছিলেন সেটা জানতে হবে। আমাদের চারদিকে ভয়াবহ অন্ধকার। আমরা চারদিকে অন্ধকারই দেখতে পাই। এর বাইরে কিছু দেখতে পাই না। এরমধ্যে জিয়াউর রহমান খুব প্রাসঙ্গিক, জিয়াউর রহমানকে চর্চা করি, তাঁকে সামনে নিয়ে আসি তাহলে সঠিক পথ দেখতে পাবো। ঠিকই টানেলের আলো দেখতে পাবো। সেখান থেকে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় অবদান ২টি জায়গায়। একটা হলো বাংলাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করা। এটা তাঁর কাজ ছিল না। রাজনৈতিক নেতৃত্ব একেবারে শূন্য হয়ে গিয়েছিল, অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। হতাশা অবস্থা ছিল। সেই সময়ে তিনি ঘোষণা দিয়ে পুরো জাতিকে একটা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এটা একটা দিক। আরেকটা দিক হচ্ছে রাজনৈতি সংস্কার। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় নিয়ে আসা। সমস্ত পত্রিকা খুলে দেয়া। মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। মুক্ত চিন্তা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। আরেক দিক অর্থনৈতিক দিক। তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। সেটা তাঁর পক্ষে করা সম্ভব হয়েছিল কারণ তিনি মানুষটাই ছিলেন বৈপ্লবিক। তাঁর পুরো জীবনটাই বৈপ্লবিক। তিনি সব কিছুতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি নিজে আসেন নাই। তিনি ক্ষমতায় আসেননি। এখানে একটা বিপ্লব হয়েছে, সিপাহী-জনতার বিপ্লব হয়েছে। ৭ নভেম্বব মানুষ বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে তাঁকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। তিনি সামনে আসার পরে যেটা করেছেন সবচেয়ে যোগ্য মানুষ, জ্ঞানী মানুষ তাদেরকে নিয়ে প্রথম একটা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছেন। গ্যালাক্সি অব স্টার তাদেরকে নিয়ে এ কাজগুলো করেছেন। দ্রুত স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, শিক্ষা ক্ষেত্রে, কৃষিতে, শিল্পে সব ক্ষেত্রে তিনি অতি দ্রুত এগুতে পেরেছেন। মাত্র ৫ বছরের একটু সময় বেশি সময়ে তিনি এ কাজগুলো করেছেন। আজকাল যারা অর্থনীতিবিদরা আছেন, শিক্ষক আছেন। কোনো উন্নয়নই ঠিক সম্ভব হবে না যদি জনগণের মতামত না থাকে। তখন তিনি সেটা বুঝে জনগণকে সংযুক্ত করেছেন। তিনি গ্রামের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেছেন, খাল কেটেছেন, কৃষকদের সাথে মতামত নিয়েছেন। গ্রাম সরকার গঠন করার মধ্যে দিয়ে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্য মানুষ সৃষ্টি করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে টেলিভিশন বিতর্ক, টেলিভিশনকে উন্নত করা, কালার টেলিভিশনে রূপান্তরিত করা। এরপরে চলচ্চিত্রে অনুদান দেয়া, একুশে পদক দেয়া, স্বাধীনতা পদক দেয়া এ কাজগুলো অতি দ্রুত করেছেন। শিশু একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, সাংস্কৃতি মন্ত্রণালয় করেছেন। এটা একটা অভূতপূর্ব বিপ্লব ছাড়া সম্ভব হতো না।
দেশের ‘মেগা প্রকল্পে এখন গণলুট চলছে’ বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে, লুট করছে। তারা দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। এখানে একজন এই মেগা প্রজেক্টের কথা বললেন। মেগা প্রজেক্টে গণলুট চলছে এখন। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট হয়ে যাচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট। এভাবে মেগা প্রজেক্টটাকে তারা টাকা বানানোর প্রজেক্ট হিসেবে তৈরি করে নিয়েছে।
অনুন্নয়ন খাতে অর্থ বরাদ্দের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আনপ্রোডাক্টিভ খাতে টাকা দেয়া হচ্ছে। এমন এমন কাজ করা হচ্ছে, যে কাজগুলোর কোনো দরকারই নেই। দেখবেন যে স্কুলে-মাদ্রাসায় টাকা দিয়েছে বড় বড় গেট তৈরি করতে। এই মুহূর্তে তো গেট তৈরি করার চেয়ে ক্লাস রুম তৈরি করা বেশি দরকার। সেটা তারা করছে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বাস্থ্যখাতে কি করুণ অবস্থা। এখন পর্যন্ত টিকার কোনো নিশ্চয়তা নেই এবং টিকার নিশ্চয়তা হবেও না এজন্য যে, যারা স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে জড়িত, টিকার সঙ্গে জড়িত-এরা সবাই দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে গেছে। এতো বড় দুর্নীতি করছে যে, দুর্নীতির মাধ্যমে মানুষের যে জীবন সেটাকে তারা মূল্যহীন করে ফেলেছে। দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখানে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই, এখানে মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন ভয়াবহ সব খুন, ভয়াবহ সব হত্যার ঘটনা। আজকের পত্রিকায় যে ঘটনাটি এসেছে, মেয়ে বাবা-মা- বোনকে হত্যা করছে। এগুলো হচ্ছে একটা আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি। এটার কারণ হচ্ছে আজকে দেশের মধ্যে গণতন্ত্র নেই। যেহেতু দেশে গণতন্ত্র নেই, যেহেতু দেশে সেই সমাজ ব্যবস্থাটা নেই, যেহেতু দেশে জবাবদিহিতাটা নেই। আজকে অবস্থাটা এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে, যে পর্যায় থেকে ফিরিয়ে আনার একমাত্র দায়িত্ব আমরা মনে করি জিয়াউর রহমান নেই, তাঁর অনুসারী যে দল আছে বিএনপিরই।
কৃষকদের দুরবস্থার প্রসঙ্গ টেনে সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী বলেন, কৃষকেরা আজকে কঠিন সমস্যার জর্জরিত। তারা উৎপাদন করছে কিন্তু তাদের পণ্য বাজারজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। অনেকদিন আগে পত্রিকায় উঠেছে, গাইবান্ধাতে এক কৃষক মাথায় হাত দিয়ে বলছেন আমি এই যে এতো সবজি উৎপাদন করলাম সেই সমস্ত সবজি তো বাজারে দিতে পারছি না। সরকার কী পারে না আমাদের সেনাবাহিনীর ট্রাকগুলোকে পাঠিয়ে এসব সবজি ঢাকায় এনে বিক্রির ব্যবস্থা করতে। তার কথাটা ছিলো এরকম। গাইবান্ধার ওই কৃষদের মুখ দিয়ে কৃষকদের সমস্যার খুব সত্য কথাটা বেরিয়ে এসেছে। সরকার এতো কিছু করছে আমাদের কৃষি পণ্যের বাজারজাত করছে না কেন? এটা জরুরি বিষয় বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। জিয়াউর রহমানের আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে শিক্ষকদের কাজ করার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ভয়াবহ অন্ধকার চতুর্দিকে। বাইরে কিছু দেখতে পাই না। এরমধ্যে জিয়াউর রহমান খুব প্রাসঙ্গিক। এজন্যে যে, জিয়াউর রহমান সাহেবের আদর্শ যদি আমরা চর্চা করি, তাঁকে যদি আমরা সামনে নিয়ে আসি, নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেই তাহলে আমরা তাঁর পথ দেখতে পাবো। তাতে আমরা অন্ধকার টার্নেলের দূরে যে লাইট সেই লাইটটা আমরা দেখতে পাবো। তাহলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, একদলীয় শাসনের কবরের ওপর বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাগান রচনা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, স্বৈরশাসনের গোরস্তানের ওপর সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আরেকবার আজকে গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশে গণতন্ত্র উপহার দেবে সেই বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আসুন আমরা শুভ দিনের প্রতীক্ষা করবো না শুধু, শুভ দিনকে এগিয়ে আনার জন্য আমরা একসাথে কাজ করবো।
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল হাই শিকদার, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বিএসএমএমইউর অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে গোলাম হাফিজ কেনেডী, জামাল উদ্দিন রুনু, লুৎফুর রহমান, তোজাম্মেল হোসেন, হাসনাত আলী, মাসুদুল হাসান খান, কামরুল হাসান, আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, জিয়া পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহিল মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রবিউল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা অংশ নেন।