জিয়ার বড় কীর্তি তিনি একটি বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন - নজরুল ইসলাম খান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২০ এএম, ২৬ জুন,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৪৩ এএম, ২৭ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, একাত্তরের রণাঙ্গনে জিয়াউর রহমান একজন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক, একজন সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের প্রধান। একাত্তরের ২৬ মার্চের সূচনায় তিনিই প্রথম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহ এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দেন। এরপর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ বলে স্বাধীনতা ঘোষণার ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্দীপ্ত করেন। তবে জিয়ার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে তিনি বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন।
আজ শুক্রবার বিকেলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-জেটেব আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
জেটেব সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সভাপতি প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, এ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, অধ্যক্ষ শফিউল্লাহ শফি, জেটেব সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার এবিএম রুহুল আমিন আকন্দ, ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সততার তুলনা হয় না। স্বজনপ্রীতি শব্দটা প্রেসিডেন্ট জিয়ার অভিধানে ছিল না। দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনো কাজকে তিনি কখনও প্রশ্রয় দেননি। প্রেসিডেন্টের মতো এত বড় একটি পদে থেকেও তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। তার কৃচ্ছ্রসাধন করার দৃষ্টান্ত বিরল। নিজের পরিবারের জন্য তিনি কিছুই করেননি। নিজের জন্য তো করেনইনি। আত্মীয়স্বজনদের কেউ কোনো তদবিরের জন্য বঙ্গভবনে বা তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করতে আসবেন, সেটা ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার। তেমন সাহস কারও ছিল না। আত্মীয়স্বজনদের কাউকে তিনি তার কাছে ঘেঁষতে দিতেন না।
তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার অম্লান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং দেশীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির রক্ষাকবচ। জিয়া দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন। তাই তো জাতির চরম দুঃসময়গুলোতে জিয়াউর রহমান দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার বীরোচিত ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা এবং রাষ্ট্র গঠনে তাঁর অনন্য কৃতিত্বের কথা বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভুলবে না।
তিনি বলেন, ’৭১ সালে সারা জাতি যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, অথচ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ দিশাহারা, ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬ মার্চ মেজর জিয়ার কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের অভয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। এরই ফলশ্রুতিতে দেশের তরুণ, ছাত্র, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, পরবর্তীতে স্বাধীনতা-উত্তর শাসকগোষ্ঠী দেশে একদলীয় একনায়কতান্ত্রিক শাসন কায়েম করেন। সেই সময় দেশের সর্বত্র ভয়াবহ নৈরাজ্য নেমে আসে। ঠিক সেই সময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে ফিরিয়ে দেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্র ও নাগরিক স্বাধীনতা।
তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করেন। উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আখ্যা থেকে খাদ্য রফতানিকারক দেশে পরিণত করেন। তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কারের কারণেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হয়।
তিনি বলেন, এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী শক্তি কখনই মেনে নিতে পারেনি। আর তাই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এ মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে হারায় দেশবাসী ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান অর্থনৈতিক, সামাজিক, কৃষি, শিল্প, সংস্কৃৃতির যে সংস্কার করেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত। তিনি কিছু গণমুখী সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করেন, যা জনসাধারণকে আকৃষ্ট করেছিল। খাল খনন কর্মসূচি এর অন্যতম। ওই সময় তিনি দেড় হাজারের বেশি খাল খনন ও পুনর্খনন করেছিলেন। যার অর্থনৈতিক সুফল জনসাধারণ পেয়েছে। ১৯৭৭-৭৮ সালে খাদ্যশস্য রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদিত হয়। ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পর জিয়াউর রহমানের সঠিক নেতৃত্বে প্রথম খাদ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। সে সময় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়া গণশিক্ষা কার্যক্রম, গ্রাম সরকার, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তিনি জনসাধারণকে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেনÑ রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদেরও শরিকানা রয়েছে। তৃণমূলকে জাগিয়ে তুলতে পেরেছিলেন তিনি।
খায়রুল কবির খোকন বলেন, বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকার বিরোধী দলের অধিকার, চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভূলুন্ঠিত করে গণতন্ত্রকে হত্যা করে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে।
সে জন্য দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সাজানো মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এ যেন গণতন্ত্রকেই কারাগারে আটকিয়ে রাখা।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার অত্যন্ত অমানবিক ভাবে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় বাধা দিচ্ছে। এ সরকার চায় রাজনীতির ময়দান থেকে প্রধান প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিয়ে দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে।
শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।