বিদ্যালয়ের শত বছরের পুরোনো দুটি গাছ কেটে নিলেন আ.লীগ নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৫ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:০২ পিএম, ৪ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
গাজীপুরের কালীগঞ্জে বোয়ালী উচ্চ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় শত বছরের পুরোনো দুটি জামগাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পটুসহ জমিদাতা ৪-৫ জন একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আব্দুল গণি ভূঁইয়া। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হলেও বর্তমান কমিটিতে প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের বোয়ালী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যষের সভাপতি ও বোয়ালী গ্রামের বাসিন্দা।
বোয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পটু বলেন, প্রায় শত বছরের পুরোনো জামগাছ দুটির মূল্য লাখ টাকার বেশি। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভাপতি একক ক্ষমতায় নামমাত্র মূল্যে গাছ দুটি বিক্রি করে দিয়েছেন।
গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ও বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল গণি ভূঁইয়া বলেন, আমি আমার ক্ষমতায় গাছ কাটছি। পারলে কেউ কিছু করুক। ইউএনও সাহেবও বিষয়টি জানেন। বোয়ালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা বেগম বিদ্যালয়ের দপ্তরি মো. মফিজ উদ্দিনের বরাত দিয়ে জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর দপ্তরি স্কুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে যান। এ সময় তিনি দেখেন বোয়ালী উচ্চ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের সামনে প্রায় শত বছরের পুরোনো দুটি জামগাছ করাত ও কুড়াল দিয়ে কাটার প্রস্তুতি চলছে। তিনি ফোন দিয়ে বিষয়টি আমাকে জানান। দপ্তরির কাছে ফোন পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষষের সভাপতি আব্দুল গণি ভূঁইয়াকে ফোন দিলে তিনি গাছ কাটার বিষয়টি জানেন বলে জানান।
বোয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. রিপন বলেন, গাছ দুটি বোয়ালী উচ্চ বিদ্যালয়ের। আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। গাছ কে বিক্রি করেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গাছ কাটার সময় আমি এলাকার বাইরে ছিলাম। এলাকায় এসে দেখি স’মিলের মালিক শফিক গাছ দুটি নিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে বোয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সুফিয়ান বলেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার দিন এসে দেখি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বে রোপণ করা দুটি জাম গাছ কে বা কারা কেটে নিয়ে গেছে। বিষয়টি তিনি উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানছুরা আক্তারকে অবগত করেছেন বলেও জানান।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানছুরা আক্তার বলেন, বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার স্যারকে জানানো হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার বিষয়টি মৌখিকভাবে জেনেছেন বলে জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে নিয়মানুযায়ী বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের রেজুলেশন করে উপজেলা পর্যায়ের কমিটিকে অবগত করতে হয়। এরপর উপজেলা কমিটির সভা ডেকে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের সভাপতি এর কোনোটিই করেননি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও বোয়ালী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যষের সভাপতি আব্দুল গণি ভূঁইয়া বলেন, আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি। আমি কার কাছে থেকে অনুমতি নেবো? তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের বরাদ্দ হয়েছে। তাই কেটে ফেলেছি।