জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে দরিদ্রের সংখ্যা জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়বে - বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৯ এএম, ১০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:২২ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২৪
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দরিদ্রের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।
গতকাল সোমবার রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ মন্তব্য করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় নিম্নে বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায় বিগত ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায় সম্প্রতি সরকার কর্তৃক কেরোসিন ও ডিজেল লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বা শতকরা ২৩% দাম বৃদ্ধি ও এই বছরে গত এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচবার এলপিজির দাম বাড়ানোর সামগ্রিক প্রভাবে কৃষকসহ সমগ্র জনজীবন এবং অর্থনীতির ওপরে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভা মনে করে, করোনাকালে চাকরিচ্যুতি ও আয় হ্রাস পাওয়ার ফলে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দরিদ্রের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপিসহ সকল অঙ্গ-সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং অবিলম্বে ডিজেল, কেরোসিন ও এলপিজি গ্যাসের দাম কমিয়ে আনার দাবি জানানো হয়।
৩। বিআইজিডি এবং পিপিআরসি যৌথ জরিপে দেশে করোনাকালে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হওয়ায় এবং চলতি অর্থ বছরে মার্চ মাসে নতুন দরিদ্র ২ কোটি ৪৫ লাখের সাথে ৭৯ লাখ মানুষ যুক্ত হওয়ায় সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, সরকারের উদাসীনতা, অযোগ্যতা ও ভ্রান্তনীতির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অপরিকল্পিত করোনা বিধিনিষেধের কারণে দরিদ্রের সংখ্যা আরও বেড়েছে। করোনাকালে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কোনো রকম আর্থিক প্রণোদনা না দেওয়া এবং কল-কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে প্রণোদনা না দেওয়া এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে খাদ্য ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান না করাতেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। সভা অবিলম্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবাদি, চাল, ডাল, তেল, লবণ সামগ্রীর মূল্য হ্রাস করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানায়।
৪। সভায় সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ডোনা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিককের হত্যা একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এই ধরনের নিকৃষ্ট হত্যাকান্ড নিয়মিতভাবে পৃথিবীর কোনো সীমান্তে সংঘটিত হয় না। সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণেই এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হচ্ছে বলে সভা মনে করে। সভায় এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে এই ধরনের অমানবিক হত্যাকান্ড বন্ধ করার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
অপরদিকে এক সপ্তাহের বেশি সময় যাবত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানপাট, মসজিদে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও নিন্দা জানানো হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের নিকট বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি উপস্থাপন ও বন্ধ করার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
৫। সভায় সম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকটি জেলার দুর্গাপূজামন্ডপে, মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঢালাওভাবে আসামি করে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার ও হয়রানির তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সভায় গত কয়েক বছর যাবত সরকার কর্তৃক বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত গড়ে তোলার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।