দেশের শান্তি-স্থিতিশীলতার প্রয়োজনেই খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো জরুরি - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৩ এএম, ২৯ নভেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৪৫ পিএম, ৫ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দেশের শান্তি-স্থিতিশীলতার প্রয়োজনেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো ‘জরুরি’ বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রবিবার দুপুরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দ্রুত বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে গত ২৫ নভেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে সমাবেশ-মানববন্ধনের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে যা চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই দাবি জানাচ্ছি। আমরা বার বার বলছি যে, আপনারা (সরকার) তাঁকে বিদেশে পাঠান চিকিৎসার জন্যে। আমরা তো বুঝি না, আমাদের মাথায়ই আসে না- সমস্যাটা কোথায়? কেনো আইনের কথা বলছেন? আইন তো ভুল দেখাচ্ছেন আপনারা। অতএব তাঁকে পাঠিয়ে দিন। দেশের যদি সত্যিকার অর্থে শান্তি চান, স্থিতিশীলতা চান, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে চান, সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চান তাহলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেই দরকার হবে। অন্যথায় কেউ এখানে শান্তি-স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারবে না। গত ১৩ নভেম্বর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। ৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, অত্যন্ত অসুস্থ, গুরুতর অসুস্থ। প্রতিদিন চিকিৎসকরা তাঁর জীবন রক্ষার জন্য পরিশ্রম করছেন। তাঁকে এভাবে বাইরে যেতে না দেয়া কেনো? তাঁকে শর্ত সাপেক্ষে আটক রাখার কারণটা কেনো? একটাই মাত্র কারণ যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একমাত্র নেত্রী যিনি এই বাংলাদেশের জন্ম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মানুষের জন্য কাজ করেছেন, মানুষের জন্য কথা বলেছেন। তিনি যখন বিরোধী দলের নেত্রী ছিলেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ৯ বছর পথে পথে ঘুরে বেরিয়েছেন। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন, কৃষক, শ্রমিক, মজুর, খেটে খাওয়া মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যদি সুস্থ হয়ে জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন, তাহলে এদের দুর্নীতি, গণবিরোধী কাজ-কর্ম, জনগণের অধিকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আদায় করবেন। তাঁর পেছনে মানুষ হেমিলনের বংশীবাদকের মতো আসবে সেজন্য তারা তাঁকে মুক্তি দিতে চান না, তাঁর চিকিৎসা করাতে চান না। আমরা খুব পরিষ্কার করেই বলেছি, দেশনেত্রীকে যে মামলায় আপনারা সাজা দিয়েছেন যেটা একটা মিথ্যা মামলা এবং সেখানে বিচারের নামে শুধু প্রহসন করা হয়েছে। তাঁকে ব্যক্তিগত কারণে, রাজনৈতিক কারণে, প্রতিহিংসার কারণে সাজা দিয়ে আপনারা আটক করে রেখেছেন। আইন দেখায়, ৪০১ ধারার আইন। আইন মানি। ওই আইনেই তো পরিষ্কার করে বলা আছে যে, সরকার শুধুমাত্র সরকারই পারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে। বহু উদাহরণ আছে। সেদিন আসম আবদুর রব সাহেব পরিষ্কার করে বলেছেন যে, তিনি যখন বন্দি ছিলেন, তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছিলো। তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব দায়িত্বে এসে তাকে রাষ্ট্রীয় খরচে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠিয়েছিলেন। আমাদের নাসিম সাহেব আওয়ামী লীগের নেতা তাকে জেল থেকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিলো চিকিৎসার জন্য। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফের সাজা হয়েছিলো, তাকে চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়েছিলো। আজকে ৪০১ ধারার কথা আপনারা বলছেন। এই ৪০১ ধারাতেই আছে, আপনি পাঠাতে পারেন। মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করে আপনি আইনের কথা বলছেন।
শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি পরিবহনে ভাড়া কমানো হলেও বেসরকারি পরিবহনে কেনো হবে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকার বলছে কী? আমরা বিআরটিসির ভাড়া তো কমালাম কিন্তু প্রাইভেট বাসের ভাড়া তো আমরা কমাতে পারবো না। তোমরা প্রাইভেট টেলিফোন, মোবাইল কন্ট্রোল করতে পারো, তোমরা প্রাইভেট সমস্ত কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারো ব্যবসা-বাণিজ্য। আর তোমরা বাসের ভাড়া ছেলে-মেয়েদের জন্য কমিয়ে দিয়ে সেখানে যদি দুই হাজার-আড়াই হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে হয় তা তোমরা দেবে না কেনো?
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমাদের ছেলে-মেয়েরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছে, ভাড়া কমাতে বলছে। তাদের লেখা-পড়ার জন্য, তাদের শিক্ষার জন্য, আমাদের ছেলে-মেয়েদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আজকে আমি এই সমাবেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের এই দাবির প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি এবং দাবি করছি যে, অনতিবিলম্বে তাদের ভাড়া কমিয়ে হাফ পাস ভাড়ার ব্যবস্থা করা হোক। প্রয়োজনে সরকার ভুর্তকি দেবে। শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবিকে ‘যৌক্তিক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়ে, তারা বাস ভাড়া কমানোর দাবিতে আজকে রাস্তায় নেমেছে। তারা বলছে যে, ‘হাফ’ ভাড়া দিতে হবে। কেনো বলছে? কারণ তাদের এই লেখা-পড়ার খরচ করতে হয় অনেক বেশি। তাদের মা-বাবারা যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ তারা হিমশিম খাচ্ছে। একদিকে চাল-ডাল-তেল-লবণের দাম বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বইপত্রের দাম বেড়েছে, খাতার দাম বেড়েছে, কলমের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বাসভাড়া আরো বাড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে একটা চরম বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই গণবিরোধী সরকার তারা প্রথমে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়াল ১৫%। সাথে সাথে বাস মালিক-শ্রমিকদেরকে স্ট্রাইকে নামিয়ে দিলো। তাদের ভাড়া বাড়াতে হবে। এই ভাড়া বাড়ানো, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো কার স্বার্থে? আওয়ামী লীগের এই সমস্ত দুর্নীতিপরায়ণ সিন্ডিকেট যারা এই সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি করে তাদের পকেট ভারী করে। আওয়ামী লীগের লোকের এই পকেট ভারী করার জন্য তারা জনগণের পকেট কাটছে। একটা দুইটা কথা নয়। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন ব্যর্থ হয়েছে যে, চুরি ছাড়া কিছু করে নাই। এখন হাসপাতালগুলোতে যাবেন দেখবেন কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা নাই। করোনার সময় আমরা দেখেছি হাসপাতালে অক্সিজেন পাওয়া যায় নাই, ডাক্তার পাওয়া যায় নাই, ইনজেকশন পাওয়া যায় নাই, কোনো ওষুধ পাওয়া যায় নাই। টিকা নিয়ে কি কেলেঙ্কারি করেছে আপনারা দেখেছেন।
ঢাকার মেট্রোরেল ও পদ্মাসেতুর ব্যয় বছরের পর বছর বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না।
স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামানের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, আনু মোহাম্মাদ শামীম, জামিল হাসান, এমদাদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসীন আলী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, বিথিকা বিনতে হোসাইন, সহ-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, সর্দার নুরুজ্জামান, দফতর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।