বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা আবারো সংকটাপন্ন : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৭ এএম, ৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৫৯ এএম, ১৮ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৫
বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা আবারো ‘সংকটাপন্ন’ বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গিয়ে আজ বুধবার সকালে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব এই কথা জানান। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এই মানববন্ধন হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি মঙ্গলবার রাতে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। সব চিকিৎসকরাই সেখানে ছিলেন। তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) আবার সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছেন। আবার তাঁর রক্তক্ষরণ হয়েছে। চিকিৎসকরা পরিষ্কার করে বলেছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষা করার জন্য তাঁকে দ্রুত অবিলম্বে এক মুহূর্ত দেরি না করে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন। সরকারের কাছে আবারো আহবান জানাচ্ছি, অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
তিনি বলেন, সরকার প্রথম থেকেই বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থান থেকে এই সমস্যাগুলো দেখছে। আপনারা দেখেছেন, সুস্থ অবস্থায় হেঁটে তিনি কারাগারে গিয়েছিলেন। কয়েকবছরে ওই কারাগারে থাকার ফলে তাঁর চিকিৎসা না হওয়ায় আজকে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, তিনি এখন সিসিইউতে ২৬ দিন ধরে আছেন এবং প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থাকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, মনিটরিং করা হচ্ছে, তাঁকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত ১৩ নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির পরপরই রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাঁকে দ্রুত ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটি (সিসিইউতে) ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা পরবর্তীতে গণমাধ্যমকে জানান যে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে ভুগছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আইনের কথা বলেন। কেনো জনগণকে বোকা বানাতে চান? ৪০১ ধারার যে আইন আছে তাঁকে আটকিয়ে রেখেছেন। সেই ধারায় শর্ত দিয়েছেন যে, তিনি (খালেদা জিয়া) দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। ওই শব্দটা আপনারাই (সরকার) তুলতে পারবেন, আর তো কেউ তুলতে পারবে না। ওই শর্ত তুলে নেন। উনি বিদেশে যেতে পাসপোর্টের যে আবেদন করলেন তা বাতিল করে দিয়েছেন। আপনারা মাঝে-মধ্যে যে কথা বলছেন আমরা চিন্তা করছি-এটা তার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। অবিলম্বে তাঁর পাসপোর্ট দিয়ে তাঁকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি হলে, অঘটন ঘটলে তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাদেরকেই নিতে হবে।
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে কেনো সরকারের অনীহা বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এর কারণটা কী? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিতে কেনো তারা এতোটা অনীহ, কী জন্যে? আমরা অনেকবার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি, পরামর্শ নিয়েছি। তিনি যখন পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন তখন তাকে একইভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। বার বার বলার পরে যখন মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে সেই বোর্ডের অধীনেও তাঁর চিকিৎসা হয়নি। পরবর্তীকালে আমাদের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা মূলত তাঁর অবস্থা জানতে সেখানে (কারাগারে) যান এবং তাদের সুপারিশক্রমে পরবর্তীকালে যখন তাঁকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন অলরেডি তাঁর অবস্থা চেঞ্জ হয়ে গেছে।
এই অবস্থার কারণ হচ্ছে যে, তারা (সরকার) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে, ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। কারণ একটাই দেশনেত্রী একমাত্র রাজনীতিক যিনি এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলেন, যিনি এদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, তিনিই হচ্ছেন একমাত্র রাজনৈতিক নেত্রী যিনি এদেশের গণতন্ত্রের জন্য তাঁর সমস্ত জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া। শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে মানবন্ধবনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের শওকত মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্য জোটের জাকির হোসেন, শেখ আমজাদ আলী, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, আবদুল আউয়াল, আবদুর রহমান, সেকান্দার আলী, কামরুন্নাহার লিজি, রোকেয়া চৌধুরী প্রমুখ।