সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে দুই বছরের জন্য জাতীয় সরকার দিন - ডা. জাফরুল্লাহ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩৯ এএম, ৩ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:২১ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে দুই বছরের জন্য জাতীয় সরকার চান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আজ বুধ্বার বিকালে স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি এই দাবির কথা তুলে ধরেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির উদ্যোগে স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবসের ৫১তম বছর উদযাপন উপলক্ষে ‘বাঙালির তৃতীয় জাগরণের মাইলফলক’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তালনকারী ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আসম আবদুর রব।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি ১ বছর আগে থেকে বলছি যে, অন্তুতপক্ষে দুই বছরের জন্য জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে এদেশে কোনোক্রমেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা যাবে না, কোনোক্রমেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। জাতীয় সরকারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আওয়ামী লীগ। সেই সরকারে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিও থাকবে। হয়ত প্রতিনিধি শেখ রেহানাও হতে পারেন। আমি জানি না, সেটা আওয়ামী লীগের ব্যাপার। জাতীয় সরকারে অন্যান্য আমাদের সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি থাকবে, বিশিষ্ট দুই-চারজন নাগরিকও থাকতে পারেন। তারা সত্যিকার অর্থে ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা করবেন।
তিনি বলেন, দেশে ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা হলে অফিশিয়ালি রাষ্ট্রীয়ভাবে ২ মার্চ পালিত হবে, ৩ মার্চ পালিত হবে, ৭ মার্চ পালিত হবে। স্বাধীনতার সত্যিকার ইতিহাস জানা যাবে। সেই সত্যিকার ইতিহাস কি? এক ব্যক্তি বাংলাদেশকে স্বাধীন করে নাই। এই স্বাধীনতার পেছনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর অŸদান আছে, রবের অŸদান আছে, আরো অবদান আছে সিরাজুল আলম খানে, আরো অŸদান আছে জিয়াউর রহমানের। সেই সময়ের ৩০ বছরের যুবক আসম আবদুর রব সাহস করে পতাকা উড়িয়েছিলে, সেইদিনও সাহস করে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তাকে পাকিস্তানি চর বলা একটা নিমকহারামি, জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কটূক্তি করা নিমকহারামি। আজকে প্রবাসী সরকারকে মর্যাদা না দেয়া এটা অকতৃজ্ঞতা।
এটা একটা পরগাছা সরকার বলে মন্তব্য করে আস ম আবদুর রব বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বাংলাদেশ কোন পথে? যাদের কোনো অবদান ছিলো না আজকে সেইসব পরগাছা-আগাছা, আগাছা সরকার, পরগাছা মন্ত্রিসভা এদেরকে উচ্ছেদ করে ফেলে দিতে হবে, বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে এদেরকে। আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য এই সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচন করব না। আমরা এই সরকারকে মানি না। এরা ডাকাত। রাতের অন্ধকারে ভোট ডাকাতি করে, এরা চোর না ডাকাত, এরা খুনি, এরা জালিম। আমরা মনে করি, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পদত্যাগের পর ঐক্যবদ্ধভাবে ন্যূনতম সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আসুন গণআন্দোলনের মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গড়ে তুলতে হবে।
নতুন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, এসব নির্বাচন কমিশন করে লাভ হবে না, এই নির্বাচন কমিশন-টমিশন করে ফাজলামি করে কোনো লাভ হবে না। এই সরকারের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। এই সরকারকে বিদায় করেই আমরা জাতীয় সরকারের মাধ্যমে অŸাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করব।
২ মার্চ সম্পর্কে কোনো স্মৃতিচারণ করবেন না উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই সরকার সব খেয়ে ফেলতেছে, দেশটাকে খেয়ে ফেলতেছে, স্বাধীনতা খেয়ে ফেলতেছে, ২ মার্চ খেয়ে ফেলতেছে সব খেয়ে ফেলতেছে। আমি আজকে ২ মার্চ সম্পর্কে একটি কথাও বলব না। ৫০ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশকে বর্তমান সরকার নৈতিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। যে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশ আমরা চেয়েছিলাম সেই দেশ কী আছে? দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে, আইন ব্যবস্থা, প্রশাসন, শিল্প-সাহিত্য-কৃষ্টি সব কিছুই ধ্বংস করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের সকল বাহিনীকে কর্মী বাহিনীতে রূপান্তরিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রকে দলীয় ও পারিবারিক সম্পত্তিতে রূপান্তরিত করেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতায় যাদের অবদান কাউকে তারা (আওয়ামী লীগ) স্বীকার করছে না। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে কিন্তু মওলানা ভাসানীর নাম একবারও উচ্চারণ করা হয় নাই, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে যে তাজউদ্দিন আহমেদ সরকার চালিয়েছেন তার নাম একবারও উচ্চারণ করা হয় নাই, মুক্তিযুদ্ধে যিনি সর্বাধিনায়ক ছিলেন সেই জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নাম একবারও উচ্চারণ করা হয় নাই। সিরাজুল আলম খান ১৯৬২ সাল থেকে নিউক্লিয়াস করে প্রত্যেকটি আন্দোলনকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গেছেন-আমিসহ তাদেরকে বিভিন্নভাবে অপমানিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো সেক্টর কমান্ডারের নাম উচ্চারিত হয় না। যিনি ৯ মাস যুদ্ধ করেছেন কাদের সিদ্দিকীর নাম একবারও উচ্চারণ করা হয় নাই। স্বাধীনতার ইতিহাসকে একটা দল ও পরিবারের কাছে বলি দেয়া হয়েছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের সিপিবি (বাংলাদেশের কমিউনিস্টি পার্টি) খুব ভালো কিছু করতে পারছে না। কিন্তু তারা একটা ভালো কাজ করেছে। তাদের কংগ্রেস থেকে আমাদের সকল রাজনৈতিক দলের শিক্ষার বিষয় আছে। ৩০ বছর বোধ হয় হবে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (সভাপতি) সিপিবিকে দেখাশুনা করেছেন, সংগঠনের উন্নতির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যখন গোপন ভোট হয়েছে উনি ৩ নম্বরে গিয়ে হাজির হয়েছেন। ওনার আগেই ছেড়ে দেয়া উচিত ছিলো। সংবিধান বদলানোর চেষ্টা না করে। এটা আমাদের সকল রাজনীতিবিদদের শিক্ষণীয় বিষয় আছে। আপনার পার্টির লোকজন তাদের হাতে ছেড়ে দেন না। তারা আপনাকেই হয়ত করবে অথবা বৃহত্তর কারণে বলবে যে, এবারে আপনি যান, আপনি বিশ্রাম নেন।
সিপিবির দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আজকে আমাদের দেশে আন্দোলন গড়ে না ওঠার একটা কারণ হচ্ছে এই সিপিবি। আমি বিএনপির কথা বলতে চাই না। অনেকে মনোক্ষুনণ্ন হন, সত্য কথা হজম করার শক্তি খুব বেশি লোকের নাই। সেটা আমার বক্তব্য। ভুল করলে আমিই করেছি তার জন্য দুঃখ পাওয়ার কিছু নাই, কষ্ট পাওয়ার কিছু নাই।
জেএসডির কাযর্করী সভাপতি মোহাম্মদ সিরাজ মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকী, বাংলাদেশ গণ-অধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, তানিয়া রব, শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বেলায়েত হোসেন বেলাল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার জন্য তিনি আসতে পারেননি বলে আয়োজকরা জানান।