চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে যারা বাধা দিয়েছে তাদের তালিকা করার নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২৭ পিএম, ১৩ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০৬ পিএম, ৩ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
চট্টগ্রামে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে আসার পথে যেসব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বাধা দিয়েছে, যেসব পুলিশ বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করছে, তাদের নামের তালিকা করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরের নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব নির্দেশনা দেন তিনি। গতকাল রেলওয়ের পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে সার্বিক বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সন্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দেন বিএনপির সি. যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহম্মেদ ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। এরপরে নেতৃবৃন্দ চট্টেশ্বরী মোড়স্থ কসমোপলিটন হাসপাতালে আহত নেতাকর্মীদের দেখতে যান।
পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশটি চট্টগ্রামে এই সময়ে সবচেয়ে বড় সমাবেশ উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনার জন্ম নিয়েছিল, সাথে সাথে প্রতিপক্ষ গণবিরোধী শক্তি যারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, সেই রেজিম এবং রেজিমের শক্তিকে বাধাগ্রস্ত করার অব্যাহতভাবে চেষ্টা করেছে। সেজন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলের পক্ষ থেকে যারা সবকিছু উপেক্ষা করে গতকালের সমাবেশকে মহা মহাসমাবেশে পরিণত করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম, এই মহাসমাবেশ বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের আন্দোলনে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করবে। গতকালের এই মহাসমাবেশ বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে সাড়া জেগেছে গতকাল। ফেসবুকে কোটি কোটি মানুষ মহসমাবেশ চলাকালীন শেয়ার করেছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গতকাল ফোন করে আমাকে বলতে বলেছেন, উনি আমাদের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীর প্রতি উনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আমাদের যারা কষ্ট করে এই সভা সফল করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। মিডিয়ার ভাইয়েরা যারা কষ্ট করে কাভারেজ করে দিয়েছেন, তাদেরকে উনি ধন্যবাদ দিয়েছেন।
খসরু বলেন, আমার নেত্রী গতকাল অনুপস্থিত ছিল। তার অনুপস্থিতি আমরা সবাই অনুভব করেছি। এর আগে ২০১২ সালে আমাদের নেত্রীর উপস্থিতিতে পলোগ্রাউন্ড মাঠে সভা হয়েছিল। বিস্ময়ের বিষয়, অনেকের ধারণা বেগম খালেদা জিয়া যদি গতকাল সমাবেশে উপস্থিত থাকতেন, তাহলে সারা চট্টগ্রাম জনসভায় পরিণত হত। যারা তিনটা, সোয়া তিনটার দিকে মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে এসেছেন তারা কদমতলী অতিক্রম করতে পারেনি। ওদিকে টাইগারপাস ক্রস করে পারেনি। সিআরবি জনসমুদ্র ছিল। রেললাইনের ওপরে জনগণের উপস্থিতি, এটা অবিশ্বাস্য। মাঠে যা লোক ছিল, মাঠের বাইরে তার চেয়ে বেশি লোক ছিল। অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয় মহাসমাবেশ চট্টগ্রামবাসী উপহার দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের সব নেতাকর্মীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কাল অসম্ভব গরম ছিল, এর মধ্যেও মিডিয়া যেভাবে তিনদিন ধরে কাভারেজ দিয়েছে, আমি দলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, আরেকটা বিষয়, যেটা বলা প্রয়োজন, এই যে রেজিম ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার যে সংস্কৃতি এই রেজিমের আছে সেটা যে আমরা প্রত্যাশা করিনি তা নয়। এদের রাজনীতি হচ্ছে বাধা দেওয়া। নিজেরা কিছু করতে পারেনা, জনগণের কাছে যাওয়ার তো তাদের সুযোগ নেই, তারা তো জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সুতরাং বাধাগ্রস্ত করেই তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। গতকাল প্রতিফলন ঘটেছে সেটার, তার আগেরদিনও হয়েছে। কিছু কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে রাতে রেইড করেছে, অনেককে গ্রেফতার করেছে। পরবর্তীতে গতকাল আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী অনেক জায়গায় আক্রমণ চালিয়েছে। চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আঘাত করেছে, গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে, পুলিশ বন্ধ করেছে, মোবাইল কোর্ট বসিয়েছে, আক্রমণ করেছে, গাড়ি ভাংচুর করেছে, আমাদের নেতাকর্মীদের অফিস ভাংচুর করেছে-বাধাগ্রস্ত করার জন্য যা যা করা দরকার তারা কিন্তু কোনোটাই বাদ রাখেনি। আমরা কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীদের বলেছিলাম, এদিক-সেদিক কর্ণপাত না করে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যান। যে ঢল চট্টগ্রামে নামবে কোনো বাধাবিপত্তি সেটা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। মানুষ যদি সিদ্ধান্ত নেয়, দেশের জনগণ যদি সিদ্ধান্ত নেয়, কোনো শক্তি যে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না, গতকালের মহাসমাবেশ সেটা প্রমাণ করেছে। পুলিশের কিছু অংশ যারা বাধাগ্রস্ত করছে, বাড়িতে-বাড়িতে রেইড দিয়েছে, বাসগুলোতে বাধা দিয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়েছে, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই- বাংলাদেশের সংবিধানে সভা-সমিতিসহ যে অধিকার দেয়া হয়েছে চাকরিতে ঢোকার সময় যে ওয়াদা করে তারা ঢুকেছিল, তারা যেন সেই ওয়াদাগুলো আবার পড়ে দেখে। কারণ ওয়াদাগুলো তারা যদি পড়ে না দেখে, একই কাজ করতে থাকে, জনগণ সেটা মেনে নেবে না। সমস্ত পুলিশ বাহিনীর ওপর এ দায় এসে পড়বে।
'আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু কিছু অতি উৎসাহী সদস্যের দায় সমস্ত পুলিশ বাহিনী কেন নেবে? র্যাবের কিছু সদস্যের কর্মকাণ্ডের জন্য র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলে এসেছে। ব্যক্তিগতভাবে এসেছে, প্রতিষ্ঠানের ওপর এসেছে। নিশ্চয় বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী চাইবে না, কিছু অতি উৎসাহী দলীয় আওয়ামী মার্কা সদস্যের দায় বহন করতে চাইবে না' যোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে জনাব খসরু বলেন, পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের তালিকা করছে। পরিস্কারভাবে বলতে চাই- আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এবং যারা এ কাজে থাকে, আমি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারাও তালিকা করেন এরা কারা, গতকাল যারা হামলা করেছে, আক্রমণ করেছে, আমাদের নেতাকর্মীদের আহত করেছে, বাধাগ্রস্ত করেছে, আপনারাও তাদের তালিকা করুন। অতি উৎসাহী পুলিশ যারা দেশ, সংবিধান ও পুলিশের আইন লঙ্ঘন করছে, তাদের বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখছি। কারণ, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না। এই যে মহাসমাবেশ হয়েছে, আমাকে একটি উদাহরণ দিতে পারবে, বিএনপির একজন নেতাকর্মী উচ্ছৃঙ্খলতা দেখিয়েছে কিংবা সহিংসতা করেছে। কেউ দিতে পারবে না। আমাদের নেতাকর্মীদের যে ধৈর্য্য সেটাকে স্যালুট করতে হবে। তারা পূর্ণমাত্রার ধৈর্য্য রেখে এই মহাসমাবেশকে সফল করেছে। কিন্তু সহিংসতা এসেছে কাদের কাছ থেকে ? আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে। আমরা কোনোসময় সহিংস রাজনীতির দিকে যাব না। এই ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। তারা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে, আমরা দেশকে গণতন্ত্রের দিকে নিতে যেতে চাচ্ছি। আমরা গণতন্ত্রের পথে থাকব, যারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তারা সহিংসতার দিকে থাকবে, জয় হবে গণতেন্ত্রর। জয় হবে বাংলাদেশের মানুষের।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সি. যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহম্মেদ বলেন, স্বৈরাচারের যে এত শৃঙ্খল, এত বেড়া, সেই শৃঙ্খল ভেঙ্গে চট্টগ্রামের জনগন পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু এই শৃঙ্খল ভাঙতে গিয়ে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আমাদের অনেক নেতাকর্মীর রক্ত ঝরেছে। অনেকে নিজের জীবন বিপন্ন করে এই সমাবেশকে সফল করেছেন। একটি বিষয়- মীরসরাইয়ের এক চেয়ারম্যান বলেছেন, যারা এই সমাবেশে যাবে তারা যেন বাড়ি ফিরতে পারবে না। আওয়ামী লীগের সময়ে কখনোই মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয়নি। পৃথিবীর যে কোনো দেশ, যেখানে ন্যূনতম গণতন্ত্র আছে, সেখানে এমন ঘটনা হলে সাথে সাথে গ্রেফতার করা হতো। এটা হিংসাশ্রয়ী ঘটনা, কে এই চেয়ারম্যান, এত ঔদ্ধত্য ! তাকে সরকার প্রশ্রয় দিয়েছে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা শাহাদাত হোসেন বলেন, মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ্যে মাইকিং করে ঘোষণা দিয়েছেন, যারা বিএনপির সমাবেশে যাবে তাদের মীরসরাই ফিরতে দেয়া হবে না। জাহাঙ্গীরের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে। অতি উৎসাহী পুলিশ অফিসারদের নামের তালিকা করা হবে। আমাদের ছাত্রদলের নেতা সাইফুলের পা কেটে ফেলতে হয়েছে, আমরা মামলা করেছি। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- যারা আমাদের গণতান্ত্রিক মিটিং-মিছিলে বিনা কারণে, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করব। কোনো কারণ ছাড়া আমাদের নেতাকর্মীদের বাসায় গিয়ে ভাংচুর করে, গণতান্ত্রিক মিছিল-সমাবেশে বাধা দেয় আমরা এবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণসমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীমের পরিচালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, সি. যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহম্মেদ, চেয়ারর্পাসনের উপদেষ্টা ভিপি জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা.শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, তরিকুল ইসলাম তেইনজিং, মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক এস এম সাইফুল আলম, শফিকুর রহমান স্বপন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, আবদুল মান্নান, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন, ইঞ্জি. বেলায়েত হোসেন, সরওয়ার আলমগীর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য এনামুল হক এনাম, মহানগর বিএনপির সদস্য এড. মুফিজুল হক ভূঁইয়া, আনোয়ার হোসেন লিপু, মো. কামরুল ইসলাম, এড. আবু তাহের, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারন সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরীফুল ইসলাম তুহিন প্রমূখ।