না’গঞ্জে ৩টি স্পটে মাস্ক পরে মশাল মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণ : বিএনপির নামে আরো ৩টি গায়েবি মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৪৫ পিএম, ১ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৪৬ পিএম, ৮ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সহায়তায় বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে আ’লীগের সন্ত্রাসীরা গতকাল বুধবার (৩০ নভেম্বর) রাতে তান্ডব চালিয়েছে। আ’লীগের অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীরা বুধবার রাতে একই সময়ে ৩টি স্পটে মশাল মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণ ও ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে শিমরাইল এলাকায় রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। এদিকে ৩টি স্পট তান্ডবের ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৩টি থানায় গায়েবী মামলা হয়েছে। থানা গুলো হচ্ছে, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার।
অপরদিকে পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানিয়েছে, আ’লীগের উপর মহলের নির্দেশে জেলা পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের আদেশে তার বাহিনীর সেনাপতি শাহ নিজামকে দিয়ে ৩টি স্পটে এ তান্ডব চালিয়েছে। তার বাহনীর ক্যাডারদের মুখে মাস্ক পড়িয়ে মশাল মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণ ও ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে শিমরাইল এলাকায় রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এব্যাপারে জানতে আজ বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামের মোবাইলে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ শহর, ফতুল্লা ও ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় বুধবার রাতে একদল যুবক হঠাৎ করেই মশাল মিছিল করেছে। মিছিল গুলো থেকে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। মিছিল থেকে বিএনপি চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানের পক্ষে শ্লোগান দেওয়া হয়। মিছিলকারীদের সবার মুখে মাস্ক পরিহিত থাকায় কাউকে চেনা যায়নি। মশাল মিছিল থেকে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মিছিলকারীদের মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ও রাস্তায় টায়ারে অগ্নিসংযোগের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ মহাসড়ক থেকে জ্বলন্ত টায়ার সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। একই সময় শহরের হক প্লাজা ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের শিবু মার্কেট এলাকায়ও একই ধরণের মশাল মিছিল হয়। মিছিলকারীরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এবং জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির আহবায়ক সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে স্লোগান দেয়।
পুলিশের দাবি সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাকে হওয়া মশাল মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপি নেতা ও নাসিকের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন। বিএনপি নেতা কাউন্সিলর ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে হওয়া মশাল মিছিল থেকে স্লোগান দেওয়া হয়, ‘গিয়াস ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা আছি একসাথে।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে বুধবার রাতে যোগাযোগ করা হলে জেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, এই মুহুর্তে মশাল মিছিল করার কোনো প্রশ্নই আসে না। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, এই মুহুর্তে কী কারণে এই ধরণের কর্মকান্ড করবো। আমরা ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে নেতাকর্মীদের গোছাচ্ছি। তাছাড়া বিগত দিনে দেশের ৮টি বিভাগে যে সমাবেশগুলো হয়েছে শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সেগুলো শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে। এই মুহুর্তে দেশের কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে বিএনপি নেতাকর্মীরা রাতে মশাল মিছিল বের করবে।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে নারায়ণগঞ্জের ৭টি থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট, মিথ্যা এবং গায়েবি মামলা হয়েছে। ওইসব মামলায় আমাদের নেতাকর্মীরা আসামী। তারা বাড়ি ঘরে পুলিশের ভয়ে থাকতে পারছে না। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে এ ধরণের কোন সহিংসতার প্রশ্নই উঠে না। এটি সরকার দলীয় ও প্রশাসনের একটি যৌথ নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন বলেন, আমাদের তো এখন কোনো কর্মসূচি নেই। পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগ এসব নাটক সাজিয়েছে। এটি শতভাগ নিশ্চিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে অনুরোধ করবো তদন্ত করুন এবং যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখুন। শুধু শুধু আমাদের নিরপরাধ নেতাকর্মীদের হয়রানি করবেন না। আমরা কখনো মাস্ক পরে কর্মসূচি করি না, প্রকাশ্যে করি।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ১০ ডিসেম্বর আমাদের সমাবেশকে বানচাল করার জন্য পুলিশ-আওয়ামী লীগ মিলে এসব করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার জন্য এই কাজগুলো করছে। এসব ঘটনায় মামলায় নিরীহ বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করার জন্যই এ নাটক, মামলা হলেই দেখবেন সব বিএনপি নেতারা আসামি।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, বুধবার রাতে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক এলাকায়। তারা বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে বিপুল সংখ্যক টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রিজাউল হক দীপু বলেন, শিবু মার্কেট এলাকায় বিএনপি নেতা কর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে।
জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, তিনটি স্পটে বিএনপি নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি আমরা ভিডিও ফুটেজ ও বিভিন্ন ছবি দেখে সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।