বেগম খালেদা জিয়াকে ফরমায়েশী সাজা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৯ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৫৩ পিএম, ৪ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৪
সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে গণতন্ত্রকে বন্দি রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বন্দি রাখা মানে গণতন্ত্রকে বন্দি রাখা। সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে গণতন্ত্রকে বন্দি রেখেছে। বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র আজ যেন সমার্থক। বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে। গণতন্ত্রের মুক্তি হলেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে। জনগণ আজ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে অবতীর্ণ। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৫ম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার এক বিবৃবিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ ৮ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক দিন। ২০১৮ সালের এই দিনে প্রতিহিংসাপরায়ণ আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ১/১১’র জরুরি অবস্থায় সরকারের বিরাজনীতিকরণের মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশী সাজা দিয়ে অন্যায়ভাবে আটক রেখেছে। শুধু ফরমায়েশী সাজা দিয়ে তাঁকে আটক রাখা হয় নাই, তাঁর প্রাপ্য জামিনের অধিকার কেড়ে নিয়ে ২৫ মাস অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি রেখেছিল। বন্দি থাকা অবস্থায় সুচিকিৎসার অভাবে তার অসুস্থতা আরও তীব্র হয় এবং তাঁর জীবন হুমকির মুখে পড়ে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনকেও দমন করতে সরকার নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। দেশ-বিদেশে সর্বত্র বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সোচ্চার হয়। আইনগতভাবে বার বার তার জামিনের আবেদন করা হলেও সরকারের হস্তক্ষেপে জামিন দেয়া হয়নি। আইনি লড়াই করতে বিদেশ থেকে আইনজীবী আসতে চাইলেও সরকারের আপত্তির কারণে তাকে আসতে দেয়া হয় নাই। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে শর্ত সাপেক্ষে সরকার তাঁর সাজা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে তাঁকে প্রকারান্তরে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তাঁর উন্নত, উপযুক্ত সুচিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাঁকে বিদেশে উন্নত বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানোর সুপারিশ করলেও, সরকার তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয় নাই। এসব ঘটনায় দিবালোকের মত সত্য প্রমাণিত হয় যে, সরকারের অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী, আইন পরিপন্থি কার্যকলাপ, দুর্নীতি, লুটপাট, ভোটের নামে প্রহসন নির্বিঘেœ চালিয়ে যেতে ফ্যাসিবাদী সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই ফরমায়েশী সাজা দিয়ে, তাঁর সকল আইনগত অধিকার কেড়ে নিয়ে তাঁকে আটক করে রেখেছে। অপরাধ না করেও ফ্যাসিবাদী সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে হেয় প্রতিপন্ন ও জনমতকে বিভ্রান্ত করতে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে, প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। কিন্তু জনগণ জানেন ও বিশ^াস করেন তাদের প্রিয় নেত্রী কোনো অপরাধ করেন নাই। শুধুমাত্র সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নির্মম, নিষ্ঠুর জুলুম নেমে এসেছে।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া জনগণের কল্যাণে, অধিকার আদায়ে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরন্তরভাবে লড়াই করে চলেছেন। এজন্য জনগণ তাঁকে ‘দেশনেত্রী’, ‘আপোসহীন নেত্রী’, ‘গণতন্ত্রের মাতা’ বলে অবিহিত করেন। বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীন নেতৃত্বের কারণেই ৯০ দশকে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, রূপকারও ছিলেন তিনি। স্বৈরাচারের পতনের পর তাঁর হাত ধরেই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের নবযাত্রা শুরু হয়েছে। ৯০-পরবর্তী অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের বিপুল রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে তিনি স্বৈরাচারের ধ্বংসস্তূপের ওপর আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রা শুরু করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই সে সময় বিশে^ বাংলাদেশ “ইমার্জিং টাইগার” অর্থাৎ উদীয়মান বাঘ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়েছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরেও তিনি ভূমিধস বিজয় লাভ করে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত রাখে। সে সময় অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছিল, কৃষি, শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্যে এবং প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশেরও অধিক হয়েছিল। ব্যাপক কর্মসংস্থান, অবৈতনিক নারী শিক্ষা, শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, কারিগরি শিক্ষা, ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পের ব্যাপক প্রসার, বৃক্ষরোপণ, মৎস্য চাষ, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টের ব্যাপক উন্নয়ন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটেছিল। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বন্দি রাখা মানে গণতন্ত্রকে বন্দি রাখা। সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে গণতন্ত্রকে বন্দি রেখেছে। বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র আজ যেন সমার্থক। বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে। গণতন্ত্রের মুক্তি হলেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে। জনগণ আজ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে অবতীর্ণ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র বিরোধী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি সন্নিবেশিত করে ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ১০ দফা দাবি জনগণের ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছে। সরকার এই দাবিকে অগ্রাহ্য করে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন অব্যাহত রাখতে ষড়যন্ত্র করছে। হত্যা, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও ব্যাপক দমন-নিপীড়ন চালিয়ে, মানবাধিকার হরণ করেও ফ্যাসিস্ট সরকার আন্দোলন দমন করতে পারছে না। সকল বাধা অতিক্রম করে আন্দোলন এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর জেল-জুলুম, নির্মম-নির্যাতন হয়েছে, তাঁর অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। আমি সমগ্র দেশবাসীর পক্ষ থেকে সরকারের এই নির্মম নির্যাতনের তীব্র ধিক্কার জানাই। সরকারের অন্যায় চাপ ও অগণতান্ত্রিক কাজের প্রতি মাথা নত করেন নাই, আপোস করেন নাই বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে জনবিচ্ছিন্ন সরকার ভয় পায়। এজন্যই তাঁর ওপর এত জুলুম-নির্যাতন নেমে এসেছে। তিনি বাংলাদেশের মানুষের সাহসের বাতিঘর। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্রের ঐক্যের প্রতীক, আশা ভরসার নির্ভরযোগ্য নেত্রী, তিনি মজলুম দেশনেত্রী। বেগম খালেদা জিয়া আমাদের প্রেরণার উৎস। চলমান গণ-আন্দোলন সফল করে তাঁর লালিত স্বপ্ন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত সংগ্রাম চলছে। ইনশাল্লাহ এই সংগ্রাম সফলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে, অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লালিত স্বপ্ন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি এবং তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।