৬০ লাখ নেতাকর্মীকে মামলা মুক্তের উদ্যোগ বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৬ এএম, ৭ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৫:৩০ পিএম, ৯ অক্টোবর,
বুধবার,২০২৪
আওয়ামী শাসনামলে গত ১৬ বছরে দেড় লাখের বেশি মামলায় ৬০ লাখের বেশি বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা ও জেলে ঢোকানো হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।
এসব মামলা মিথ্যা, গায়েবি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিএনপির অভিযোগ, তাদের দলকে দমন করতে মামলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, নেতাকর্মীদের মামলা মুক্ত করতে তথ্য চেয়ে কেন্দ্র থেকে দলের জেলা ও মহানগর শাখার নেতাদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে এই চিঠি পাঠানো হয়। চিঠির সাথে মামলার বিবরণের একটি ছকও পাঠানো হয়েছে, যেখানে পাঁচটি তথ্য চাওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের নিজ নিজ জেলা আইনজীবী ফোরামের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে আগামীকাল রোববারের মধ্যে নির্দিষ্ট ছকে মামলার সংগৃহীত তথ্য দলের কেন্দ্রীয় দফতরে পাঠাতে বলা হয়েছে।
দলীয় সূত্র বলেছে, সারা দেশের নেতাকর্মীদের মামলার তথ্যবিবরণী পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় দফতরে মামলার এই হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি এসব মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তা অন্তর্বর্তী সরকারকেও দেয়া হবে। বিএনপি মনে করে, দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার হওয়া প্রয়োজন।
বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাইকারি হারে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এসব মামলার হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহে গত ২ সেপ্টেম্বর দলের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে জেলা ও মহানগর শাখায় চিঠি দেয়া হয়েছে। সারা দেশের নেতাকর্মীদের মামলার সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহের পর দল পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।
এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিগত ১৬-১৭ বছরে সারা দেশে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা, গায়েবি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলা দেয়া হয়েছে। দলের কাছে এর হালনাগাদ তথ্য থাকা দরকার। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য সেটা সরকারকে দেয়া হবে। দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এটা প্রয়োজন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে বিএনপি। গত প্রায় দেড় যুগ ধরে ‘মামলায় জর্জরিত’ নেতাকর্মীদের এখন স্বাভাবিক পরিবেশে চলাফেরা এবং নির্বিঘ্নে রাজনীতি করার সুযোগ নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
এ দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিএনপির সারা দেশের নেতাকর্মীদের এখনো আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে, দিতে হচ্ছে বিভিন্ন মামলায় হাজিরা। এসব মামলায় ইতোমধ্যে অনেকের সাজাও হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আগে মামলাগুলোয় দ্রুত রায় হতে থাকে। বিভিন্ন মামলায় তখন দেড় হাজারের বেশি নেতাকর্মীর সাজা হয়। অবশ্য নির্বাচনের পর আইনি প্রক্রিয়ায় বেশির ভাগ নেতা কারামুক্তও হন। এসব ‘রাজনৈতিক ও মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার চান নেতারা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনো দেশের বাইরে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। তার সকল মামলা প্রত্যাহার করা দরকার। বেগম খালেদা জিয়ার মামলাও প্রত্যাহার করা দরকার। বিএনপির মহাসচিবসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে তাদের মামলা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। এই মামলাগুলো যতক্ষণ না প্রত্যাহার করা হবে, ততক্ষণ প্রশ্ন থেকেই যাবে যে- এই সরকার গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ শুরু করেছে কিনা।
দলের জেলা ও মহানগরের নেতাদের কাছে মামলার তথ্যবিবরণী চেয়ে বিএনপির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়ছে- ‘স্বৈরাচারী দুঃশাসন প্রলম্বিত করতে ব্যাপক উৎপীড়ন-নিপীড়নের অংশ হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে ৫ আগস্ট-২০২৪ পর্যন্ত বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাইকারি হারে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
এ জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছে দলটি।
ক) উপর্যুক্ত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে আপনাদের জানাচ্ছি যে, উল্লেখিত সময়কালে রুজুকৃত মিথ্যা মামলার বিবরণ (সংযুক্ত ছকে বর্ণিত তথ্যাদি) আগামী ৭ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
(খ) জেলা ও মহানগরের সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি অবহিত ও সংশ্লিষ্ট করে মামলায় অভিযুক্ত সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের (সংযুক্ত ছক অনুযায়ী) মামলার তথ্যবিবরণী বিএনপির সাথে সমন্বয় করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে।
(গ) জরুরি ভিত্তিতে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে (সংযুক্ত ছক অনুযায়ী) মামলার তথ্যবিবরণী কেন্দ্রে প্রেরণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। ‘বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রাজনৈতিক মামলার তালিকা’ শীর্ষক মামলার বিবরণ ছকে পাঁচটি তথ্য চাওয়া হয়েছে।
সেগুলো হলো- থানার নাম ও মামলা নং/জি আর নং (মামলা দায়েরের তারিখ) এবং বিচারাধীন মামলার নং, মামলার ধারা, বিচারাধীন আদালতের নাম, আসামির সংখ্যা এবং মামলার বর্তমান অবস্থা (চার্জশিট বা চার্জ গঠন হয়েছে কিনা অথবা ট্রায়ালে আছে কিনা)। মামলার তথ্য জোগাড় ও যাচাই এবং ফরমটি পূরণ করার জন্য নিজ নিজ জেলা আইনজীবী ফোরামের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে।