সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরেই লড়াই করব গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে - সেলিমা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৯ এএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ১০:১১ পিএম, ১০ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২৫
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, সুবর্ণ জয়ন্তীর এই বছরেই সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করব গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার জন্য, পতাকার জন্য, স্বাধীনতার জন্য।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সেলিমা রহমান বলেন, একটা রাজনৈতিক দল বাংলাদেশকে শেষ করার জন্য যে খেলা খেলছে তার চূড়ান্ত পর্যায়ে এখন তারা নেমে এসেছে। সেই দলের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার সময় তার। এই যুদ্ধে যাবার সময় কিন্তু চলে এসেছে। কারণ সামনে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী এটাই সেই বছর। আপনারা মনে করবেন আরেকটি যুদ্ধের মধ্যে পড়ে গেছেন। এই সুবর্ণ জয়ন্তীর এই বছরেই সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করব, গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, খেতাব বাতিল করা এত সহজ না। খেতাব অর্জন করে তার নিজস্ব অর্জন দিয়ে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাঁর খেতাব অর্জন করেছেন। তাঁর নিজস্ব অর্জন দিয়ে। যে নামের পিছনে বাংলাদেশ জড়িয়ে আছে। আধুনিক বাংলাদেশের নাম জড়িয়ে আছে। যার ডাকে মুক্তিযুদ্ধে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তিনি হলেন সেই নেতা তাঁর খেতাব বাতিল করা এত সহজ না।
তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, উন্নয়নের কথা বলে মুখে ফেনা তোলে তারা ২৫ মার্চ কালো রাতে কোথায় ছিলেন? কেন সেদিন আপনাদের নেতা আত্মসমর্পণ করেছিলেন? কেন আপনারা পালিয়ে গিয়েছিলেন? সেদিন যদি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা না দিতেন তাহলে দেশে রক্তের বন্যা বয়ে যেত। আজ যে বাংলাদেশকে আপনারা ভোগ করছেন। টাকার পাহাড় করছেন। এই দেশ পেতেন না। আজ এই বাংলাদেশে থাকতো না। যদি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না করতেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক বলেছেন, গুম খুন হত্যার বিচার এই বাংলার মাটিতে বিএনপি করবেই। আল্লাহ আপনাকে (হাসিনা) ১ হাজার বছর হায়াত দান করুন। আপনি তা দেখে যেতে পারবেন। সময় খুব কাছে। অহংকার করে, চিৎকার করে বলতে পারবো যারা আজ তারেক রহমানের সাথে রাজনীতি করছেন, যারা পাওয়ার পলিটিক্সের কথা বলে তারেক রহমানকে খাটো করছেন। যারা বলছেন যে, পাওয়ার কান্ট্রির সাথে তারেক রহমানের কোনো যোগাযোগ নাই। এসব কথা বলে, এসব এজেন্ডাগিরি করে তারেক রহমানকে খাটো করা যাবে না। সময় আসবে, ইনশাআল্লাহ তারেক রহমান ক্যাবিনেট মিনিস্টার হবেন। তবে মনে রাখবেন আমাদের এই কথাগুলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আর কিছুদিন পর ১৭ মার্চ আপনার পিতার জন্মদিন, ২৫ মার্চ বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, আপনি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় কি করে একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার খেতাব নেয়ার প্রস্তাব আসতে পারে?
বিএনপির এ নেতা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একটু কি রক্তক্ষরণ হলো না? যারা এই প্রস্তাব দিল, শহীদ জিয়ার মত একজন সৎ নাগরিক, সৎ মেজর যার ক্ষমতার কোনো লোভ ছিল না। তাঁর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। শেখ হাসিনা আপনার বাবার জন্মদিনের কিছু দিন আগে এ সিদ্ধান্ত নিল। এ প্রশ্নটা আপনার কাছে রাখতে চাই।
স্বাধীনতা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় বলে মন্তব্য করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, বাংলাদেশ ৫০ বছর উপলক্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করা হচ্ছে। স্বাধীনতা তো কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সেজন্য সরকার দলও করছে, সাবেক সরকারি দল ও বর্তমান দায়িত্বশীল বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিও পালন করছে। কিন্তু আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে, এটা সুবর্ণ জয়ন্তী না। এটাকে সরকার করেছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। যেটার রং নষ্ট হয়ে গেছে সেটা কে বলে বিবর্ণ। বিবর্ণ জয়ন্তীর কারণে এটার যে সৌন্দর্য তা নষ্ট হয়ে গেছে। এটার যে সার্বজনীনতা, সবার অংশগ্রহণমূলক তা নষ্ট করে ফেলেছে সরকার।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, আল জাজিরা আপনাদের কাপড়-চোপড় খুলে ফেলেছে তার জন্য তো আমরা দায়ী না। আপনারা তো এমনিতেই বিবস্ত্র, আপনাদের ভিতরে বাইরে কি আছে সব দেখা যাচ্ছে। তার পরেও আল-জাজিরা আপনাদের এমন জায়গায় ঘা দিয়েছে আপনারা ভয়ে আঁতকে উঠেছেন। দেশের মানুষকে ভয় পান না। বিদেশি গণমাধ্যমকে ভয় পেয়েছেন। ভয় পেয়ে কি করা যায়, এমন একটা জায়গায় হাত দিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষের হৃদপিন্ডে আঘাত করেছে। এমন একটা জায়গা, বীর উত্তম শহীদ জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, বীর উত্তম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই নেতা, যার ছবি বাঁধাই করার জন্য কোনো আইন করা লাগে নাই বিএনপির। এই আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সংসদে আইন পাস করেছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাঙলে এত হাজার টাকা জরিমানা, এত বছর জেল। এবং ছবি পাহারা দেয়ার জন্য পুলিশ, বিডিআর এবং অন্যান্য বাহিনীকে নিযুক্ত করেছিল যাতে তার ছবি ভাঙচুর না হয় কোথাও। আর জিয়াউর রহমান সেই নেতা যার জন্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করা লাগে না। যেটা আওয়ামী লীগ করেছে ১৫ আগস্টকে। জিয়াউর রহমান সেই নেতা যার ছবি দেশের মানুষের হৃদয়ে বাঁধাই করা রয়েছে। সেই জায়গায় হাত দিয়েছেন। সেই জায়গায় হাত দিলে মানুষের দৃষ্টিকে অন্য জায়গায় ফেরানো যাবে। আপনারা (আওয়ামী লীগ) কিছুটা সফল হয়েছেন।
তিনি বলেন, এই প্রস্তাবটা তুলেছিলেন শাজাহান খান আর তা সমর্থন করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল। শাজাহান খান গণবাহিনীর লোক। শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকা অবস্থায় জাসদের তৈরি এই গণবাহিনী অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
১৯৭২ সালে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হত্যা শুরু হয়েছিল মন্তব্য করে যুবদলের সাবেক সভাপতি বলেন, নোয়াখালীর চাটখিল থানা কমান্ডার মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার মধ্য দিয়ে ’৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের থানা কমান্ডারকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে এই শাজাহান খানের গণবাহিনীর দল। নবাবগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিদ্দিক মাস্টার, দোহার থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুনির্মল সিং, এরকম অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে শাজাহান খানের লোকেরা। যার বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের লোক ছিল।
তিনি বলেন, আবার রক্ষীবাহিনী হত্যা করেছিল শাজাহান খানের লোকদের। আর রক্ষীবাহিনীর সমস্ত অন্যায়, হত্যাকান্ডকে, সমস্ত অত্যাচার-নিপীড়নকে আইনসম্মত করার জন্য তিনি ইন্ডেমনিটি দিয়েছিলেন। যে কথাটি আওয়ামী লীগ বারবার বলে ’৭৫-এর পরে বিএনপি ইন্ডিমনিটি দিয়েছিল। কিন্তু না, প্রথম ইন্ডেমনিটি দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান নিজে। রক্ষীবাহিনীর হত্যাকান্ডকে জায়েজ করেছে ইন্ডেমনিটি দিয়ে। বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনী প্রথম করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সংশোধনীও করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ এই কথাগুলো আমরা বলি না। তারাই উল্টো আমাদের ওপর দোষ চাপায়।
তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ভিডিও দেখবেন যেকোনো আওয়ামী লীগ ছড়ায়, শেখ মুজিবুর রহমান চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে, মজুদদারদের বিরুদ্ধে কথা বলেন কিন্তু তিনি কি তাদের বিচার করেছেন? বরং তাদেরকে সাথে করে নিয়ে এই বাকশাল কায়েম করেছেন।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হুমায়ূন আহমেদ তালুকদারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন কৃষকদলের সদস্য লায়ন মিয়া মোঃ আনোয়ার, কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।