পুুলিশ দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখা যাবে না : রাজশাহী সমাবেশে টুকু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২২ এএম, ৩ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ১১:২১ পিএম, ৩০ অক্টোবর,
বুধবার,২০২৪
চলতি বছরেই বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
আজ মঙ্গলবার রাজশাহীর নাইস কমিউনিটি সেন্টারের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এ দাবি জানান তারা। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে রাজশাহী মহানগর ও জেলা বিএনপি। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এদিন সকাল থেকে নগরীর আম চত্বর, কাটাখালী, সাহেব বাজার, ফায়ার সার্ভিস মোড়, ভোজ পাড়া মোড়, সদর হাসপাতাল মোড়, সিএমবি মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে। তবে শত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসেন নেতাকর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল তিনটায় সমাবেশ শুরু হলেও দুপুরের পর নগরীর নাইস কমিউনিটি সেন্টার এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আজকে সমাবেশে আসার সময় বেশ কয়েকবার আমার গাড়ি বহরে বাধা দিয়েছে পুলিশ।
এ জন্য কি আমরা যুদ্ধ করছিলাম? পুলিশ বাহিনীকে বলতে চাই, আপনারা যা করছেন সেটা আপনাদের নামের সঙ্গে মানায় না। আমি আপনাদের বলি, আপনারা আমাদের ভাই। তাই আপনারা আপনাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করুন।
তিনি বলেন, বাঙালি হচ্ছে বীরের জাতি। বাঙালি কখনো কারো কাছে মাথা নত করবে না। আমরা এই স্বৈরাচার সরকারের কাছে মাথা নত করবো না। এই অবৈধ সরকারকে হটাতে হলে রাজপথের আন্দোলনের বিকল্প নেই। তাই সকলকে প্রস্তুত হতে হবে। সবাই আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন। সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আমরা এই অবৈধ সরকারকে বলতে চাই, সময় থাকতে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। নয়তো জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামাতে বাধ্য হবে।
তিনি আরো বলেন, আর পিছে ফিরে তাকানোর সময় নাই। এখন সামনে যাওয়ার পালা। বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হলেই কেন্দ্রীয় সমাবেশ থেকেই এই সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। কারণ এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নাই। বর্তমান সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে তিনি আরো বলেন, সরকার পুরোপুরিভাবে দেশকে ধ্বংস করে ফেলেছে। গণতন্ত্রের গলা টিপে হত্যা করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। জনগণের ভোট ও কথা বলা অধিকার বিনষ্ট করেছে। এই সরকারের অধীনে আর কোনো প্রকার নির্বাচন করবে না বলে জানান তিনি। নির্বাচনে সময় নষ্ট না করে এখন সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করা হবে। এই আন্দোলনে সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান টুকু।
তিনি বলেন, বিএনপি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। যার ফলে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশের প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আর যারা স্বাধীনতার পক্ষের দল বলে দাবি করে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতের বিলাসবহুল হোটেলে আরাম আয়েশে দিন কাটিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, সোমবার থেকে রাজশাহী অভিমুখে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বেও রাজশাহীর বিভাগীয় সমাবেশ করার আগে এই রকম অবস্থা হলেও মাদ্রাসা মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিলো। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। সমাবেশ পন্ড করার জন্য সরকারের নির্দেশে পুলিশ সবখানে বাধা দিয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ বলেন, রাজশাহীর সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার সব বন্ধ করে দেয়াতে মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও যেতে পারছে না। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। আর এই সরকারকে সময় দেয়া যাবে না। আমাদের নেতা তারেক রহমান যেদিন বলবেন সেইদিন সংসদ থেকে পদত্যাগ করে সরকার পতনের জন্য যা যা লাগে তাই নিয়ে যুদ্ধ শুরু করবো।
খুলনা সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ভোট ডাকাতির চিত্র তুলে ধরতে ৬ সিটিতে সমাবেশ করছে জনতার মেয়ররা। সমাবেশের অনুমতি দিলেও পথে পথে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পরিবহন হোটেল মোটেলও। বিএনপি কারচুপির নির্বাচনে আর যাবে না বলে যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর শেখ হাসিনা সরকারের পতনও হবে সে বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক রাসিক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহীন শওকত, ওবায়দুর রহমান চন্দন, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শাল, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সহিদুন্নাহার কাজি হেনা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আওয়াল ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থী বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। আরো উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক বিশ্বনাথ সরকার ও সদস্য গোলাম মোস্তফা মামুন, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ওয়ালিউল হক রানা ও বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন উজ্জল, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহী জেলা যুবদলের সভাপতি মোজাদ্দেদ জামানী সুমন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম সমাপ্ত, মহানগর যুবদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রিমন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাকির হোসেন রিমন, সাধারণ সম্পাদক আবেদুর রেজা রিপন, মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট রওশন আরা পপি, অধ্যক্ষ সখিনা খাতুন, মহিলাদল কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রোকাসানা বেগম টুকটুকি, জেলা মহিলা দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসাদ বেগম মিতালী, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রবি, সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি ও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম জনিসহ বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।