হরতালে নাশকতা করেছে আ’লীগ- হেফাজত নেতা মাওলানা ফেরদাউস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০১ পিএম, ৩০ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০১:১১ পিএম, ১৩ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৫
নারায়ণগঞ্জে গত রবিবার ক্বওমী মাদ্রাসাভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের হরতালে নারায়ণগঞ্জে রীতিমতো তান্ডব চালিয়েছে পিকেটাররা। জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে হরতালের তেমন প্রভাব দেখা না গেলেও সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকা-ট্রগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি ভোর থেকে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত পর্যন্ত ছিল হরতাল সমর্থকদের দখলে।
পুলিশের তথ্যমতে, এই সময়ের মধ্যে ১৮টি ট্রাক, বাস, কাভার্ডভ্যানে আগুন, নির্বিচারে যানবাহনে ভাংচুর, সাংবাদিকদের মারধর করেছে হেফাজতের পিকেটাররা। তবে এই কথা মানতে নারাজ হেফাজতের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। উল্টো তিনি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।
তিনি বলছেন, হেফাজতের পিকেটাররা জোহরের নামাজের পর হরতালের মাঠ ছেড়ে দেওয়ার পর সেখানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অনুপ্রবেশ করে এবং তারাই পরবর্তী নাশকতামূলক তান্ডব চালিয়েছে।
গতকাল সোমবার (২৯ মার্চ) রাতে হেফাজতের ডাকা হরতালে মহাসড়কে তাণ্ডবের ঘটনায় মাওলানা ফেরদাউসুর বলেন, সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চিটাগাং রোড, সানারপাড়, সাইনবোর্ড এলাকায় যারা পিকেটিংয়ের দায়িত্বে ছিল তাদের সাথে কিন্তু আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আমি নিজে একটা থেকে সোয়া একটায় সাইনবোর্ড, সানারপাড়, চিটাগাং রোড এলাকায় গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে অনুপ্রবেশকারী ছাত্রলীগ, যুবলীগ পুলিশের সাথে তর্কবিতর্ক, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, অগ্নিসংযোগ করে। আমাদের হরতালের সময় শেষ হয় সন্ধ্যায়, কিন্তু তখনই অগ্নিসংযোগ বেশি হয়েছে। তিনি আরো জানান, হরতালের সময় রাস্তায় হেলমেড পরা এরা কারা?। সরকার দলীয় লোক। আমাদের কোন লোকজনতো হেলমেড পরেনি।
তবে পুলিশ ও দায়িত্বরত সংবাদকর্মীদের ভাষ্যমতে, রোববার ভোর থেকে সারাদিনই অগ্নিসংযোগ, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, সংবাদকর্মীদের মারধর, গাড়ি ভাঙচুর চলে। তাহলে এটা কারা করলো, এমন প্রশ্নের জবাবে হেফাজত নেতা বলেন, তাদের পিকেটাররা সর্বোচ্চ সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ছিল। পৌনে ১টায় একটা নামাজের জামাত হয়েছিল সেখানে। পরিস্থিতি খারাপ দেখার পরে জামাতের পরে আনুষ্ঠানিকভাবে সেখান থেকে চলে আসেন। জোহর পর্যন্ত পিকেটিং করার কথা ছিল তাদের। এরপর থেকে অনুপ্রবেশকারীদের তারা চেনেন না। বাকি ঘটনা তারাই ঘটিযয়েছে বলে দাবি মাওলানা ফেরদাউসের।
জোহরের নামাজের পর থেকে যত ঘটনা ঘটেছে তার সাথে হেফাজত কর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি হেফাজতের এই নেতার। তাহলে পাঞ্জাবী-টুপি পড়া শিশু-কিশোর বয়সী ছাত্ররা কারা ছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, ভিডিও ফুটেজ আছে, প্রশাসনের লোকজন এটা খুঁজে বের করবে। সেখানে এলাকার উৎসুক লোক ছিল। কোনো রাজনৈতিক দলের লোকও থাকতে পারে। শুনেছি মামলা হযয়েছে, প্রশাসন চাইলেই নাশকতাকারীদের খুঁজে বের করতে পারবে।
নির্দিষ্ট করে অভিযোগের আঙুল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দিকে তোলেন হেফাজত নেতা ফেরদাউসুর রহমান। তিনি বলেন, বিশেষ করে পুলিশের পাশে লাঠি-সোটা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল কিছু লোকজন। প্রশাসনের সাথে যারা হেলমেট পরে ছিল তারা আওয়ামী লীগ বলে আমরা সন্দেহ করি। প্রকাশ্যে প্রশাসনের সাথে আমাদের লোক বা বিএনপি-জামাতের লোক থাকতে পারে না। কেননা হেফাজত কিংবা বিএনপি-জামাতের কেউ হলে তাদের গ্রেফতার করতো কিংবা ধাওয়া দিতো পুলিশ। কিন্তু পুরো সময় হেলমেট পরা লাঠিসোটা হাতে লোকজন প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে, প্রশাসনও তাদের সহযোগিতা করেছে, এমনটাই করতে দেখেছি। আমাদের লোক বা বিএনপি-জামাত হলে এমনটা করার সুযোগ ছিল না। সুতরাং তারা সরকারি দলেরই লোক ছিল।
তিনি আরও বলেন, অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকেছে বুঝতে পেরে সকলকে মাঠ ছেড়ে দিয়ে নিরাপদে চলে যেতে বলেছি। কিন্তু কেউ কেউ নির্দেশ অমান্য করেও রাস্তায় ছিল। তখন আমি নিজে সাইনবোর্ড, সানারপাড়, চিটাগাং রোড গিয়ে সকলকে সরিয়ে দেই। পরবর্তীতে আমাদের কোনো লোক ছিল না।