করোনা মোকাবিলায় অযোগ্যতা ও দুর্নীতির দায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত - ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৬ এএম, ২৭ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:১৬ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২৪
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের অযোগ্যতা, দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির দায় নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি।
আজ সোমবার দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে সরকার শুধুমাত্র নিজেদের দুর্নীতির সুযোগ খুঁজেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সমগ্র জাতিকে চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেদের অযোগ্যতা, দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির প্রমাণ দিয়েছে। জনগণকে এই চরম অনিশ্চয়তা ও জীবনের ঝুকি তৈরি করার অপরাধে সরকারকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সভা মনে করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রীর এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় নিম্ন বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয় :
১। সভায় বিগত ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায় বিগত সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান ও কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এন, আই, খানসহ দলের নেতা-কর্মী যারা ইন্তেকাল করেছেন তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।
৩। সভায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে সদস্যদের অবহিত করেন। দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের ক্রমোন্নতিতে সভা সন্তষ প্রকাশ করেন এবং তাঁর দ্রæত সম্পূর্ণভাবে রোগমুক্তির জন্য পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করেন।
৪। সভায় কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আমদানিতে সরকারের এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রæপের ব্যর্থতা ও দুর্নীতিতে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে যে, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই বিএনপি এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে বলে আসছে। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া, একটি মাত্র উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত যে আত্মঘাতী হতে পারে সে বিষয়ে বিএনপি বরাবরই সতর্ক করে এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার শুধু মাত্র নিজেদের আর্থিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সরকার নিজে আমদানি না করে তাদের পছন্দমত চিহ্নিত দুর্নীতিগস্ত প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়ে এবং শুধুমাত্র ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে সংগ্রহ করায় এবং দেড়কোটি ভ্যাকসিনের অগ্রীম মূল্য পরিশোধ করেও এখন পর্যন্ত দুই কিস্তিতে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ পেয়েছে। ভারত সরকারের রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে সেরাম ইন্সটিটিউট বাকি ভ্যাকসিন পাঠাতে অপারগতা জানিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, এখন যে পরিমাণ মজুদ আছে সেটাতে আগামী ১২ দিন চাহিদা মোতাবেক চলবে কিন্তু তারপর আর সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ প্রায় ৫৬ লাখ এবং দ্বিতীয় ডোজ প্রায় ১৬ লাখ মোট ৭২ লাখ ডোজ টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব হয়েছে যেখানে হার্ড ইনিউনিটি আনতে কমপক্ষে ১২ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া প্রয়োজন। সরকার এখন অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে ভ্যাকসিনের জন্য অথচ ১ বছর আগেই বিএনপি এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলো। কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করতে সরকার শুধুমাত্র নিজেদের দুর্নীতির সুযোগ খুঁজেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সমগ্র জাতিকে চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেদের অযোগ্যতা, দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির প্রমাণ দিয়েছে। জনগণকে এই চরম অনিশ্চয়তা ও জীবনের ঝুঁকি তৈরি করার অপরাধে সরকারকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সভা মনে করে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। সভা মনে করে, অবিলম্বে মূল্য পরিশোধিত ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে। ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। অবিলম্বে জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দাবি জানায়। ভারতের সংক্রমণের হার মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পশ্চিম বাংলায় নতুন মারাত্মক ভেরিয়েন্ট সংক্রমণ রোধের জন্য ইতিমধ্যে ভারতের আসাম ও উড়িস্যা পশ্চিম বাংলার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করেছে। সরকার আজ থেকে ১৪ দিন স্থল পথের সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
৫। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এবং সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউনে বিপর্যস্ত দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের পাশে ২০২০ সালে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ প্রায় ২ কোটি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে। স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে সরকার প্রায় ২০ জন মানুষকে গুলি করে হত্যার পর সরকার চিরাচরিত কৌশল নিয়ে বিরোধী দল ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। নেতা-কর্মীরা কেউ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে পারছে না। এরপরেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিএনপিসহ সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের দুঃস্ত জনগণের সহযোগিতার জন্য পাশে দাঁড়ানোর আহŸান জানায়।
৬। সভায় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত চালের আপদকালীন মজুদ তলানিতে নেমে আসায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং সরকার কর্তৃক ধান ও চাল সংগ্রহের জন্য মূল্য নির্ধারণ না করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। সভা মনে করে, সরকারের মদদপুষ্ট মধ্যস্বত্ব ভোগীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। সরকারের দুর্নীতি ও অযোগ্যতার কারণে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে সভা আশংকা প্রকাশ করে। সভা জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের আহŸান জানায়।
৭। সভায় স্বাধীনতা দিবসে নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে সরকার সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আবার গণহারে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার শুরু করায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানানো হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ক্রমাগত মিথ্যাচার এবং ঘটনাগুলোর সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বসহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করে কল্প কাহিনী প্রচার সরকারের কর্তৃত্ববাদী একনায়কতান্ত্রিক একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার চক্রান্তের একটি অংশ বলে প্রতীয়মান হয়। বিএনপিকে ধ্বংস করবার এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করা হয়। গ্রেফতারকৃত হেফাজত নেতৃবৃন্দেকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে তাদের থেকে তথাকথিত মিথ্যা স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এই জঘন্য মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে বলে সভা মনে করে। সভা অবিলম্বে এইসব মিথ্যাচার বন্ধ করার আহŸান জানায়।
সভা অবিলম্বে বিএনপি কেন্দ্রীয় নারী নেতা অ্যাডভোকেট নিপুণ রায়কে রিমান্ডে না নেয়া এবং মুক্তির দাবি জানায়। গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
৮। আলোচনা শেষে সভাপতি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা মুলতবি করেন।