জনগণই গণতন্ত্রের মায়ের অক্সিজেন তাঁকে নিঃর্শতে মুক্ত করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২২ এএম, ৯ মে,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:১৭ পিএম, ৫ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
২০০৭ সালের জরুরি আইনের সরকারের (সেনা সমর্থিত ১/১১-এর সরকার) অবৈধ শাসনামলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়। ২০০৮ সালের সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার সকল সদস্য এবং তাদের দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ঐ সময় দায়ের করা সাত হাজারের বেশি মামলা নানা কৌশলে প্রত্যাহার/বাতিল করে। অথচ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দায়েরকৃত কোনো মিথ্যা মামলা তো প্রত্যাহার করা হয়ইনি বরং তাঁকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় কারাবন্দি করা হয় ২০১৮ সালের নির্বাচনের বছরে। বেগম খালেদা জিয়াকে করাবন্দি করার অন্যতম উদ্দেশ্যই ছিল তাঁকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। কারণ আওয়ামী লীগ জানতো আপোসহীন দেশনেত্রীকে বাইরে রেখে কোনভাবেই মধ্যরাতের নির্বাচন করা সম্ভব হতো না। আর তাই বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপিকে নির্বাচন হতে বিরত রেখে ২০১৮ সালের মধ্যরাতের নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের আপোসহীন নেত্রী গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় নিম্ন আদালতে ফরমায়েশী রায়ের মাধ্যমে সাজা দিয়ে কারাবন্দি করা হয়।
মিথ্যা মামলায় সাজানো রায়ের মাধ্যমে সাজা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি আওয়ামী লীগ। গণতন্ত্রের মাকে বন্দি করে রাখা হয় একটি জনমানবশূন্য পরিত্যক্ত কারাগারে। বেগম খালেদা জিয়াকে যে কারাগারে বন্দি রাখা হয় সে কারাগারটি বসবাসের অনুপযুক্ত হওয়ায় সেটি পরিত্যক্ত করে নতুন স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। অথচ বেগম খালেদা জিয়াকে রাখা হয় পুরান ঢাকার সেই পরিত্যক্ত কারাগারেই। যে মামলা দায়ের করারই কোনো ভিত্তি নেই সেই মামলাতেই কারাবন্দি করা হয় দেশনেত্রীকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞগণ এ বিষয়ে বারবার তাদের আইনগত মতামত দেয়া সত্ত্বেও তা আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। এ অন্যায়কে প্রতিহত করতে না পেরে দেশের স্বনামধন্য আইনজ্ঞগণ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ তাঁর বয়স ও স্বাস্থ্যগত বিষয় বিবেচনা করে তাঁকে বারবার জামিন দেয়ার দাবি জানালেও তা আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সরকারের অবৈধ হস্তক্ষেপে জামিন পাননি বেগম খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক ও নিপীড়নমূলক মানসিকতায় তাঁকে বন্দি থাকতে হয় সেই পরিত্যক্ত কারাগারেই।
কারাগারের যে রুমে তিনি বন্দি ছিলেন সেটি ছিল মুক্ত আলো-বাতাসহীন একটি স্যাঁতসেঁঁতে অন্ধকার কক্ষ। তাঁর মতো অসীম শ্রদ্ধেয় মানুষ নিজের ঘর, নিজের দল, পরিবারের সদস্য ও নেতা-কর্মীদের থেকে দূরে অন্ধকার কুঠুরিতে দিন কাটিয়েছেন দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। মুক্ত বাতাস, মুক্ত পরিবেশে, মুক্ত আলোতে তিনি বিচরণ করেন না কতোদিন। আমরা সবাই জানি ‘ভিটামিন ডি’ আমরা সূর্য থেকে পাই । যা শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য জরুরি প্রয়োজন। একটি মুক্ত আলো-বাতাসহীন ছোট্ট কক্ষে দীর্ঘ দিন বন্দি থাকায় তাঁর শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। কারাগারে অযতেœ অবহেলায় এবং বসবাসের অযোগ্য পরিবেশের জন্য তাঁর শরীরে রক্ত শূন্যতা ও প্রোটিনের অভাব দেখা দিয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে প্রায় দুই বছর কারাবাসের পর মার্চ, ২০২০ হতে সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায়ই তাঁর নিজ বাসভবনে বন্দি জীবন যাপন করছেন। বন্দি অবস্থার কারণে তিনি চাইলেও তাঁর পছন্দমতো পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নিতে পারছিলেন না। করোনা মহামারি বিবেচনায় তিনি চাইলেই কোনো হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশে করোনা টিকা দেয়া শুরু হলে একজন বন্দি হিসেবে তাঁর পক্ষে কোনো হাসপাতালে গিয়ে করোনা টিকা নেয়া সম্ভব ছিল না। একটি বারের জন্যও সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে টিকা দেয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিত্বর বাসায় গিয়ে টিকা দেয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহান ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়াকে টিকা দেয়ার জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি আওয়ামী লীগ। কারা অন্তরীণ থাকাকালে শুরু থেকে তিনি নিজের পছন্দ মতো হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন নাই। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নেয়া থেকে বঞ্চিত করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের মাকে তিলে তিলে শেষ করার অপচেষ্টা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ।
দেশে করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভার দেখা দিলে ২০২০ সালের মার্চ মাসে সরকারের নির্বাহী আদেশে তিনি কারাগার ছেড়ে তাঁর নিজ বাসায় কারাজীবন শুরু করেন। তাঁকে কারাগার থেকে বাসায় যেতে দিলেও তাঁর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেয়ার রাস্তা বন্ধ রাখে আওয়ামী লীগ। অসুস্থতা বিবেচনায় তাঁর বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন থাকলেও নির্বাহী আদেশ দিয়ে সে পথ বন্ধ রাখে আওয়ামী লীগ। কি বর্বর ও হীন মানসিকতা! তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন মহান নেত্রীর সাথে এ কি আমানবিক আচরণ?
সাধারণত কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অসুস্থ হলে অন্যান্য দলের পক্ষ থেকে তার রোগমুক্তি কামনা করে বার্তা দেয়া হয়। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর রোগমুক্তি কামনা করে বার্তা দেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত হলে তার প্রতিপক্ষ বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার রোগমুক্তি কামনা করে বার্তা প্রেরণ করেন। অথচ বাংলাদেশের একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁর রোগমুক্তি কামনা করা হয়নি। বরং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। মানুষ কতটা হীন মানসিকতার হলে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারে? অথচ আওয়ামী লীগের কাছে এরচেয়ে ভাল কিছু আশাও করে না বাংলাদেশের জনগণ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অসুস্থ হন তখন তাদের শারীরিক অবস্থা শুধু প্রেসরিলিজের মাধ্যমে জানানো হয়। এই করোনাকালীন বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যখন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তখন প্রতিদিন একটি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে তা গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রাইভেসি রক্ষা করা হয়। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ক্ষেত্রে তাঁর প্রাইভেসি রক্ষা করা হচ্ছে না। অনেক গণমাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিজের মতো করে মনগড়া তথ্য জনগণের কাছে উপস্থাপন করছেন। এটা দেখে মনে হচ্ছে যে, আমরা সবাই যেমন রাজনীতি করতে চাই, তেমনি বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে সকলে কেন জানি ডাক্তার হতে চাচ্ছি। দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণের কাছ থেকে এ ধরনের মনগড়া তথ্য জনগণকে প্রদান করার বিষয়টি আমাদের কাম্য নয়। এই পরিস্থিতিতে তাঁর প্রাইভেসি রক্ষা করার জন্য আমরা সকলের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা এখন যেমন রেগুলার ব্রিফিং পাচ্ছেন নতুন উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলে অবশ্যই তা জানবেন ।
বর্তমানে তিনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের অধীনে নিবিড়ভাবে চিকিৎসাধীন। দয়া করে ডাক্তারদের তাদের ধর্ম পালন করতে দিন! একজন ডাক্তারের কাছে তার রোগীর চেয়ে অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নয় । ক্ষণে ক্ষণে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে ব্রিফিং করার চেয়ে সে সময়টুকু একজন চিকিৎসক তাঁর শয্যা পাশে ব্যয় করাটাই বেশি যৌক্তিক। এটাতেই একজন ডাক্তারের সার্থকতা। আমরা আপনাদের কাছে তাঁর জন্য দোয়াপ্রার্থী। যে মানুষটি তাঁর জীবনের মূল্যবান সময়, মেধা ও শ্রম দেশ এবং জনগণের উন্নয়নের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন তাঁর শারীরিক অসুস্থতার সময় আমরা প্রাণভরে তাঁর জন্য দোয়া করি তিনি যেন নিঃশর্ত মুক্ত হয়ে, সুস্থ হয়ে আবার জনগণের মাঝে ফিরে আসেন।
আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের কন্ঠরোধ করেছে, নিজ ঘর ও মনের মধ্যে বন্দি করে রেখেছে সকলকে। কেউ আজ মন খুলে তাঁর কথা বলতে পারছেন না। চুন থেকে পান খসলেই জেলে যেতে হচ্ছে মিথ্যা হয়ারানিমূলক মামলায়। তবুও থেমে নেই ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন। তাই আমরা বলতে চাই, আজ শুধু গণতন্ত্রের মা আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সিসিইউতে নাই। পুরো দেশ ও জাতি আজ গণতন্ত্রহীন অবস্থায় আইসিইউতে রয়েছে। দেশের সকল জনগণ যেন কৃত্রিমভাবে বেঁচে আছেন। দেশের জনগণকে এ বন্দিদশা হতে মুক্ত করতে দরকার গণতন্ত্রের ‘মা’ আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। তিনিই পারেন দেশের জনগণকে তাদের লুট হওয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে। মুক্ত বাতাসে মনভরে নিঃশ্বাস নিতে। বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্ত করুন। গণতন্ত্রের ‘মা’কে জনগণের মাঝে ফিরিয়ে দিন, তাদের মাঝে থাকতে দিন। তাঁর জন্য জনগণই প্রকৃত অক্সিজেন।