বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন জিয়াউর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৪১ এএম, ৩০ মে,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:১৫ পিএম, ৩ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
আজ শনিবার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০ তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় বক্তরা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সারাদেশের ৮১টি সাংগঠনিক জেলার নেতৃবৃন্দ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ প্রবাসী শাখার নেতারাও এই ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় যুক্ত হন।
বাংলাদেশকে ‘তাঁবেদার রাষ্ট্র’ বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৮১ সালের ৩০ মে যারা তাঁকে (জিয়াউর রহমান) হত্যা করেছিলো তারা ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রু, বাংলাদেশের মানুষের শত্রু, বাংলাদেশের যে উত্থান হয়েছিলো, সেই উত্থানের শত্রু। তারাই আজকে ২০০৬ সালে ১/১১-এর থেকে সক্রিয় হয়ে উঠে আবার বাংলাদেশকে ওই একই জায়গায় নিয়ে যেতে চায়। তারা বাংলাদেশের যে আইডেনটিটি, সেই আইডেনটিটিকে ধ্বংস করতে চায়। যে কথা আমাদের নেতাও বলেছেন যে, এই দেশটাকে তারা তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। সেটারই এখানে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা, বাংলাদেশের শত্রুরা মনে করেছিলো যে, বিএনপি শেষ। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পর থেকে এই বিএনপি থাকবে না। বিএনপির রাজনীতি তো হচ্ছে এই দেশের মানুষের বুকের ভেতরের রাজনীতি, মাটির রাজনীতি। এটা বিএনপি ধারণ করে এবং সব সময় বিএনপি সেই ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে এবং চতুর্দিকে আবার বিস্তার লাভ করেছে।
আমার আবেদন আজকে তরুণদের কাছে, যুবকদের কাছে যে, ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম তখন আমরা তরুণ ছিলাম, যুবক ছিলাম। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তখন একেবারেই যুবক ছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা সেই যুবকরাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম অস্ত্র হাতে। আবারো ১৯৭৫ সালে শহীদ জিয়ার ডাকেই কিন্তু আমরা রাষ্ট্রকে নির্মাণ করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।
আজকে দীর্ঘ ১২ বছর হতে চললো- আমরা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর আপোসহীন নেতৃত্ব দিয়ে কারাবরণ করে আছেন, অসুস্থ হয়ে আছেন। আজকে আমাদের সেই লড়াইকে ঠিক জায়গায়, কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। আসুন আমরা সবাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সংগঠিত হই এবং আজকে এই দিনে এই শপথ গ্রহণ করি দেশমাতাকে মুক্ত করব, দেশকে মুক্ত করব এবং সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক উদার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কেনো আটকে রেখেছে তার কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি মাত্র কারণ যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শহীদ জিয়ার যে পতাকা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্রের যে পতাকা, সেই পতাকাকে নিয়ে তিনি সেই গ্রামে-গঞ্জে নিয়ে সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন। সেজন্যেই দেশনেত্রীকে গ্রেফতার করে আটক করে রাখা হয়েছে। আজকে অসুস্থ হওয়ার পরেও তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে যেতে না দেয়ার সেটাই কারণ। যেন তিনি কোনো মতেই সুস্থ হয়ে আবার জনগণের সামনে আসতে না পাড়েন। কারণ তিনি ধারণ করেন সেই রাজনীতি সেই পতাকা যা শহীদ জিয়াউর রহমান ধারণ করতেন যা এদেশের কোটি কোটি মানুষ ধারণ করে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে একজন ‘ক্ষণজন্মা দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবে অবহিত করে তাঁর নেতৃত্বে ‘বিপ্লব’ সৃষ্টির নানা ঘটনা প্রবাহও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানে জীবন-কর্মের ওপরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ঢাকা মহানগরের হাবিব উন নবী খান সোহেল, এম এ কাইয়ুম, ঢাকা জেলার ডা. দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগরের ডা. শাহাদাত হোসেন, দক্ষিণের মোস্তাক আহমেদ খান, বরিশাল দক্ষিণের এবায়দুল হক চাঁন, রাজশাহী মহানগরের মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, খুলনা জেলার শফিকুল আলম মনা, রংপুর মহানগরের সাইফুল ইসলাম, ময়মনসিংহ উত্তরের অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণের ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, যশোরের অধ্যাপক নার্গিস বেগম, কুমিল্লা দক্ষিণের হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, উত্তরের আখতারুজ্জামান সরকার, ফেনীর শেখ ফরিদ বাহার, হবিগঞ্জের জি কে গউস, সুনামগঞ্জের কলিমউদ্দিন আহমেদ মিলন, কক্সবাজারের শাহজাহান চৌধুরী, ফরিদপুরের সৈয়দ মোদারেস আলী ইছা, নওগাঁয়ের হাফিজুর রহমান, ঠাকুরগাঁওয়ের তৈমুর রহমান, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলও বক্তব্য দেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জিয়াউর রহমান রিভোল্ট করেছিলেন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কী আজ পর্যন্ত তথ্য দিয়ে দাবি করতে পেরেছে যে, তাদের অমুক নেতা রিভোল্ট করেছিলেন। সেটি কেউ শুনেছে? রিভোল্ট করে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। দেশের দুটি ক্রান্তিকালে তিনি জাতিকে পথনির্দেশনা দেন, এগুলোই আওয়ামী লীগের মাথা ব্যথার কারণ। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমান ও তাঁর দলকে দুর্বল করার জন্য ইতিহাস বিকৃত করছে। তারা বর্তমান প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে চায়। বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার দেশের মানুষের অধিকার হরণ করেছ। আমাদের দায়িত্ব এই ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করা। এর জন্য আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল ও কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করেন জিয়াউর রহমান। তিনি দেশকে গণতন্ত্র দেন। এখন জিয়া সম্পর্কে আওয়ামী লীগ কী বলল না বলল, তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। জিয়া জিয়াই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে জিয়াউর রহমান ও তাঁর পরিবারকে বাংলাদেশ থেকে মুছে দেযার একটা চক্রান্ত চলছে। তার কারণ তিনি যুদ্ধ করেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন। এমন অনেকগুলো কাজ করেছিলেন, যেগুলোর সামনে আওয়ামী লীগ দাঁড়াতে পারে না। আজ আমরা বৃহৎ জেলে আবদ্ধ। আসুন এই হায়েনার হাত থেকে দেশকে মুক্ত করি। সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
‘বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে’ বিরোধীদের এমন সমালোচনার উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট তো বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই। কিন্তু যারা বিএনপির জন্ম নিয়ে কথা বলেন, তাদের জন্ম কী দেশের মাটিতে? না কি ভিন দেশে। বর্তমানে দেশের যে অবস্থা, তাতে বলা যায় তারা পরের তরে, দেশের তরে নয়।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বীর সেনানী ছিলেন জিয়াউর রহমান। আওয়ামী লীগ যা-ই বলুক, এটাই ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগ যখন পলায়নপর ছিল, তখন অলৌকিকভাবে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটে। তিনি শুধু একজন সৈনিক, একজন জেনারেল, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন বীর উত্তমই ছিলেন না, তার চেয়ে বড় কথা একজন গণতান্ত্রিক মানুষ ছিলেন। আজকে উন্নয়নের নামে সেই গণতন্ত্রকে আমরা সিন্দুকে ঢুকিয়ে রাখতে পারি না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘১৯৫৪ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবকে জায়গা দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। কিন্তু ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তা কেড়ে নিয়েছিল। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময় সেটি আবার ফিরিয়ে দেন এবং জাতীয় প্রেসক্লাব নির্মাণ করে দেন। জিয়াউর রহমান সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, কথা বলার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আজ সাংবাদিকেরা জিয়াউর রহমানের কথা বলেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ধর্ম, বর্ণ, ভাষা-সংস্কৃতি সবাইকে নিয়ে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ করেছেন। আওয়ামী লীগ শুধু ভাষার জাতীয়তাবাদের কথা বলে। এখন কেউ যদি জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদে শুধু ধর্মের গন্ধ পায়, সেটা তার সমস্যা। আমাদের প্রত্যককে এ কথাগুলো আজকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার কথা বলতে হবে।’