মাদারীপুরে এবারও হচ্ছে না উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর কুম্ভমেলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৭ এএম, ২৮ মে,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১৫ এএম, ১০ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের উর্দ্ধগতির কারণে লকডাউনসহ সরকারি বিধিনিষেধ আরোপ থাকায় এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বিতীয় বৃহত্তর কুম্ভমেলা। ফলে মেলায় অংশ নেওয়া প্রায় ৩০লাখ ভক্তের হৃদয়ে হচ্ছে রক্তক্ষরণ।
প্রতি বছর ১৩ই জ্যৈষ্ঠ মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী দীঘিরপাড় মহামানব শ্রীশ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রমে উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হলেও করোনার কারণে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে এবছরও মেলা স্থগিত ঘোষণা করেছেন আয়োজকরা। এতে ক্ষতির মধ্যে পড়েছে দুই সহশ্রাধিক হরেক রকম পণ্যের ব্যবসায়ী। পর পর দুই বছর কুম্ভমেলায় আসতে না পারায় দেশী-বিদেশী প্রায় ৩০ লাখ ভক্তের প্রত্যাশা অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। ১ শ ৬৭ একর জমিতে এক রাতের জন্য দেড়‘শ বছরের ঐতিহাসিক কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হলেও মেলায় বেচাকেনা হয় তিন-চারদিন।
মেলার আয়োজক কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সত্য যুগে দেবতা ও অসুরদের সমদ্র মন্থনে যে অমৃত সুধা উঠেছিল তা চারটি কুম্ভ পাত্রে ভারতের হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়িনী ও নাসিক এর চারটি স্থানে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনার পর থেকে মুনি ঋষিরা কুম্ভ মেলার আয়োজন করে আসছেন। ১ শ ৪০ বছর পূর্বে ১৩জন নাগা সাধু ১৩ কেজি চাল ও ১৩ টাকা নিয়ে ১৩ই জ্যৈষ্ঠ মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীর দীঘিরপাড় ভারতের কুম্ভমেলাকে অনুসরণ করে এ মেলার আয়োজন করেন।
সেই থেকে কদমবাড়ীর দীঘিরপাড় মহামানব শ্রীশ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রম সংঘে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এক রাতের মেলা হলেও মেলা চলে তিন চারদিন পর্যন্ত। প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে পুরো একটি এলাকার বাড়ী-ঘর, মাঠ-ঘাট ও ক্ষেত-খামারে কোন জায়গা খালি থাকে না ভক্তদের পদচারণায়। দেশের বরিশাল, রাজশাহী, বগুড়া, চিটাগং, সীতাকুন্ড, রংপুর, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর গৌরনদীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে কুম্ভমেলায় ভক্তরা আসেন। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপাল থেকেও বহু ভক্তবৃন্দ, নাগা ও অঘোরী সাধুরা আসেন কুম্ভমেলা মেলায়। এ মেলায় আসা হাজার হাজার সাধু সন্যাসী ও ভক্তরা একতারা আর দোতারায় সুর দিয়ে সারা রাত মেতে থাকেন ঈশ্বর বন্দনায়।
দেশ বিদেশ থেকে আসা এসব সাধু সন্যাসী ও ভক্তরা ১০৮টি মন্দিরের প্রতিমা দর্শন, প্রার্থনা, আরাধনা, পূজা-অর্চণা, ধর্মীয় সঙ্গীত, নৃত্য-বাদ্য বাজনা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে রাত অতিবাহিত করেন। এ মেলা উপলক্ষে ৭ দিন পুর্ব থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে দোকানিরা। বাঁশ বেতের শিল্প কারু কাজ খচিত গৃহস্থলী মালামাল, মৃৎ শিল্প বা মাটির তৈরী তৈজসপত্র, বাহারী মিস্টি, দৃষ্টি আকর্ষনীয় খেলনা ও বাহারী প্রসাধনী পণ্য দিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন কমপক্ষে ২সহ¯্রাধিক স্টল। শিবচরের ভক্তদের উদ্যোগে ভক্তসেবার আয়োজন করা হয়।
মাদারীপুরের নিউ বরিশাল হোটেলের মালিক বিকাশ চন্দ্র মজুমদার জানান, তিনি কদমবাড়ী গণেশ পাগল সেবাশ্রম সংঘের কুম্ভমেলায় প্রায় ১০বছর ধরে হোটেল ব্যবসা করে আসছেন। এক রাতের মেলা হলেও তাদের হোটেলে বেচা কেনা তিন দিন পর্যন্ত। বেচাকেনাও ভালো হয়। কিন্তু করোনার কারণে পর পর দুই বছর কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন এখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা।
মাদারীপুরের গনেশ পাগল মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক চন্দন শিকারী জানান, অপেক্ষায় থাকি কদমবাড়ীর কুম্ভমেলার জন্য। এ মেলায় বাহারী মিষ্টি বিক্রি করে ব্যাপক লাভবান হন তারা। কিন্তু পরপর দুই বছর কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তারাও ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। কদমবাড়ী ইউনিয়নের প্রবীন শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, করোনার কারণে কদমবাড়ীর কুম্ভমেলা দুই বছর অনুষ্ঠিত না হওয়ায় লাখো ভক্তের মতো আমাদের মনেও শান্তি নেই। আগত সাধুজনের পরশ পেয়ে আমরাও ধন্য হই।
মেলা উদযাপন কমিটির সাধারন সম্পাদক প্রণব বিশ্বাস বলেন, অতিমারী করোনার কারণে গত বছরও কৃম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয় নাই। এ বছরও মেলা অনুষ্ঠিত হবেনা। প্রায় ১ শ ৪০ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ মেলা শান্তি পূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকেন।
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আনিসুজ্জামান জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে সরকার কর্তৃক বিধিনিষেধ আরোপ থাকায় ২৮ মে কদমবাড়ীর কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হবেনা। বিষয়টি নিয়ে আমি কদমবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি।