পাবলিকের জন্য কোনো সুখবর নেই
প্রকাশ: ০৩:০৭ এএম, ১৫ জানুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:১০ এএম, ৪ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৪
আন্তর্জাতিক বাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল, তখন সরকারের যে কি হুড়োহুড়ি কান্ড। প্রথমে সরকার হামলে পড়ল, কীভাবে বাস-লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো যায়। তার জন্য সরকারি লোকেরা কত ধরনের যুক্তি দেখাতে থাকল তার কোনো ইয়ত্তা নেই। পাবলিকের পক্ষ থেকে বলা হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে, কতদিন অপেক্ষা করুম, দাম আবার কমবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বাস-লঞ্চ মালিক সমিতি আর সরকার একযোগে বলতে থাকল যে, বাস-লঞ্চের ভাড়া না বাড়ালে মালিকরা পথে বসে পড়বে। বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তো বলেই ফেললেন যে, অধিকাংশ বাস মালিক অত্যন্ত দরিদ্র, একেবারেই মিস্কিন। বাসের ভাড়া না বাড়ালে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মারা যাবে। এসব দাবিতে তারা অঘোষিত বাস ধর্মঘট শুরু করে দিলেন। সরকারের সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বড় অসহায়ভাবে বলে বসলেন যে, বাস মালিকদের ওপর আমরা তো আর জোর করতে পারি না। তবে যাদের ওপরে জোর করতে পারি সে হলো জনগণ। ফলে রাতারাতি বাস ভাড়া-লঞ্চ ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেলো। অসহায় পাবলিক সেটা মেনে নিতে বাধ্য হলেন।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে শুধু যে বাস ভাড়াই বাড়ল তা নয়। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে বেড়ে গেলো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও। সেটাই তো স্বাভাবিক। পরিবহন ব্যয় বাড়লে তার প্রভাব নিত্যপণ্যের ওপর পড়বে। ফলে সেই যে পণ্যের মূল্য বেড়েছে আর কমেনি। এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ পাবলিককে। এখনো পণ্য মূল্য বাড়ছেই। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমে কমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। কিন্তু সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমায়নি। ফলে বাস-লঞ্চের ভাড়া কমেনি। পণ্যমূল্যও হ্রাস পায়নি। এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম শুধু কমে গিয়েছিল, তখন বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম করপোরেশন হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ করেছিল। ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আগে তো লাভ করেছেন তাই এখনই দাম না বাড়িয়ে কিছুটা ভর্তুকি দিন। তাতে পাবলিকের উপকার হবে। কিন্তু তাই কি হয়! আসলে বাস-লঞ্চের যারা মালিক, তারা সরকারেরই লোক। তাই সরকারের কাছে পাবলিকের চেয়ে পরিবহন মালিকদের স্বার্থ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এখন আবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কমে গেছে। কিন্তু সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমায়নি। ফলে বাস-ট্রাক-লঞ্চের ভাড়াও কমেনি। সরকার কথায় কথায় ভিন্ন দেশের উদাহরণ টানে। বলে আমাদের চেয়ে অমুক দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য আরো অনেক বেশি। কিন্তু ভারতে কৃষক আন্দোলনের ফলে সেখানকার সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে দিয়েছে। তাহলে আমাদের দেশে কমবে না কেন? জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে শুধু যে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের লোকেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক সমাজও। চাষাবাদ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি জ্বালানি তেল নির্ভর। ফলে কৃষিপণ্য উৎপাদনে তাদের খরচ বেড়ে যায়। যার মাশুল গুণতে হয় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের। তাদের স্বার্থ দেখার কেউ নেই। ফলে এরা কেবলি খাবি খেতে থাকে।
একদিকে যথেষ্ট টিকা নেই, অপরদিকে টিকা ছাড়া স্কুলে যাওয়া নিষেধ। সরকার বলছে খোলা জায়গায় কোনো রকম রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশ করা যাবে না। এর কোনো কিছুই যৌক্তিক বিবেচনার মধ্যে পড়ে না। হাট-বাজার, দোকানপাট, শপিং মল খোলা থাকবে, বাণিজ্য মেলাও চালু থাকবে কিন্তু খোলা জয়গায় সমাবেশ করা যাবে না। সরকার যেগুলো খোলা থাকবে বলছে তার সবই তো খোলা জায়গায়। তাহলে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি কেন খোলা জায়গায় করা যাবে না। খোলা জায়গায় করোনা ছড়াবে কিন্তু বড় হলরুমে সভা-সমাবেশ করলে সেখান থেকে কি করোনা ছড়াবে না? সুতরাং সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তকে মতলবি মনে করছেন। |
একই অবস্থা হয়েছে করোনার টিকা নিয়ে। করোনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী যখন তোলপাড় তখন একমাত্র ভারত থেকে বেশি দামে টিকা কেনার চুক্তি করেছিল। কিন্তু ভারতেই যখন করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ল, তখন ভারত চুক্তি অনুযায়ী ঠিকা সরবরাহ করতে অস্বীকার করে বসল। তারপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চালায় সরকার। কোনো কোনো দেশ থেকে টিকা কেনে আবার কোনো কোনো দেশ কিছু টিকা খয়রাতও দেয়। সেভাবেই চলছে টিকাদান কর্মসূচি। টিকার উপকারিতা ও গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না। গবেষকরা বলছেন দুই ডোজ টিকা দেয়া থাকলে করোনা হলেও মৃত্যুঝুঁকি অনেক কম। কিন্তু করোনা নানা ধরনে এসে হাজির হচ্ছে। বাংলাদেশে এর প্রাদুর্ভাব অনেক কম। কিন্তু সারা বিশ্বে করোনা নতুন করে হানা দিচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকা এবং ভারতেও করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি চীনও এর ব্যতিক্রম নয়। এ এমন একটি সংক্রামক রোগ যে, পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে অন্য কোনো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রেও সরকারের দিশেহারা অবস্থা। এ পর্যন্ত ৫০% লোককেও প্রথম ডোজ টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন মাত্র ৩২ শতাংশ লোক। অর্থাৎ দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষই টিকার আওতায় আসেনি। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা অনেক বেশি। তার মধ্যে সরকার নানা ধরনের এলোমেলা সিদ্ধান্ত নিয়েই যাচ্ছে। সম্প্রতি সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে, করোনার টিকা ছাড়া স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে না। বাস-লঞ্চ-ট্রেনে যাত্রী যাবে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক। মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, এযাত্রায় গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে না; কিন্তু যাত্রী যদি অর্ধেক নিতে হয় তাহলে পরিবহন মালিক ভাড়া বৃদ্ধির দাবি তুললেন বলে।
কিন্তু টিকার কী হবে? একদিকে যথেষ্ট টিকা নেই, অপরদিকে টিকা ছাড়া স্কুলে যাওয়া নিষেধ। সরকার বলছে খোলা জায়গায় কোনো রকম রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশ করা যাবে না। এর কোনো কিছুই যৌক্তিক বিবেচনার মধ্যে পড়ে না। হাট-বাজার, দোকানপাট, শপিং মল খোলা থাকবে, বাণিজ্য মেলাও চালু থাকবে কিন্তু খোলা জয়গায় সমাবেশ করা যাবে না। সরকার যেগুলো খোলা থাকবে বলছে তার সবই তো খোলা জায়গায়। তাহলে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি কেন খোলা জায়গায় করা যাবে না। খোলা জায়গায় করোনা ছড়াবে কিন্তু বড় হলরুমে সভা-সমাবেশ করলে সেখান থেকে কি করোনা ছড়াবে না? সুতরাং সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তকে মতলবি মনে করছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে জেলায় জেলায় সমাবেশ করছে বিএনপি। সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষ সে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। এতে সরকারের ভিত নড়ে গেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে সরকার অযৌক্তিক ও এলোমেলো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কিন্তু বালির বাঁধ দিয়ে তো আর জোয়ারের পানি ঠেকানো যায় না। সরকারও তা পারবে বলে মনে হয় না।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com