মৃত্যুর ১৭ বছর পর ৫৭ লাখ টাকায় জমি বিক্রি!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৫ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৪০ পিএম, ৫ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার শৌলমারীর চরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মৃতকে জীবিত দেখিয়ে ৩ একর ৬৪ শতাংশ জমি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় জমি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী একটি চক্রের বিরুদ্ধে। মারা যাওয়ার ১৭ বছর পর ফিরে এসে জমি লিখে দেওয়ার ঘটনায় তুষভান্ডার রেজিস্ট্রি অফিসের অন্যান্য দলিল লেখক ও স্থানীয়দের মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জমির প্রকৃত মালিক মৃত মকলেছার রহমানকে জীবিত দেখিয়ে ভুয়া ব্যক্তি মোখলেছার রহমানকে দাতা সাজিয়ে একটি চক্র জমি রেজিস্ট্রি করে নেন ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটিডের পক্ষে পরিচালক সাখাওয়াত হোসেনের নামে। মৃত মকলেছার রহমান উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের ইয়ার আলীর ছেলে। জমি লিখে দেওয়া ভুয়া দাতা মোখলেছার রহমান একই উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাশিরাম এলাকার ইয়ার উদ্দিনের ছেলে।
জানা গেছে, মকলেছার রহমান মারা যান ২০০৫ সালে। তিনি উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইয়ার আলীর ছেলে এবং চার বারের ইউপি সদস্য। মারা যাওয়ার পর চলতি বছরের গত ২৯ আগস্ট তাকে ‘জীবিত’ দেখিয়ে মোখলেছার রহমান নামের এক ব্যক্তিকে মকলেছার রহমান সাজিয়ে দলিল লেখক আলমগীর হোসেনের মাধ্যমে হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব বিছনদই এলাকার রবিউল আলম বাবু’র বাড়িতে সাব-রেজিস্ট্রার রতন অধিকারীকে নিয়ে গিয়ে কমিশন দলিল করেন। গত ২৯ আগস্ট দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করে প্রতারক চক্রটি। এসময় ভুয়া দাতা হিসেবে মোখলেছার রহমানকে জমির মালিক সাজিয়ে ৩ একর ৬৪ শতাংশ জমির দলিল রেজিস্ট্রি করেন। যার দলিল নম্বর-৪৩৩৮/২১। দলিলে জমির মূল্য উঠানো হয়েছে ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জমিটি ভোটমারী মৌজার বিআরএস ১৩৪৪নং খতিয়ানের ১০২৯৯নং দাগের। দলিলটিতে সাক্ষী হিসেবে আছেন রবিউল আলম বাবু এবং শনাক্তকারী হিসেবে আছেন বুলু মিয়া। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তুষভান্ডার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জমিটি রেজিস্ট্রি করা হয়নি। সাক্ষী বাবু ও শনাক্তকারী বুলুসহ কয়েকজন ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ারের জমি দখলসহ নানা কর্মকান্ডে জড়িত।
ঘটনাটি প্রকাশ পেলে বিষয়টি চাপা দিতে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার, দলিল লেখকসহ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা ও প্রভাবশালী চক্রটি উঠে পড়ে লেগেছে। তবে জমির মূল মালিকের বর্তমান ওয়ারিশরা আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা জানিয়েছেন। এ বিষয় দলিল লেখক আলমগীর হোসেনের সঙ্গে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি সরাসরি দেখা করার অনুরোধ জানিয়ে ফোন কেটে দেন। প্রতারক চক্রটি পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ভোটমারী ইউপি চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত একটি ভুয়া প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করেন মকলেছার ও জাতীয় পরিচয়পত্রের মোখলেছার একই ব্যক্তি।
ভুয়া ওই প্রত্যয়নের বিষয় জানতে চাইলে ভোটমারী ইউপি চেয়ারম্যান আহাদুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ওই প্রত্যয়ন আমি দেইনি। আমার স্বাক্ষর স্ক্যান করে সেটি বানানো হয়েছে। মৃত মকলেছার রহমান আমার পরিচিত ব্যক্তি। তিনি চারবারের ইউপি সদস্য ছিলেন। ভুয়া জমিদাতা মোখলেছার রহমান বলেন, জমির মালিক সাজাতে একটি চক্র অর্থের লোভ দেখিয়ে পূর্ব বিছনদই বাবুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দলিলে আমার স্বাক্ষর নেন। দলিলের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর আমাকে যে টাকা দিয়েছে সে টাকাও তারা ফেরত নিয়েছে। ভোটমারী এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী (৭০) বলেন, প্রতারক চক্রটি বহু দিন ধরে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রটিকে গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। ঢাকায় কর্মরত জমিটির প্রকৃত মালিকের মৃত মকলেছার রহমান ছেলে আরিফুজ্জামান বিপ্লব (৩৬) বলেন, আমাদের তিস্তার চরের জমি জাল দলিল করে বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডারের সাব-রেজিস্ট্রার রতন অধিকারী জানান, মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করে দলিল হলে তা দ্রুত তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।